ডিসেম্বর মাসের একত্রিশ তারিখের দিবাগত রাতকে থার্টি ফাস্ট নাইট বলা হয়। বর্ষবরণের নামে এ রাতকে ঘিরে পশ্চিমাদের যে কত আয়োজন,তার আর কোন শেষ নেই। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল আজ মুসলমানও এ আয়োজনে পিছিয়ে নেই। আতশবাজি,পটকাবাজি, নাচ-গান,বেহায়াপনা,অশ্লীলতা,মাদক সেবন,নারীর শ্লীলতাহানি,যেনা-ব্যভিচারসহ কত কিছুই না হচ্ছে এ রাতে।
এ সকল কর্মকান্ডের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের অনুসরণ ব্যতীত অন্য কিছু খুজে পাওয়া যাবে না। আজ আমাদের মধ্যে নিম্নোক্ত হাদীসের বাস্তব প্রতিফলন পরিপূর্নভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
عن أبي سعيد رضي الله عنه : أن النبي صلى الله عليه و سلم قال لتتبعن سنن من قبلكم شبرا بشبر وذراعا بذراع حتى لو سلكوا جحر ضب لسلكتموه . قلنا يا رسول الله اليهود والنصارى ؟ قال فمن
অর্থঃ আবূ সাইদ (রাঃ) থেকে বর্নিত,তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের তরীকাহ অনুসরণ করবে,প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে। এমনকি তারা যদি গুই সাপের গর্তেও প্রবেশ করে থাকে তবে তোমরা তাতে প্রবেশ করবে। আমরা বললাম,ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি কি ইয়াহুদী ও নাসারাদের কথা বলছেন ?তিনি বললেন তবে আর কথা ?-সহীহ বুখারী,হাদীস নং ৩৪৫৬।
অর্থাৎ ইয়াহুদী ও খৃষ্টান যদি দুর্গন্ধযুক্ত,স্যাতস্যাতে সংকীর্ন গর্তে প্রবেশ করে তবে মুসলমানও কেবল তাদের অনুকরনার্থে সেই গর্তে প্রবেশ করবে। মোট কথা প্রতিটি কদমে কদমে তাদের অনুসরণ করা হবে। চাই তা যত নিকৃষ্ট কাজই হোক না কেন। অথচ একটি হাদীসে আছে-
من تشبه بقوم فهو منهم
অর্থঃ যে কোন জাতির সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে (কিয়ামতের দিন) সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে।–সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং ৪০৩৩।
কাজেই কেউ ইয়াহুদীদের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করলে তার হাশর হবে ইয়াহুদীদের সাথে। কেউ নাসারাদের সাথে সামঞ্জস্যতা অবলম্বন করলে তার হাশর হবে নাসারাদের সাথে।
তাছাড়া মুমিনদের জীবন তো হবে মুহাসাবার (কৃতকর্মের হিসাব গ্রহনের) জীবন। একটি বছর অতিক্রন্ত হওয়ার পর হিসাবের তাড়না তাকে বিচলিত করে রাখবে। হায় ! আমার মূল্যবান জীবন থেকে একটি বছর চলে গেল। আমি তো আল্লাহ তাআলার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। আখেরাতের তেমন কোন সামানা জোগাড় করতে পারলাম না। তা না করে জঘন্যতম গোনাহসমূহের দ্বারা আনন্দ উল্লাসে মত্ত হওয়া কোন মুমিনের কাজ হতে পারে না। এর কোন নযীর না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে রয়েছে,না সাহাবীদের থেকে,না স্বর্ণযুগের অন্য কারো থেকে। বরং এ ধরনের গুনাহের কর্মকান্ডের দ্বারা আনন্দ উদযাপনের মধ্যে ঈমানের জন্য যথেষ্ট আশংকা রয়েছে।
সাহাবায়ে কেরাম আরবী তারিখের হিসাব রাখতেন। কেননা অধিকংশ ইবাদত – বন্দেগী চন্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। আর এর হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া। অথচ ফরজে কিফায়া হওয়া সত্যেও সাহাবায়ে কেরাম হিজরী সনের শুরুতে তথা পহেলা মুহাররমে কোন আড়ম্বরতা গ্রহন করতেন না। এর সামান্যতম নযীরও কেউ পেশ করতে কখনও সক্ষম হবে না। এ দিনকে কেন্দ্র করে যা যা করা হয় তা তো শরীআত যে দিনগুলোতে খুশি প্রকাশ করা সমর্থন করেছে তথা দু ঈদের দিন সে দিনেও করা জায়েয নেই।
এই তো,চলতি বছরেই (২০১৫ইং,১৪২২বঙ্গাব্দ) পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ বরণের নামে কত কি-ই না ঘটে গেল। ঢাকা ভার্সিটিতে বর্ষবরণের মহোৎসবে কিছু বোনদের ইজ্জত প্রকাশ্যে লুন্ঠিত হল। পত্রিকায় যারা চোখ রাখেন তার এ বিষয় অবগত হয়েছেন।
