প্রশ্ন : হুজুর আমি বলেছিলাম একজনকে প্রায় সাড়ে ৩ বছর যাবত ভালবাসি। দ্বীনের কারণে কথা, দেখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমার পক্ষে এটা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি চাই তাকে বিবাহ করতে। কিন্তু পরিবার থেকে না ওর বিয়ে দিতে তৈরি না আমার। তাই আপনি বলুন কী কী লাগবে বাবা, মা ছাড়া বিবাহ করতে?

উত্তর :

প্রিয় দ্বীনী ভাই আপনি বিষয়টি এভাবে ভাবুন, আপনার মেয়ে বা বোন কোথাও সম্পর্ক তৈরি করেছে। ঐ মেয়ে বা বোনকে কিন্তু আপনিই তিলে তিলে অনেক কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে মানুষ করেছেন। জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই কিন্তু আপনার একটা ইচ্ছা তার পিছনে কাজ করবে। আপনি তাকে পছন্দের ছেলের সাথে অনেক ধুমধাম করে বিবাহ দিবেন। আচ্ছা এখন বলুন তো আপনার ঐ বোন বা মেয়ে যদি কোন ছেলের সাথে পালিয়ে চলে যায় (চাই তারা বিবাহ বন্ধনেই আবদ্ধ হোক না কেন) তাহলে আপনি বিষয়টি কিভাবে নিবেন? আপনার আশপাশের মানুষ বিষয়টি কিভাবে নিবে? আপনার মান-সন্মান কোথায় যাবে? প্রিয় দ্বীনী ভাই, বয়সের উন্মাদনায় এসব কিছুই কিন্তু আপনার কাছে গুরুত্বহীন, উপেক্ষিত হতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাস্তবতা হয়তোবা আপনি দৃষ্টিগোচর হওয়ার কথা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এক ব্যক্তি যিনার অনুমতি চাইল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন তুমি কি এটা চাও যে তোমার মায়ের বোনের সাথে অন্য কেউ যিনা করুক? তাই আপনি বিষয়টি নিজের মত করেই ভেবে দেখুন। সব পিতামাতাই তাদের সন্তানকে উপযুক্ত জায়গায় পাত্রস্থ করতে চায়। আপনি এবং উক্ত মেয়ে উভয়ের জন্য উভয়ের পিতামাতাকে কষ্ট দিয়ে নিজেদের উন্মাদনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা কি ঠিক হবে? যে পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ তাআলা জান্নাত রেখেছেন, যে মায়ের পদতলে আল্লাহ তাআলা জান্নাত রেখেছেন। হতে পারে এ কারণে হয়তোবা মেয়েটিকে তার পিতামাতা জীবনেও ঘরে উঠতে দিবে না। কতই তো এমন দেখা যায়। সেক্ষেত্রে মেয়েটির জন্য এটা কি ভালো হবে? কুরআন হাদীস না হয় পরেই ভাবলাম। আপনার মানবতা কি বলে? মেয়েটি কি আখেরাতে ভালো থাকবে? আর কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তার পরবর্তী ঠিকানা কোথায়? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে? কে তাকে স্থান দিবে? এটাও ভাবা দরকার পরম স্নেহশীল, মমতাময় পিতামাতাকে যে ছেড়ে চলে যায়, নারাজ করে, সে যে দুদিন পর আপনাকে ফেলবে না, নারাজ করবে না এরই বা কি গ্যারান্টি? স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে এর তো লক্ষ লক্ষ নযীর রয়েছে। কিন্তু সন্তানের বিরুদ্ধে মায়ের মামলার ঘটনা কি শুনেছেন? শুনলেও কটি? তাছাড়া মেয়ে তার কুফু ব্যতীত অন্যত্র পিতামাতাকে না জানিয়ে বিবাহ করলে বিবাহই হয় না। সেক্ষেত্রে সংসার করলেও যিনা হতে থাকে।
তাই প্রিয় দ্বীনী ভাই ইসলামের আয়না দিয়ে দেখার এবং বুঝার চেষ্টা করুন। আপনার একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন। আপনার আখেরাত রয়েছে। তার হুকুম মতই আপনার চলতে হবে। তাই আল্লাহ তাআলা এবং পিতামাতাকে সন্তুষ্ট করেই সামনে চলতে থাকুন। এতে উভয় জাহানেই শান্তি পাবেন ইংশাআল্লাহ।
একটি গোনাহ অপর গোনাহ টেনে আনে। যদি শুরু থেকে পর্দা করতেন বেগানা মহিলাদের প্রতি দৃষ্টি না দিতেন তবে আজকের এই বিপদে পড়তেন না। আপনার হয়তোবা দুনিয়া দিন দিন চিন্তা ও পেরেশানিতে সংকীর্ণ হয়ে আসছে। তাই আপনার নিকটস্থ কোন আল্লাহ ওয়ালার নিকট যান। তিনি আপনাকে সঠিকভাবে পথ প্রদর্শন করবেন। কোন পন্থা অবলম্বন করলে আপনি সবর করতে পারবেন তিনি আপনাকে হাদীসের আলোকে বাতলে দিবেন। আমিও দুআ করি আল্লাহ তাআলা আপনার কল্যাণ করুন।

সম্পূরক প্রশ্নঃ হুজুর, গত প্রশ্নে হয়তো আমি আপনাকে ঠিকভাবে বোঝাতে পারিনি। আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম কুফু মিলের মধ্যে কী কী পরে? কী কী মিল থাকলে বিবাহ করা যায় অভিভাবক ছাড়া? আর আপনি যেমন ভেবেছেন তেমন নয়। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু গুনাহ থেকে বাঁচা। আমরা যেভাবে চলছি সেভাবেই চলবো। মানুষদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া কেউ জানবে না ইনশাআল্লাহ। সেও স্বাভাবিক আমিও স্বাভাবিক। শুধু কথা, দেখা, মেলামেশার গুনাহ থেকে বেচে থাকাই আমাদের উদ্দেশ্য।

উত্তরঃ বিষয়টি আমি ভালো করেই বুঝেছিলাম। আপনি হয়তো আমার কথা বুঝেননি। ভবিষ্যতে যখন আপনি কোন মেয়ের পিতা হবেন আর আপনার মেয়ে কোন ছেলের সাথে গোপনে চলে যাবে বা বিয়ে করবে তখন ভালো করেই বুঝবেন। অভিভাবককে নিয়েই সামনে চলার চেষ্টা করুন।

Loading