ফরজ নামায দাড়িয়ে পড়া ফরজ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ
অর্থ: তোমারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে (নামাযে ) বিনীতভাবে দণ্ডায়মান হও। (সূরা বাকারাহ,আয়াত নং ২৩৮)
যে ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম নয় সে বসে নামায পড়বে। তার জন্য দাড়িয়ে নামায পড়া ফরজ নয়। এক্ষেত্রে মূল হল হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) এর একটি হাদীস –

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَتْ بِي بَوَاسِيرُ فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الصَّلَاةِ فَقَالَ صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ

অর্থঃ হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন আমার অর্শরোগ ছিল। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামায (এর পদ্ধতি) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন,দাড়িয়ে নামাজ আদায় করবে,তাতে সমর্থ না হলে বসে। যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে কাত হয়ে শুয়ে। (বুখারী শরীফ হাদীস নং- ১১১৭)
ইবনে কুদামাহ(রহঃ) বলেন –
أجمع أهل العلم على أن من لا يطيق القيام له أن يصلي جالسا

অর্থঃ আহলে ইলম এ ব্যপারে একমত যে, যে ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায পড়তে অক্ষম সে বসে নামায পড়বে। (আল-মুগনী ১/৪৪৩)
أجمعت الأمة على أن من عجز عن القيام في الفريضة صلاها قاعداً ولا إعادة عليه ، قال أصحابنا : ولا ينقص ثوابه عن ثوابه في حال القيام ؛ لأنه معذور ، وقد ثبت في صحيح البخاري أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا .
অর্থঃ ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,ফরজ নামাযে দাড়াতে অক্ষম ব্যক্তি বসে নামায পড়বে এবং এ নামায তাকে পূনরায় দোহরাতে হবে না,এ ব্যপারে উম্মতের ইজমা হয়ে গিয়েছে। আমাদের উলামায়ে কেরাম বলেছেন,দাড়িয়ে নামায পড়ার ছাওয়াব থেকে তার (বসে নামায পড়ার ) ছাওয়াব কম হবে না। কেননা সে মা’যুর।সহীহ বুখারীতে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,বান্দা যখন অসুস্থ হয় বা সফর করে তখন সুস্থ,মুকীম অবস্থায় সে যে আমলগুলো করত তার ছাওয়াব তার জন্য লেখা হয় ” (আল-মাজমূ ৪/২২৬ )
আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন-
وحديث عمران يدل على أنه يجوز لمن حصل له عذر لا يستطيع معه القيام أن يصلي قاعداً ولمن حصل له عذر لا يستطيع معه القعود أن يصلي على جنبه
অর্থঃ হযরত ইমরান (রাঃ) হাদীস এটা প্রমান করে,যে ব্যক্তির এমন উযর রয়েছে যার কারনে সে দাড়াতে অক্ষম তার জন্য বসে নামায পড়াজায়েয।আর যে ব্যক্তির এমন উযর রয়েছে যার কারনে সে বসতে অক্ষম তার জন্য কাত হয়ে শুয়ে নামায পড়া জায়েয । (নাইলুল আউতার ৩/২৪৩)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট বুঝে আসে দাড়াতে অক্ষম ব্যক্তির জন্য ফরজ নামায বসে পড়া জায়েয। দাড়ানোর সক্ষমতা থাকার পরেও যদি কেউ ফরজ নামায বসে পড়ে তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। এতো গেল ফরজ নামাযের হুকুম।

