১। সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।
ফযীলতঃ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে-
مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ فِى يَوْمِ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّورِ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিনে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে পরবর্তি জুমআহ পর্যন্ত নূরের দ্বারা নূরান্নিত করে দিবেন।–সুনানে বাইহাক্বী,হাদীস নং৬২০৯
عن أوس بن أوس الثقفى سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول « من غسل يوم الجمعة واغتسل ثم بكر وابتكر ومشى ولم يركب ودنا من الإمام فاستمع ولم يلغ كان له بكل خطوة عمل سنة أجر صيامها وقيامها
২। অর্থঃ হযরত আউস বিন আউস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,যে ব্যক্তি জুমআর দিনে গোসল করাবে (জুমআর নামাযের পূর্বে স্ত্রী-সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা উত্তমরূপে গোসল করবে অতঃপর আউয়াল ওয়াক্তে (ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে ) মসজিদে আসবে এবং (মসজিদে) আসার সময় পায়ে হেটে আসবে,কোন ছাওয়ারীতে আরোহন করবে না। এবং ইমামের নিকটবর্তী বসবে অতঃপর উভয় খুৎবা মনোযোগ সহকারে শুনবে এবং (খুৎবার সময় ) কোন বেহুদা কাজ-কর্ম করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি কদমে এক বছর (নফল) রোযা ও এক বছর (নফল) নামাযের ছাওয়াব পাবে।- সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৪৫
অর্থাৎ যে ব্যক্তি জুমআর দিন এই ৬টি আমল করবে-
ক.ভালো ভাবে গোসল করবে।
খ.আউয়াল ওয়াক্তে মসজিদে আসবে।
গ.ছাওয়ারীতে আরোহন না করে পায়ে হেটে মসজিদে আসবে।
ঘ.খতীবের নিকটবর্তী বসবে।
ঙ.উভয় খুৎবা মনোযোগ সহকারে শুনবে।
চ.খুৎবার সময় কোন বেহুদা কথা বা কাজ করবে না।

তার প্রতিটি কদমে এক বছর নফল নামায ও এক বছর নফল রোযার ছাওয়াব অর্জন হবে। ওলামায়ে কেরাম বলেছেন অন্য কোন সহীহ হাদীসে এত অল্প আমলে অধিক পরিমানে ছাওয়াবের কথা পাওয়া যায় না।-(মিরকাতুল মাফাতীহ ৫/৬৮)

৩। ভালভাবে গোসল করে সুগন্ধি মেখে মসজিদে এসে মনযোগের সাথে খুতরা শ্রবন করা।
عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَيَتَطَهَّرُ
مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ فَلَا يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ
ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الْإِمَامُ إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى

অর্থঃ হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যখন জুমআর দিনে কোন ব্যক্তি গোসল করে এবং সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে। অতঃপর তেল মাখে বা ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং বের হয়। আর দুজনের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি না করে অতঃপর সে তার জন্য ধার্যকৃত নামায আদায় করে এবং ইমাম খুৎবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে,তার এই জুমআ থেকে পরবর্তি জুমআ পর্যন্ত (সগীরাহ গোনাহ )মাফ করে দেওয়া হয়।-সহীহ বুখারী হাদীস নং ৮৮৩

৪।উত্তম কাপড় পরিধান করে জুমআর নামাযে আসা। – সহীহ বুখারী হাদীস নং ৮৮৬

৫। দুই খুৎবার মাঝে যখন ইমাম বসে তখন দুআ করলে তা কবূল করা হয়। তবে এ সময় জিহবা দ্বারা দুআ করবে না বরং মনে মনে করবে।- ফাতহুল বারী২/৫২৮,আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৫৪
عن أبى بردة بن أبى موسى الأشعرى قال قال لى عبد الله بن عمر أسمعت أباك يحدث عن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- فى شأن الجمعة يعنى الساعة. قال قلت نعم سمعته يقول سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول « هى ما بين أن يجلس الإمام إلى أن تقضى الصلاة ». قال أبو داود يعنى على المنبر.

অর্থঃ হযরত আবু বুরদাহ (রহঃ) বলেন,আমাকে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বললেন,তুমি কি তোমার আব্বাকে জুমআর দিন সম্পর্কে অর্থাৎ (দুআ কবূলের) বিশেষ সময় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীস বর্ননা করতে শুনেছ?তিনি বললেন, আমি বললাম হাঁ আমি তাকে (আমার আব্বাকে ) বলতে শুনেছি ,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তা (দুআ কবূল হওয়ার সময়)হল ইমাম(মিম্বরে)বসা থেকে নামাজ আদায় করার মধ্যবর্তি সময়।-সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং ১০৫১
৬।এ দিনে অন্য দিনের তুলনায় বেশী বেশী দুরূদ শরীফ পড়া-
عن أوس بن أوس قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « إن من أفضل أيامكم يوم الجمعة فيه خلق آدم وفيه قبض وفيه النفخة وفيه الصعقة فأكثروا على من الصلاة فيه
অর্থঃ হযরত আউস বিন আউস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছেন,তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হল জুমআর দিন। এই দিনে আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তার ওফাত হয়েছে। আর এই দিনেই (সিঙ্গায়)ফুৎকার হবে এবং এই দিনেই (সকলে ) বেহুশ হবে। কজেই তোমরা এই দিনে বেশী বেশী দুরূদ পাঠ কর।- সুনানে আবূ দাউদ হাদীস নং ১০৮৯
৭।আসরের নামাযের পর ৮০বার এই দুরূদ শরীফ পড়া –
اللهم صل عل محمد النبي الامي و علي اله و سلم تسليما
যে ব্যক্তি জুমআর দিন আসরের নামাযের পর উক্ত দুরূদটি ৮০ বার পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। এবং ৮০বছর ইবাদত করার ছাওয়াব লিখে দিবেন।–হাফেজ সাখাবী আল-ক্বওলুল বাদী ২৮৪

৮।হাদীস শরীফে আছে জুমআর দিন এমন একটি সময় আছে বান্দা ঐ সময় যা-ই দুআ করে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন। আর তা হল মাগরিবের কিছু সময় পূর্বে।
عن جابر بن عبد الله عن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- أنه قال « يوم الجمعة ثنتا عشرة ». يريد ساعة « لا يوجد مسلم يسأل الله عز وجل شيئا إلا آتاه الله عز وجل فالتمسوها آخر ساعة بعد العصر »
অর্থঃ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ননা করেন,তিনি বলেন জুমআর দিনে বার ঘন্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে,ঐ সময় কোন মুসলমান আল্লাহর নিকট যা-ই দুআ করে আল্লাহ তাআলা তাই কবুল করে নেন। তোমরা ঐ মূহূর্ত টিকে আসরের শেষে অনুসন্ধান কর। -আবূ দাউদ হাদীস নং ১০৫০,সহীহ বুখারী হাদীস নং ৯৩৫

৯।জুমআর দিন জুমআর নামাযের জন্য যে যত তাড়াতাড়ি মসজিদে আসবে সে তত বেশী ছাওয়াব পাবে। সর্ব প্রথম যে মসজিদে আসবে সে একটি উট ছদকার ছাওয়াব পাবে। তার পর যে আসবে সে একটি গাভী ছদকার তার পরের জন একটি দুম্বা ছদকার তার পরের জন একটি মুরগী ছদকার এবং তার পরের জন একটি ডিম ছদকার ছাওয়াব পাবে।
عن ابي هريرة قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اذَا كَانَ يَوْمُ الْجُمُعَةِ وَقَفَتْ الْمَلَائِكَةُ عَلَى بَابِ الْمَسْجِدِ يَكْتُبُونَ الْأَوَّلَ فَالْأَوَّلَ وَمَثَلُ الْمُهَجِّرِ كَمَثَلِ الَّذِي يُهْدِي بَدَنَةً ثُمَّ كَالَّذِي يُهْدِي بَقَرَةً ثُمَّ كَبْشًا ثُمَّ دَجَاجَةً ثُمَّ بَيْضَةً فَإِذَا خَرَجَ الْإِمَامُ طَوَوْا صُحُفَهُمْ وَيَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ
অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্নিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,যখন জুমআর দিন আসে ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাড়িয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগন্তকদের নাম লিখতে থাকে। যে সবার আগে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যয় যে একটি উট ছদকাহ করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যয় যে একটি গাভী ছদকাহ করে। তার পর আগমন কারী ব্যক্তি মুরগী ছদকাহকারীর ন্যয়।এরপর আগমন কারী একটি ডিম ছদকাহকারীর ন্যয়। অতঃপর যখন ইমাম বের হন, তখন ফেরেশতাগন তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযাগ সহকারে খুৎবা শুনতে থাকেন। -সহীহ বুখারী,হাদীস নং৮৮২
মাসআলাঃ জুমআর নামাযের প্রথম আযানের সাথে সাথে মসজিদে রওয়ানা হওয়া বা প্রস্তুতি নেওয়া জরুরী। প্রথম আযানের পর সকল প্রকার দুনিয়াবী কাজ এমন কি ঘরে বসে নফল নামায না তিলাওয়াত সবই নিষিদ্ধ। অথচ এব্যপারে আম(সাধারন)ও খাস(বিশেষ) সর্ব প্রকার মানুষের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। অধিকাংশ মানুষ খুৎবা শুরু হওয়ার মুহুর্তে বা নামাযের মুহুর্তে এসে থাকে। যা পরিহার করা জরুরী। – সূরা জুমআ,আয়াত ৯,হিদায়া ১/ ২২৩

Loading