হায় ! আফসোস ! কোথায় আমাদের মানবতা ? কোথায় আমাদের মনুষত্ব ? কোথায় আমাদের স্বাধীনতা?আজ আমাদের মা বোনদের ইজ্জত তোমার বর্ষবরণের আনন্দের সামগ্রীতে পরিনত হল ! যে মা-বোনদের মূল্য পবিত্র কাবার চেয়েও অনেক বেশী।(সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস নং ৩৯৩২)
হে যুব সমাজ! তোমরা কি কখনও গভীরভাবে ভেবে দেখেছ ?তোমাদের মায়ের,তোমাদের বোনের ইজ্জত,সম্ভ্রম অন্যের আনন্দ উল্লাসের নিমিত্তে লুন্ঠিত হওয়াকে পছন্দ কর ?শুনেই হয়তো বা তোমার শরীর শিউরে উঠছে ,তাই তো ! তবে কেন অন্যের মায়ের,বোনের দিকে হাত বাড়াও ?তাও শুধুমাত্র সামান্য আনন্দ উপভোগের (?)জন্য।
হে বোনেরা ! তোমরাও বা কেন বুঝে শুনে নিজের ইজ্জতকে হাতের মুঠোয় নিয়ে বের হবে? আর তাদেরকে এ সুযোগই বা কেন দেবে ?তোমাদের এ অপ্রীতিকর ঘটনা তো আমাদের যন্ত্রনা দেয়। আমাদের এ থেকে একটু স্বস্তি দিতে পার না ?
হে আমার প্রিয় ভাই বোনেরা ! আস না ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে। তুমি তো এমন নবীর উম্মত যার হাত কোন দিন কোন বেগানা মহিলাকে স্পর্শ করেনি।(সহীহ বুখারী,হাদীস নং ২৭১৩)
তুমি তো এমন নবীর উম্মত যিনি সৌন্দর্য প্রকাশ করে নারীদেরকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন। আস না! আমরা নবীর আদর্শে আদর্শিত হই। জাতিকে একটা সুষ্ঠু সুন্দর সমাজ উপহার দিই।
এ রাতে যা যা করা হয় প্রত্যেকটিই অত্যন্ত জঘন্যতম গুনাহ। যেমন –
(১) আতশবাজি,পটকাবাজি ,আলোকসজ্জা ইত্যাদি। এগুলো এক দিক থেকে যেমন মুশরিকদের কাজ তেমনি ভাবে অন্য ভাইদের জন্য কষ্টের কারণও বটে। এর দ্বারা অন্যদের ঘুমের ব্যঘাত ঘটে। বিশেষ করে বৃদ্ধ,অসুস্থ ও বাচ্চাদের অনেক কষ্ট হয়। যা স্পষ্ট হারাম। (সহীহ বুখারী,হাদীস নং-৯)
(২) নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ। এথেকে আল্লাহ তাআলা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।–সূরা আহযাব, ৩৩।
(৩) ব্যপক আকারে নাচ-গান ও বাদ্য বাজানো হয়। এক তো এগুলো এমনিতেই নাজায়েয উপরন্তু দ্বীনদার লোককে শুনতে বাধ্য করা হয় এবং অন্যকে কষ্ট দেওয়া হয়।(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১)
(৪) এ রাতে মদ পান সহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করা হয়। যা স্পষ্ট হারাম। (সূরা মায়েদাহ, ৯০)
(৫) দ্বীর্ঘ রাত পর্যন্ত আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকার কারনে ফজরের নামায কাযা হয়ে যায়।
(৬) অনেক ক্ষেত্রে যুবক যুবতী যেনা ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ে।
(৭) মেয়েরা বিভিন্ন অশালীন ও অশ্লীল কাপড় চোপড় পরিধান করে। যার কারনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতেই থাকে।
এ ছাড়া আরো কত কিছুই না ঘটে থাকে এ রাতে। যার সবগুলো ইসলামে নিকৃষ্ট ও গুনাহের কাজ।
সারকথা ,কোন মুমিনের জন্য এ সকল কাজ কখনই জায়েয হতে পারে না। আর এ সকল নাজায়েয কর্মকান্ডের পিছনে রয়েছে ইয়াহুদী ও নাসারাদের অনুসরন যাদের সর্বদা বিরোধীতা করতে বলা হয়েছে।
خالفوا اليهود والنصارى
অর্থঃ তোমরা ইয়াহুদী ও মুশরিকদের বিরোধীতা কর ।-সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ২১৮৬।
তাদের অনুসরনে এ আশংকা প্রবল যে ,কিয়ামতের দিন তাদের সাথেই হাশর হবে। এবং রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর শাফায়াত থেকে বঞ্চিত থাকবে।বরং মুমিন তো জিবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত হওয়ার কারনে ব্যাথিত থাকবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে থার্টিফার্স্ট নাইটে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন!