প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, আমি প্রস্রাব করার সময় সতর্কতার জন্য টিস্যু দিয়ে কতক্ষন হাটাচলা, কাশি এবং নাড়াচাড়া করে নিশ্চিত হয়ে তারপর ইসতেন্জা শেষ করতাম। কিন্তু একজন মুফতি সাহেব বললেন যে, লজ্জাস্থান ধরে হাটাচলা করা গর্হিত কাজ এবং লজ্জাস্থান বেশী নাড়াচাড়া করলে একপর্যায়ে প্রস্রাবের রাস্তা লুস হয়ে যাবে এবং তখন আর প্রস্রাব ধরে রাখা যাবে না, তাই নাড়াচাড়া বন্ধ করুন। স্বাভাবিকভাবে প্রস্রাব করার পর, কাতরা ঝরে পরার পর, পরে যদি প্যান্টে দুই এক ফোটা পড়ার সন্দেহ থাকলেও অসুবিধা নাই, প্যান্টে কিছু পানি ছিটিয়ে দিবেন আর এটাই হাদিস সম্মত। হাদিসেও নাকি আছে এক সাহাবী এই সম্পর্কে জানতে চাইলে রাসুল সাঃ বললেন পানি ছিটিয়ে দিতে। এখন আমার প্রশ্ন: আমি টেস্ট করে দেখছি যে- যদি হাটাচলা, নাড়াচাড়া এবং কাশি না দেই তাহলে এক ফোটা অথবা অধা ফোটা প্রস্রাব ঝড়ে পড়ে। তাহলে কি এখন থেকে হাটাচলা, নাড়াচাড়া না করে প্যান্টে শুধু পানি ছিটিয়ে দিবো?

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
উক্ত মুফতী সাহেবের কথা সঠিক নয়। পুরুষদের পেশাবের রাস্তা কিছুটা আঁকাবাঁকা বা পেঁচানো। পেশাবের পর পেশাবের রাস্তায় আটকে থাকা পেশাব বের হতে কিছুটা সময় লাগে। বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা জরুরী। হাদীসের প্রায় সকল কিতাবেই পেশাবের কতরা বন্ধ হওয়া নিশ্চিতকরণ প্রসঙ্গে হাদীস রয়েছে। প্রায় সকল মুহাদ্দিসীনই এ সংক্রান্ত স্বতন্ত্র অধ্যায় কায়েম করেছেন। কেউ অধ্যায় কায়েম করেছেন বাবুল ইস্তেবরা নামে (অর্থাৎ পেশাবের কতরা বের হওয়া থেকে মুক্ত হওয়া) আবার কেউ বাবুল তানাজ্জুহ আনিল বাউলি (অর্থাৎ পেশাবের কতরা থেকে বেঁচে থাকা) নামে। এমনকি হাদীস শরীফে কতরা বন্ধ করতে কিছু কসরত করার কথাও এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إذا بال أحدكم فلينتر ذكره ثلاث مرات
অর্থঃ তোমাদের কেউ পেশাব করলে (পেশাবের কতরা বন্ধ করার জন্য) ষে যেন তার পুরুষাঙ্গকে তিনবার ঝাকি দেয় (যাতে রাস্তায় আটকে থাকা পেশাব বেরিয়ে আসে)।–সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩২৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৯০৫৪
পেশাবের কতরা বা ছিটা থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরী। কেননা হাদীস শরীফে আছে অধিকাংশ কবরের আযাব হবে পেশাবের ছিটা থেকে বেঁচে না থাকার কারণে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
عامة عذاب القبر من البول فاستنزهوا من البول
অর্থঃ কবরের অধিকাংশ আযাব হবে পেশাবের কারণে। কাজেই তোমরা পেশাব (এর ছিটা) থেকে বেঁচে থাক।–মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ৪৯০৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ৬৫৪
তাছাড়া কাপড়ে পেশাব লাগলে নামাযও সহীহ হয় না। কেননা নামায সহীহ হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে কাপড় পাক থাকা।
সারকথা, পেশাবের পর কতরা বন্ধ হওয়া নিশ্চিত করা জরুরী। আর এটা বিভিন্নভাবে হতে পারে। পা উঠানামা করা, কিছুটা হাঁটাচলা করা, কাশি দেওয়া, গলা খ্যাঁকর দেওয়া, পুরুষাঙ্গ ঝাকি দেওয়া ইত্যাদি। হাদীস শরীফে পেশাবের কতরা বন্ধ করতে বাম হাত ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ডান হাত ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَأْخُذَنَّ ذَكَرَهُ بِيَمِينِهِ
অর্থঃ যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে সে যেন তার ডান হাত দিয়ে পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১৫৪
কাজেই পেশাবের পর টিস্যু পেপার বা ঢিলা কুলুখ বাম হাতে নিয়ে পুরুষাঙ্গের সাথে ধরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে। তবে হ্যাঁ, অনেককেই দেখা যায় ঢিলা কুলুখ নিয়ে সবার সামনে হাঁটাহাঁটি করে, যা নিঃসন্দেহে খেলাফে সুন্নাত ও গর্হিত কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসকল কাজ লোকচক্ষুর আড়ালে সারতেন। অনুরূপভাবে পুরুষাঙ্গ নিয়ে বেশি টানাহেঁচড়া করবে না। যা জটিল রোগের কারন হতে পারে।
আর রইল প্যান্টে পানি ছিটিয়ে দেয়ার প্রসঙ্গ, তো এটা ওয়াসওয়াসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ যার পেশাবের কতরা বন্ধ হওয়ার পরেও সন্দেহ হয়, সে লজ্জাস্থানের সামনে পানি ছিটিয়ে দিবে। যাতে পোশাক ভিজে থাকার কারণে তার পেশাবের সন্দেহ না হয়। সেক্ষেত্রে সে ভাববে এটা তো আমারই ছিটিয়ে দেওয়া পানি। কিন্তু পেশাবের কতরা বন্ধ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার কথা কোন হাদীসে নেই।

Loading