কুরবানী কার উপরে ওয়াজিব?

১০ যিলহজ ফজর থেকে ১২ যিলহজ সুর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কোন সুস্থমস্তিষ্ক,প্রাপ্তবয়স্ক,মুসলিম নর-নারী ঋনমুক্ত থাকা অবস্থায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয় তবে তার কুরবানী করা ওয়াজিব। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২
মাসআলাঃ নাবালেগ,পাগল নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। তবে তাদের অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে থেকে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬
মাসআলাঃ মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। মুসাফির দ্বারা উদ্দেশ্য হল যে ব্যক্তি কমপক্ষে ৪৮ মাইল সফরের নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫
মাসআলাঃ কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য কুরবানীর তিন দিনই মুকীম থাকা জরুরী নয়।বরং কেউ যদি এই ৩দিনরে শুরুতে মুসাফির থাকে এবং শেষের দিকে মুকীম হয়ে যায় তবে নেসাবের মালিক হলে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে।তবে কেউ যদি এই ৩দিনরে শুরুতে মুকীম থাকে এবং শেষের দিকে মুসাফির হয়ে যায় তাহলে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে না। বাদায়েউস সানায়ে -৪/১৯৫
মাসআলাঃ কুরবানী শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়। মাতা পিতা সন্তানাদি ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে করলে তা নফল হবে । রদ্দুল মুহতার -৬/৩১৬
মাসআলাঃ গরীব ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। তবে সে কুরবানীর নিয়তে কোন পশু ক্রয় করলে সেই পশু কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২
মাসআলাঃ যে সকল হাজী মক্কা,মিনা ও মুযদালেফা মিলে কুরবানীর সময় ১৫ দিন থাকবে তারা মুকীম। নেসাবের মালিক হলে হজ্বের কুরবানী ব্যতীত তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানীও ওয়াজিব। আর যারা মুসাফির থাকবেন তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। (ফাতাওয়া হিন্দীয়া ৫/২৯৩)

কুরবানীর নেসাবঃ

যদি কারো নিকট (১)সাড়ে সাত তোলা(ভরি) পরিমান সোনা থাকে অথবা (২)সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা থাকে অথবা (৩)সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার যে কোন একটির মূল্যের সমপরিমান টাকা-পয়সা বা ব্যবসার মাল অথবা প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ থাকে অথবা (৪)উল্লেখিত পাঁচটি (সোনা, রুপা, টাকা-পয়সা, ব্যবসার মাল ও প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ ) সম্পদই থাকে যার সমষ্টিগত মূল্য উপরোক্ত পরিমান সোনা( সাড়ে সাত তোলা) বা রুপার(সাড়ে বায়ান্ন তোলা) যে কোন একটির মূল্যের সমপরিমান হয় অথবা (৫) উল্লেখিত পাঁচটি সম্পদের যে কোন চারটি বা তিনটি বা দুটি সম্পদ থাকে যার সমষ্টিগত মূল্য উপরোক্ত পরিমান সোনা বা রুপার (সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা) যে কোন একটির মূল্যের সমপরিমান হয়, তবে সে নেসাবের মালিক হিসেবে ধর্তব্য হবে এবং তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।

মাসআলাঃ শুধু সোনা থাকলে কুরবানীর নেসাব হল সাড়ে সাত তোলা (ভরি) স্বর্ণ।

মাসআলাঃ শুধু রুপা থাকলে কুরবানীর নেসাব হল সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা।

মাসআলাঃ বাকি সকল সূরতে কুরবানীর নেসাব হল (শুধু টাকা-পয়সা থাকলে অথবা শুধু ব্যবসার মাল থাকলে অথবা শুধু প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ থাকলে অথবা পাঁচটি সম্পদের প্রত্যেকটি থাকলে অথবা পাঁচটির যে কোন চারটি সম্পদ থাকলে অথবা পাঁচটির যে কোন তিনটি দুটি সম্পদ থাকলে অথবা পাঁচটির যে কোন দুটি সম্পদ থাকলে) সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার যে কোন একটার মূল্যের সমপরিমাণ সম্পদ থাকা।

মাসআলাঃ ধরা যাক,বর্তমান বাজারে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য ৬৫,০০০ টাকা। এখন কারো নিকট ২ তোলা/ভরি সোনা রয়েছে যার বিক্রয়মূল্য ৮০,০০০ টাকা। আর উক্ত সোনার সাথে তার নিকট ১ টাকা রয়েছে। উক্ত ১ টাকা থাকার কারনে তার নেসাব সোনা থেকে রুপার দিকে পরিবর্তন হবে। কেননা তার মালিকানায় দুই প্রকার সম্পদ জমা হয়েছে । আর এই দুই প্রকার সম্পদের মুল্যমান যেহেতু সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য তথা ৬৫,০০০ টাকা থেকে বেশি তাই সে নেসাবের মালিক হবে। অর্থাৎ যখন উপরে উল্লেখিত পাঁচটি সম্পদের কোন একটির সাথে আরেকটি সম্পদ মিলানো হবে তখন ঐ মিলানো সম্পদটি পরিমানে যত কমই হোক না কেন (এক আনা সোনা বা রুপা অথবা ১ টাকা বা তার সমপরিমান ব্যবসার মাল) তা ধর্তব্য হবে। এবং তার নেসাব রুপা দ্বারা গণ্য করা হবে। অর্থাৎ যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ মিলে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য পরিমান হয় তবে সে নেসাবে মালিক গন্য হবে।

মাসআলাঃ যেহেতু রুপার নেসাবের মুল্যমান সোনার নেসাবের মূল্যমান থেকে কম তাই শুধুমাত্র সোনা থাকার সুরত ব্যতীত বাকি সকল সুরতে রুপা দ্বারা নেসাব নির্ধারণ হবে। অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য পরিমান সম্পদ থাকলে সে নেসাবের মালিক হবে।

মাসআলাঃ কুরবানীর নেসাব কুরবানীর তিন দিনের কোন একদিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে । কুরবানীর তিন দিন বা সারা বছর নেসাব থাকা জরুরী নয় ।- রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২, বাদাউস সানায়ে ৪/১৯৬

হাজাতে আছলিয়া বা নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদঃ

কুরবানীর নেসাবে যেহেতু সোনা- রুপা, টাকা-পয়সা ও ব্যবসার কাঁচামাল ছাড়াও প্রয়োজন অতরিক্ত সম্পদ শামিল হয়, তাই প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা প্রয়োজন। হাজাতে আছলিয়া বা নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাব সম্পর্কে জানলে প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ বের করা সহজ হয়ে যাবে। তাই এ ব্যপারে কিনচিত আলেকপাত করা প্রয়োজন মনে করছি।
মাসআলাঃ মানুষের জীপন যাপনে যা অত্যাবশ্যকীয় এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনে যা ব্যবহার আসে তাই তার হাজাতে আছলিয়া বা নিত্যপ্রয়োজন সম্পদ হিসেবে গন্য হবে। আর এটা ব্যক্তিবিশেষে বিভিন্ন হয়ে থাকে।

মাসআলাঃ বসতবাড়ি, বাড়ির আসবাবপত্র, পরিধানের কাপড়, ব্যবহারের গাড়ি ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত হাড়ি-পাতিল, ডেগ ও বাসনপত্র হাজাতে আছলিয়া তথা নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদের মধ্যে গন্য হয়।

মাসআলাঃ বড় বড় ডেগ, বড় বড় বিছানা ইত্যাদি যা দৈনন্দিন কাজে লাগে না বরং দু-এক বছরে কখনও অনুষ্ঠানে প্রয়োজন হয় তা হাজাতে আছলিয়ার মধ্যে গন্য হয় না।

মাসআলাঃ যে সকল আসবাবপত্র পুরো বছর প্রয়োজনে আসে না তা প্রয়োজনতিরিক্ত সম্পদ। কাজেই মহিলারা আলমারিতে যে সকল কাপড় সাজিয়ে রাখে তা যদি মাঝে মধ্যে পরিধান করে অথবা অন্তত বছরে দু একবার পরিধান করে তবে তা হাজাতে আছলিয়ার মধ্যে গন্য হবে। অন্যথায় তা প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে। অনুরুপভাবে কাপ-প্রিচ, চেয়ার-টেবিল ইত্যাদি যদি সারা বছরে কখনও ব্যবহারে না আসে তবে তা প্রয়োজনতিরিক্ত হিসেবে গন্য হবে।

মাসআলাঃ কারো ৫০ বিঘা জায়গা রয়েছে। এতে চাষ করে যে ফসল হয় তা তার সংসার খরচে ব্যয় হয়ে যায়। তাহলে পুরো ৫০ বিঘা জমি তার নিত্যপ্রয়োজনীয়। পক্ষান্তরে কারো ১০ বিঘা জায়গা রয়েছে। যার ৮ বিঘার ফসলে তার সংসার চলে যায়। তাহলে ২ বিঘা তার জন্য প্রয়োজনতিরিক্ত সম্পদ হবে।

মাসআলাঃ কারো ১০টি বাড়ি রয়েছে। যার ভাড়া দ্বারা সে জীবিকা নির্বাহ করে। সংসার বড় হবার কারনে পুরো টাকা ব্যয় হয়ে যায়, কোন অংশ বাকি থাকে না। তবে এটা তার হাজাতে আছলিয়ার মধ্য গন্য হবে। পক্ষান্তরে কারো দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যার একটির ভাড়া দ্বারা তার সংসার ভালভাবে চলে যায়। তবে অন্য ফ্ল্যাটটি তার জন্য প্রয়োজনতিরিক্ত হবে।

মাসআলাঃ পেশাজীবীদের পেশার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী হাজাতে আছলিয়ার মধ্য গন্য। যেমন- ট্রাক্টর, লাঙ্গল ইত্যাদি।

মাসআলাঃ টেলিভিশন প্রয়োজনতিরিক্ত জিনিষ।

মাসআলাঃ আলেম ও তালেবে এলেমের কিতাবাদি হাজাতে আছলিয়ার মধ্য গন্য।

মাসআলাঃ কাজের জন্য চাকর নওকর ও ব্যবহারের যানবাহন ( যা প্রয়োজনে একাধিক হতে পারে) হাজাতে আছলিয়ার মধ্য গন্য।

মোটকথা যা কোন ব্যক্তির জীবন যাপন ও জীবিকা নির্বাহে ব্যবহৃত তাই তার হাজাতে আছলিয়ার মধ্য গন্য। আর যা তার জীবিকা নির্বাহে কাজে আসে না বা যা ছাড়াও তার সংসার ভালভাবে চলে যায় বা যা তার দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারে আসে না এমনকি সারা বছরে কখনও প্রয়োজনে আসে না তাই তার প্রয়োজনতিরিক্ত সম্পদ। উক্ত সম্পদ যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যমান সমতুল্য হয় তবে তার উপর ছদকায়ে ফিতর ও কুরবানী ওয়াজিব। আর উক্ত প্রয়োজনতিরিক্ত সম্পদ যদি এ পরিমান হয় যে, তা দ্বারা পরিবারের খরচসহ হজ্জে যাওয়া যায় তবে তার উপর হজ্জও ফরজ হবে। কাজেই উপরে উল্লেখিত মাসআলাসমূহে যদি প্রয়োজনতিরিক্ত আসবাবপত্র বা পরিধানের কাপড় বা রান্নার কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী অথবা উক্ত দুই বিঘা জমি অথবা উক্ত একটি ফ্ল্যাট এর মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমান হয় তবে তার উপর কুরবানী ও ফেতরা ওয়াজিব হবে। আর যদি উল্লেখিত প্রয়োজনতিরিক্ত সম্পদ্গুলো বিক্রি করে হজ্জে যাওয়া সম্ভব হয় তবে তার উপর হজ্জ ফরজ হবে। আর এমন ব্যক্তির জন্য যাকাত বা অন্য কোন ছদকায়ে ওয়াজিবা (মান্নত, কাফফারার মাল, ফেতরা, কুরবানীর চামড়ার পয়সা ইত্যাদি ) গ্রহন করা জায়েয নয়।

কুরবানীর পশুঃ

যে সকল জন্তু দ্বারা কুরবানী করা যায়ঃ

উট,মহিষ.গরু (গাভি,ষাড়,বলদ),ছাগল (বকরী,খাশী,পাঠা), ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা এ সকল গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করা যায়। এ সকল গৃহপালিত পশু ব্যতীত অন্যান্য পশু যেমন হরিন,বন্য গরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।- বাদায়েউস সানায়ে-৪/২০৫
মাসআলাঃ যে সকল গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করা যায় সেগুলোর নর-মাদা উভয়টি দ্বারা কুরবানী করা যায়।- বাদায়েউস সানায়ে-৪/২০৫

কুরবানীর পশুর বয়সঃ

মাসআলাঃ বকরী,খাশী,ভেড়া ,ভেড়ী ও দুম্বা চান্দ্র মাস হিসেবে কমপক্ষে পূর্ন এক বছর বয়সের হতে হবে। তবে ভেড়া -ভেড়ী ও দুম্বা যদি এক বছরের কিছু কমও হয়,কিন্তু এমন মোটা-তাজা যে ,দেখতে এক বছরের মত মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। এক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে ৬ মাস হতে হবে। ছাগল কোন অবস্থাতেই এক বছরের কম হলে তা দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২১
মাসআলাঃ গরু,মহিষ এর বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। এর কম হলে কুরবানী সহীহ হবে না।- বাদায়েউস সানায়ে।৪/২০৫
মাসআলাঃ উট চান্দ্র মাসের হিসাব অনুযায়ী কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে।- প্রাগুক্ত
মাসআলাঃ উপরে উল্লেখিত জন্তুগুলোর ক্ষেত্রে কুরবানী সহীহ হওয়র জন্য বয়সই মুল। দাত উঠা বা না উঠা এক্ষেত্রে ধর্তব্য নয়।- এলাউস সুনান ৭/২৪৫
মাসআলাঃ বিক্রেতা যদি পশুর কুরবানী ছহীহ হওয়ার জন্য যে বয়স প্রয়োজন তা পূর্ন হয়েছে বলে সাক্ষ্য দেয় আর পশুর শারীরীক গঠনও তেমন হয় তবে বিক্রেতার কথার উপর আস্থা রেখে তা ক্রয় করা ও তা দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হবে।

কুরবানীর পশুর শারীরীক অবস্থাঃ

যে পশু দ্বারা কুরবানী করা উত্তমঃ

মাসআলাঃ কুরবানীর পশু মোটা-তাজা হওয়া উত্তম।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০

পশুর যেসব সমস্যার কারনে কুরবানী ছহীহ হয় নাঃ

মাসআলাঃ যে পশু এত দূর্বল ও রুগ্ন যে তার জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।- ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৭
মাসআলাঃ যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে তা দ্বারা কুরবানী জায়েয নয়। তবে যদি অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে যায় অথবা শিং এখনো উঠেইনি সে পশু দ্বারা কুরানী সহীহ হবে।- রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪
মাসআলাঃ যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা একটি চোখ পূরো অন্ধ বা একটি চোখের তিন ভাগের এক ভাগ বা আরো বেশি দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে সে পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।- বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪ ফাতাওয়া রহীমিয়া ১০/৪৮
মাসআলাঃ যে পশুর কোন দাঁত নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গিয়েছে যে খাবার চিবিয়ে খেতে পারে না এমন পশু দ্বার কুরবানী করা জায়েয নয়। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৮
মাসআলাঃ যে পশুর লেজ বা কোন একটি কানের এক তৃতীয়াংশ বা তদাপেক্ষা বেশি কেটে গেছে সে পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে না। তবে যে পশুর কান জন্ম থেকেই ছোট তার কুরবানী জায়েয। আর যে পশুর জন্মগতভাবে কান নেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয নয়।- ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৭-২৯৮
মাসআলাঃ যে পশু তিন পায়ে ভর দিয়ে চলে,এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা এক পায়ে কোন ভর দিতে পারে না এমন পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। তবে যদি খোড়া পা দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে পারে তবে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয।- রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩,ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৭
মাসআলাঃ কোন পশু যদি এমন শুষ্ক হয় যে ,তার হাড়ের মগজও শুকিয়ে গিয়েছে তবে তা দ্বারা কুরবানী জায়েয নয়। হাড়ের মগজ না শুকালে তা দ্বারা কুরবানী জায়েয।
মাসআলাঃ যে পশুর গায়ে দাদ বা চুলকানি রয়েছে তা দ্বারা কুরবানী জায়েয। তবে এর করনে যদি গোশতে পচন ধরে তাহলে তা দ্বারা কুরবানী জায়েয নয়।
মাসআলাঃ বন্ধ্যা পশু দ্বারা কুরবানী করা জয়েয।- রদ্দুল মুহতার-৬/৩২৫
মাসআলাঃ গর্ভবতী পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। জবাই করার পর বাচ্চা জীবিত পাওয়া গেলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় নিকটবর্তী হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। কাযীখান-৩/৩৫০
মাসআলাঃ খাশিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা জায়েয বরং উত্তম।- ইলাউস সুনান-১৭/৪৫৩
মাসআলাঃ পাগল পশু দ্বারা কুরবানী করা জয়েয। তবে যদি তার পাগলামী এত বেশি হয় যে ঘাশ পানি দিলে খায় না বা মাঠে চরে না তাহলে তা দ্বারা কুরবানী জায়েয নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬
মাসআলাঃ কেউ কুরবানীর জন্য ভালো পশু ক্রয় করার পর তাতে এমন দোষ দেখতে পেল যার কারনে কুরবানী জায়েয হয় না। তবে ঐ পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না। বরং ভিন্ন একটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা যদি গরীব হয় তাহলে ঐ ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে।- রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
মাসআলাঃপশু জবাই করতে গিয়ে ক্রটিযুক্ত হয়ে পড়লে (যেমন ধরতে বা বাধতে বা শুয়াতে গিয়ে পা ভেঙ্গে গেল) তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে।

কুরবানীর পশুতে শরীকের মাসায়েলঃ

মাসআলাঃ ছাগল,ভেড়া ও দুম্বা একাধিক ব্যক্তির নামে কুরবানী হতে পারে না। বরং এগুলোর কোন একটি কেবল একজনের নামে কুরবানী হতে পারে।- বাদায়েউস সানায়ে-৪/২০৭
মাসআলাঃ উট,গরু ও মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭
মাসআলাঃ উট,গরু ও মহিষে সাত ভাগ এবং সাতের কম জোড় বা বিজোড় যে কোন সংখ্যক ( যেমন দুই,তিন,চার,পাঁচ,ও ছয়) ভাগ হতে পারে।- প্রাগুক্ত
মাসআলাঃ সাত ভাগে কুরবানী করলে সরার ভাগ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ কারো দেড় ভাগ এমন হলে কারো কুরবানীই সহীহ হবে না।- প্রাগুক্ত
মাসআলাঃ গরু,মহিষ ও উটে কয়েকজন মিলে শরীক হয়ে কুরবানী করলে সকল শরীকের নিয়ত সহীহ তথা আল্লাহকে সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হতে হবে। যদি কোন একজন শরীকেরও গলদ নিয়ত থাকে যেমন লোক দেখানোর জন্য কুরবানী করা,গোশত খাওয়ার জন্য কুরবানী করা ইত্যাদি তবে করো কুরবানী সহীহ হবে না। তাই শরীক নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সাথে নির্বাচন করতে হবে।- বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮
মাসআলাঃ যদি কোন শরীকের পূরো বা অধিকাংশ উপর্জন হারাম হয় অথবা কেউ হারাম উপার্জন দ্বারা শরীক হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।
মাসআলাঃ কোন ধনী ব্যক্তি যদি গরু,মহিষ বা উট একা কুরবানীর দেওয়ার নিয়তে কিনে তাহলে সে ইচ্ছা করলে পরবর্তীতে অন্যকে শরীক করতে পারবে। অবশ্য এক্ষেত্রে অন্যকে শরীক না করা উত্তম। আর যদি ঐ ব্যক্তি গরীব হয় অর্থাৎ তার উপর কুরবানী ওয়াজিব না হয় তবে সে কাউকে শরীক করতে পারবে না। গরীব লোক কাউকে শরীক করতে চাইলে পশু ক্রয়ের সময় শরীকের নিয়ত করবে।- বাদায়েউস সানায়ে-৪/২১০
মাসআলাঃ কুরবানীর পূর্বে কোন শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানীর অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। অন্যথায় ঐ শরীকের টাকা ফেরত দিয়ে দিবে। এক্ষেত্রে তার স্থলে অন্য কাউকে শরীক করা যবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬
মাসআলাঃ শরীক হয়ে কুরবানী করলে গোশত আন্দাজে ভাগ করবে না। এটা জায়েয নয়।পাল্লা দিয়ে মেপে নিবে। তবে যে ভাগে পা বা মাথা ইত্যাদি থাকে সে ভাগে গোশত কম দিতে সমস্যা নেই। -আদ্দুররুল মুখতার-৬/৩১৭

অন্যের পক্ষ থেকে কুরবানীঃ

মাসআলাঃ কুরবানী শুধু নিজের উপর ওয়াজিব হয়। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের (যেমন পিতা –মাতা,স্ত্রী ইত্যাদি )পক্ষ থেকে কারো উপর কুরবানী ওয়াজিব হয় না।
মাসআলাঃ কারো পক্ষ থেকে তার অনুমতি ব্যতীত ওয়াজিব কুরবানী আদায় করলে তা সহীহ হবে না। অবশ্য একই পরিবারভুক্ত কোন সদস্য অন্য সদস্যের পক্ষ থেকে তার জ্ঞাতসারে নিয়মিত কুরবানী করে আসলে তার কুরবানী হয়ে যাবে। তবে প্রকাশ্যে অনুমতি নেওয়া উত্তম।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫
মাসআলাঃ নাবালেগের পক্ষ থেকে অভিভাবকের উপর কুরবানী দেওয়া জরুরী নয়। বরং মুস্তাহাব । রদ্দুল মুহতার-৬/৩১৫
মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ছাওয়াব পৌছানোর উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি ওসিয়ত না করে থাকলে তা নফল হিসাবে গন্য হবে। এ গোশত সবাই খেতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি ওসিয়ত করে যায় তবে তার গোশত গরীব মিসকীনদের মাঝে ছদকাহ করা ওয়াজিব। -রদ্দুল মুহতার-৬/৩২৬
মাসআলাঃ জীবিতদের সাথে একটি পশুতে মৃত ব্যক্তিকে শরীক করা যায়।-প্রাগুক্ত
মাসআলাঃ সামর্থ থাকলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। হযরত আলী (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওসিয়ত অনুযায়ী প্রতিবছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে কুরবানী দিতেন।- তিরমিযী শরীফ ১/২৭৫
মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তির ঈছালে ছাওয়ারের উদ্দেশ্যে যেমন তার পক্ষথেকে কুরবানী করা যায় তেমনিভাবে জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকেও তার ঈসালে ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে তার পক্ষ থেকে নফল কুরবারী করা যায়। এ কুরবানীর গোশত সবাই খেতে পারবে।

কুরবানীর সাথে অন্য ইবাদতের নিয়তে শরীক হওয়াঃ

মাসআলাঃ একই পশুতে কুরবানীর সাথে আকীকায় শরীক হওয়া জায়েয আছে।- রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬
মাসআলাঃ এক কুরবানীর পশুতে হজের কুরবানীর নিয়ত করা যায়। অনুরূপভাবে কুরবানীর সাথে ওলীমার নিয়তেও শরীক হওয়া যায়।- বাদায়েউস সানায়ে-৪/২০৯, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫৩৬
মোটকথা কুরবানীর সাথে উল্লেখিত ইবাদত গুলোর কোন একটির নিয়ত করলে তা আদায় হয়ে যাবে।

কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের পূর্বে উপকৃত হওয়াঃ

মাসআলাঃ কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্ধারিত করার পর তা থেকে কোন ভবে উপকৃত হওয়া জায়েয নেই। যেমন মাল টানানো বা বহন করানো,হাল চাষ করা,আরোহন করা ইত্যাদি। এগুলে সব নাজায়েয। কেউ যদি কুরবানীর পশু থেকে উপকৃত হয় তবে উপকারের বিনিময় (যেমন হাল চাষ বা বোঝা বহনের মূল্য ) ছদকাহ করে দিবে।- ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০
মাসআলাঃ কুরবানীর পশুর দুধ পান করা জায়েয নয়। যদি কুরবানীর সময় নিকটবর্তী হয় এবং দুধ দোহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তবে দুধ দোহন করবে না। অবশ্য ওলানে ঠান্ডাপানি ছিটিয়ে দিলে দুধের চাপ কমে যায় এবং কষ্ট লাঘব হয়। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তবে তার মূল্য ছদকাহ করবে।- ফাতাওয়া হিন্দীয়া ৫/৩০১
মাসআলাঃকুরবানীর পশুর পোশাক (যদি থাকে ),দড়ি ইত্যাদি ছদকাহ করে দিবে। নিজের কাজে ব্যবহার করবে না।
মাসআলাঃ কুবানীর পশুর বাচ্চা হলে তা জবাই না করে জীবিত ছদকাহ করা উত্তম। জীবিত ছদকাহ না করলে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং বাচ্চার গোশত ছদকাহ করে দিবে।-রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬

কুরবানীর পশু খোয়া গেলেঃ

মাসআলাঃ কুরবানীর পশু ক্রয় করার পর যদি হারিয়ে যায় বা মারা যায় বা চুরি হয়ে যায় তবে কুরবানীদাতা ধনী হলে অর্থাৎ তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হলে তাকে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। আর যদি সে গরীব হয় তাহলে তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। -বাদায়েউস সানায়ে-৪/২১৬

কুরবানী করার সময়ঃ

মাসআলাঃ যিলহজের ১০,১১ও১২ তিন দিনই কুরবানী করা যায়।তবে ১ম দিন অর্থাৎ ১০ তারিখ কুরবানী করা উত্তম। এর পর দ্বিতীয় দিন,অতঃপর তৃতীয় দিন। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬
মাসআলাঃ শহর এবং এমন গ্রামের লেকজন যাদের উপর ঈদের নামাজ ওয়জিব তাদের জন্য ঈদের নামাজের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। তবে কোন ওযরের কারনে যদি ঈদের নামায প্রথম দিন পড়া না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
মাসআলাঃ যেখানে ঈদের নামায জায়েয নয় সেখানে সুবেহ সাদেকের পর থেকেই কুরবানী করা জায়েয।
মাসআলাঃ ১০ও১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয। তবে অন্ধকারের জন্য জবাইয়ে সমস্যা হলে রাতে জবাই করা অনুত্তম।অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাত্রে জবাই করতে কোন অসুবিধা নেই। তবে সর্বাবস্থায় দিনে কুরবানী করা উত্তম।- ফাতাওয়া হিন্দিয়া-৫/২৯৬

জবায়ের হুকুম ও তরীকাঃ

মাসআলাঃ কুবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে ভালভাবে জবাই করতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে করাবে। সেক্ষেত্রে কুরবানীদাতা জবাই এর স্থানে উপস্তিত থাকবে। মহিলারা পর্দার ব্যঘাত হলে উপস্তিত হবে না। ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০
মাসআলাঃ কুরবানীর নিয়ত শুধু মালিক কর্তৃক মনে মনে করাই যথেষ্ট । কিছু বলা জরুরী নয়। অনুরূপভাবে মালিক কর্তৃক নিয়ত করার পর জবাইকারীর নামের লিষ্ট পড়ারও কোন প্রয়োজন নেই।- আল ফিকহুল ইসলামী ৪/৩০০
মাসআলাঃ কুরবানীর পশুকে মাথা দক্ষিন দিকে দিয়ে কেবলা মুখি করে শুইয়ে দিবে। এটা সুন্নত। অতঃপর এদুআটি পড়া উত্তম-
{إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفاً وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ. إِنَّ صَلاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
এর পর “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ”বলে জবাই করবে। ইচ্ছাকৃতভাবে এটা তরক করলে কুরবানী সহীহ হবে না এবং এর গোশতও খাওয়া যাবে না। তবে ভুলে ছুটে গেলে অসুবিধা নেই।–জাওয়াহিরুল ফিকহ-১/৪৫০
মাসআলাঃ কখনও একাধিক ব্যক্তি মিলে জবাই করে। জবাইকারী সামান্য কিছু কাটার পরে কসাই বা অন্য কেউ বাকী জবাই সম্পন্ন করে। এক্ষেত্রে যে-ই জবাইতে শরীক হবে তাকে বিমমিল্লাহি আল্লাহু আকবার পড়ে জবাই করতে হবে। যদি কোন একজন ইচছাকৃতভাবে না পড়ে তবে কুরবানী সহীহ হবে না। এবং উক্ত পশু হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪
মাসআলাঃ হলক্ব ও কন্ঠের মধ্যখানে জবাই করতে হবে। নতুবা পশুটি হালাল হবে না।
মাসআলাঃ ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
মাসআলাঃ জবাইয়ের পর পশুর জান বের হবার পূর্বে চামড়া ছোলা,রগ কাটা,ছুরির আগা দিয়ে গলার হাড্ডিতে আঘাত করা বা অন্য কোন অঙ্গ কাটা মাকরূহ।- প্রাগুক্ত
মাসআলাঃ এক পশুর সামনে অন্য পশুকে জবাই করবে না ।

কুরবানীর পশুর কোন অংশ কসাইকে বা জবাই কারীকে পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়াঃ

মাসআলাঃ কসাই,জবাইকারী ও গোশত কাটার কাজে সাহায্যকারীকে চামড়া,গোশত,পায়া বা কুরবানীর পশুর অন্য কোন অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয নেই। কেউ দিয়ে দিলে তার মূল্য ছদকাহ করে দিবে। তবে পূর্ন পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ব্যতীত গোশত বা পশুর অন্য কোন অংশ দেওয়াতে অসুবিধা নেই।

কুরবানীর গোশতঃ

মাসআলাঃ মুস্তাহাব বা উত্তম হল কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে রাখবে,এক ভাগ গরীব মিসকীনকে দিবে এবং এক ভাগ আত্মীয়- সজন ও প্রতিবেশীকে দিবে। তবে এটা ওয়াজিব নয়। বরং মুস্তাহাব। অবশ্য কেউ যদি পুরো গোশত নিজে রাখে বা পুরোটা বিলিয়ে দেয় তবে এত কোন অসুবিধা নেই।- ফাতাওয়া হিন্দীয়া -৫/৩০০
মাসআলাঃ কুরবানীর গোশত ফ্রিজে সংরক্ষন করে খাওয়ার জায়েয। এমনকি সাবা বছর ফ্রিজে রেখে খাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪
মাসআলাঃ কুরবানীর গোশত অমুসলিমদেরকে দেওয়া জায়েয,বরং ক্ষেত্রবিশেষে দেওয়া উত্তম। -ফাতাওয়া হিন্দীয়া ৫/৩০০

কুরবানীর পশুর কোন অংশ বিক্রি করাঃ

মাসআলাঃ কুরবানীর পশুর কোন অংশ কুরবানীদাতার জন্য বিক্রি করা জায়েয নয়। যদি কোন কিছু বিক্রি করে ফেলে তবে তার মুল্য ছদকাহ করা ওয়াজিব। অনুরূপভাবে কুরবানীদাতার নিকট থেকে জেনেশুনে কুরবানীর পশুর কোন কিছু ক্রয় করাও না জায়েয। ফাতাওয়া হিন্দীয়া-৫/৩০১
মাসআলাঃ অনেক সময় গরীব-মিসকীনেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাড়,চর্বি ইত্যাদি সংগ্রহ করে। অতঃপর তারা তা বিক্রি করে। এটা জায়েয। মোটকথা কুরবানীদাতা কোন কিছু বিক্রি করতে পারবে না।- বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫

কুরবানীর তিন দিনে ওয়াজিব কুরবানী করতে না পারলেঃ

মাসআলাঃ যদি কেউ কুরবানীর দিনগুলোতে তার ওয়াজির কুরবানী আদায় করতে না পারে তবে পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মুল্য ছদকাহ করা ওয়াজিব।- বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪
মাসআলাঃ যদি কেউ পশু ক্রয় করার পরেও কোন কারনে কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানী করতে না পারে তবে তার জন্য ঐ পশু জীবিত ছদকাহ করা ওয়াজিব।- কাযীখন ৩/৩৪৫
মাসআলাঃ পশু ক্রয় করার পর কুরবানীর দিনগুলোতে জবাই করতে না পারলে তা জীবিত ছদকাহ করে দিবে। কিন্তু মাসআলা না জানার কারনে কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলো অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরে জবাই করে ফেলে তবে পুরো গোশত ছদকাহ করে দিতে হবে।এক্ষেত্রে যদি গোশতের মুল্য জীবিত পশুর থেকে কমে যায় তবে ঐ হ্রাসকৃত মুল্যও ছদকাহ করতে হবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০,৩২১

কুরবানীদাতা ও পশুর স্থান ভিন্ন হওয়াঃ

কুরবানীদাতা ও পশু এক স্থানে থাকা জরুরী নয়। বরং কুরবানীদাতা ভিন্ন দেশেও কুরবানী করতে পারে। সেক্ষেত্রে পশু যে এলাকায় থাকবে সেই এলাকায় ঈদের নামাযের পরে কুরবানী করতে হবে। এক্ষেত্রে কুবোনীদাতার ঈদের নামাযের সাথে কুরবানীর কোন সম্পর্ক নেই। বরং পশু যে এলাকায় আছে সে এলাকার ঈদের নামায ধর্তব্য হবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করাঃ

মাসআলাঃ কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। কুরবানীর প্রথম দিন সকাল থেকে কোন কিছু না খেয়ে নিজ কুরবানীর গোশত দ্বারা খানা শুরু করা সুন্নত। রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর দিন নিজ কুরবানীর গোশত দ্বারা সর্বপ্রথম খানা খেতেন। তবে যিলহজ্বর ১১বা ১২ তারিখে নিজ কুরবানীর গোশত দ্বারা খানা শুরু করা সুন্নত নয়। এটা শুধুমাত্র ১০ তারিখের জন্য খাস। -তিরমিযী শরীফ ১/১২০, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬

কুরবানীর চামড়াঃ

মাসআলাঃ কুরবানীর পশুর চামড়া পরিশোধন করে নিজে ব্যবহার করা জয়েয।
মাসআলাঃ যদি কেউ কুরবানীর চামড়া বিক্রি করে তবে তার পুরো মুল্য ছদকাহ করা ওয়াজিব।- ফাতাওয়া হিন্দীয়া ৫/৩০১
মাসআলাঃ কুরবানীর পশুর চামড়ার মুল্য ছদকাহ করার নিয়তে বিক্রি করবে। নিজে খরচ করার নিয়তে বিক্রি করা জায়েয নেই। নিয়ত যা-ই করুক সর্বাবস্থায় ছদকাহ করা ওয়াজিব। -ফাতাওয়া হিন্দীয়া-৫/৩০১
মাসআলাঃ কুরবানীর চামড়ার মুল্য গরীব-মিসকীনদের মাঝেই ছদকাহ করতে হবে। তা দ্বারা মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণ,বেতন বা পারিশ্রমিক প্রদান ইত্যাদি কাজে ব্যয় করা যাবে না। বরং গরীবদেরকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে। -রদ্দুল মুহতার -৬/৩২৮
মাসআলাঃ কুরবানীর চামড়ার ব্যপারে উত্তম পন্থা হল তা গরীব আত্মীয় সজন বা দ্বীনী শিক্ষায় অধ্যয়নরত গরীব ও এতিম ছাত্রদেরকে সরাসরি দান করে দেওয়া। তালেবে এলেমদেরকে দান করলে এক দিকে যেমন দান করার ছাওয়াব পাওয়া যায়,অন্যদিকে মহান দ্বীন চর্চার সহযোগীতও করা হয়। এবং এতে ছদকায়ে জারিয়ার ছাওয়াব পাওয়া যায়।
কুরবানীর চামড়া কোন দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে দান করে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রি করানো উত্তম। কেননা এতি লাভ বেশি অর্জিত হয়ে গরীবের বেশি উপকার হয় এবং দাতার ছাওয়াবও বেশি হয়ে থাকে।
মাসআলাঃ কুরবানীর পশুর চামড়ার মুল্য নিজের প্রয়েজনে ব্যবহার করা গোনাহের কাজ। ঐ টাকাই ছদকাহ করবে। নিজের প্রয়োজনে খরচ করে পরে নিজের থেকে আদায় করলে আদায় হবে বটে তবে এতে গোনাহ হবে।

Loading