আর নফল নামাযের ক্ষেত্রে দাড়িয়ে নামায পড়া উত্তম। নফল নামাযে কোন উযর ব্যতীত বসে নফল নামায পড়লে ছাওয়াব অর্ধেক হবে। অনুরূপভাবে শুয়েও নফল নামায জায়েয। এক্ষেত্রে বসে নামায পড়ার ছাওয়াবের অর্ধেক ছাওয়াব পাওয়া যাবে।
হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) বলেন-
سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَلَاةِ الرَّجُلِ قَاعِدًا فَقَالَ إِنْ صَلَّى قَائِمًا فَهُوَ أَفْضَلُ وَمَنْ صَلَّى قَاعِدًا فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ الْقَائِمِ وَمَنْ صَلَّى نَائِمًا فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ الْقَاعِدِ
অর্থঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামকে কোন ব্যক্তির বসে (নফল) নামাযের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন ,যে দাড়িয়ে (নফল) নামায পড়ে এটা তার জন্য উত্তম। যে বসে (নফল)নামায পড়ে সে দণ্ডায়মান ব্যক্তির অর্ধেক ছাওয়াব পাবে। আর যে শুয়ে নামায পড়ে সে উপবিষ্ট ব্যক্তির অর্ধেক ছাওয়াব পাবে।( ছহীহ বুখারী হাদীস নং-১১১৫)

এখন প্রশ্ন হল,কতটুকু অসুস্থতা হলে,ফরজ নামায বসে পড়া জায়েয হবে। অর্থাৎ একেবারে সামান্য দূর্বলতা বা অসুস্থতার করনেই কি ফরজ নামায বসে পড়া জায়েয হবে নাকি যখন কোন ভাবেই দাড়াতে সক্ষম হবে না,কেবল সেক্ষেত্রেই বসে নামায পড়া জায়েয হবে?

এর জবাব হল,যদি দাড়িয়ে নামায পড়ার কারনে রোগির খুব বেশি কষ্ট হয় বা রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে অথবা রোগ মুক্তি বিলম্বিত হওয়ারআশংকা হয় তবে তার জন্য বসে নামায পড়া জায়েয। ইমাম নববী (রহ) বলেন-

قال أصحابنا: ولا يشترط في العجز أن لا يتأتى القيام، ولا يكفي أدنى مشقة، بل المعتبر المشقة الظاهرة، فإذا خاف مشقة شديدة أو زيادة مرض أو نحو ذلك أو خاف راكب السفينة الغرق أو دوران الرأس صلى قاعداً ولا إعادة

অর্থঃ উলামায়ে কেরাম বলেছেন,দাঁড়াতে অপারগতার ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই দাড়াতে না পারা শর্ত নয়।এবং একেবারে সামান্য কষ্টও যথেষ্ট নয়। বরং প্রকাশ্য কষ্ট ধর্তব্য। কাজেই যখন (দাড়ানোর কারনে) অনেক কষ্টের বা রোগ বেড়ে যাওয়ার বা এধরনের কোন আশংকা দেখা দিবে অথবা নৌকায় আরোহনকৃত ব্যক্তি ডুবে যাওয়ার বা মাথা ঘোরার আশংকা করে তখন বসে নামায পড়বে এবং (পরে)পুনরায় তা পড়তে হবে না। (আল মাজমূ ৪/৩১০)

من تعذر عليه القيام لمرض قبلها أو فيها أو خاف زيادته أو بطء برئه بقيامه أو دوران رأسه أو وجد لقيامه ألما شديدا صلى قاعدا

অর্থঃ যে ব্যক্তি রোগের কারনে ফরজ নামাযের পূর্বে বা ভিতরে দাড়াতে অক্ষম হয় অথবা দাড়ানোর দ্বারা রোগ বেড়ে যাওয়ার বা রোগ মুক্তি বিলম্বিত হওয়ার অথবা মাথা ঘোরার আশংকা করে অথবা দাড়ানোর কারনে অনেক কষ্ট অনুভব করে,সে বসে নামায পড়বে। (তানভীরূল আবসার ২/৫৬৫)

এ ব্যপারে মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে একটি রেওয়ায়েত রয়েছে-
عن عمر بن ميمون بن مهران عن أبيه قال: قيل له ما علامة ما يصلي المريض قاعداً؟ قال: إذا كان لا يستطيع أن يقوم لدنياه فليصل قاعداً

অর্থঃ হযরত উমর বিন মায়মূন রহ.তার পিতা থেকে বর্ননা করেন,তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,রোগীর জন্য বসে নামায জায়েয হওয়ার আলামত কি? তিনি বললেন,যখন সে তার দুনিয়াবী কাজের জন্য দাড়াতে পারেনা তখন বসে নামায পড়বে।
মোটকথা,রোগীই নির্ধারন করব কখন তার জন্য বসে নামায পড়া জায়েয হবে? যদি দাড়ানোর কারনে অতিরিক্ত কষ্ট হয় বা কোন ক্ষতির আশংকা থাকে তবে সে বসে সামায পড়তে পারবে।

এখন কোন ব্যক্তি যদি দাড়াতে সক্ষম হয় কিন্তু রুকু সিজদাহ করতে সক্ষম না হয় তাহলে সে কিভাবে নামায আদায় করবে?

এক্ষেত্রে ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ মত হল,এমন ব্যক্তি বসে ইশারায় রুকু সিজদাহ করবে। তার জন্য দাড়িয়ে নামায পড়া আর ফরজ থাকবে না। এমনকি তার জন্য বসে নামায পড়া মুস্তাহাব।

وإن كان قادرا على القيام دون الركوع والسجود يصلي قاعدا بالإيماء ، وإن صلى قائما بالإيماء أجزأه ولا يستحب له ذلك

অর্থঃ যদি সে দাড়াতে সক্ষম হয় কিন্তু রুকু ও সিজদাহ করতে অক্ষম হয় তাহলে সে বসে ইশারায় নামায পড়াবে। আর যদি সে দাড়িয়ে ইশারায় নামায পড়ে,তার জন্য যথেষ্ট হবে। তবে এটা তার জন্য মুস্তাহাব নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৭)

وإن تعذرا )ليس تعذرهما شرطا بل تعذر السجود كاف( لا القيام أومأ قاعدا وهو أفضل من الايماء قائما لقربه من الارض

অর্থঃ অসুস্থ ব্যক্তি যদি রুকু সিজদাহ করতে অপারগ হয় (রুকু,সিজদাহ উভয়টিতে অপারগ হওয়া শর্ত নয় বরং সিজদাহ করতে অপারগ হওয়াই যথেষ্ট )দাড়াতে অপারগ না হয় তবে বসে ইশারা করবে। দাড়িয়ে ইশারা করা থেকে এটা (বসে ইশারায় নামায পড়া) উত্তম জমিনের নিকটবর্তি হওয়ার কারনে। (আদ্দুররুল মুখতার ২/১০২)

وَكَذَا لَوْ عَجَزَ عَنْ الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ وَقَدَرَ عَلَى الْقِيَامِ فَالْمُسْتَحَبُّ أَنْ يُصَلِّيَ قَاعِدًا بِإِيمَاءٍ وَإِنْ صَلَّى قَائِمًا بِإِيمَاءٍ جَازَ عِنْدَنَا

অর্থঃ অনুরুপভাবে কোন (অসুস্থ) ব্যক্তি যদি রুকু সিজদাহ করতে অক্ষম হয় এবং দাড়াতে সক্ষম হয় তবে মুস্তাহাব হল,সে বসে ইশারায় নামায আদায় করবে। আর যদি সে দাড়িয়ে ইশারায় নামায পড়ে তবে আমাদের নিকট তা জায়েয । (ফাতাওয়া হিন্দীয়া ৪/২০৪)

রদ্দুল মুহতার,আলবাহরুর রায়েক,কাযীখান, আল মুহীতুল বুরহানী ও হেদায়াসহ ফিকহে হানাফীর অধিকাংশ কিতাবে মাসআলাটিকে এভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। তারা মাসআলাটির ইল্লাত (কারন) এভাবে বর্ননা করেছেন-
لِأَنَّ رُكْنِيَّةَ الْقِيَامِ لِلتَّوَسُّلِ بِهِ إلَى السَّجْدَةِ لِمَا فِيهَا مِنْ نِهَايَةِ التَّعْظِيمِ ، فَإِذَا كَانَ لَا يَتَعَقَّبُهُ السُّجُودُ لَا يَكُونُ رُكْنًا فَيَتَخَيَّرُ ، وَالْأَفْضَلُ هُوَ الْإِيمَاءُ قَاعِدًا ؛ لِأَنَّهُ أَشْبَهُ بِالسُّجُودِ

অর্থঃ কেননা কিয়াম (নামাযের ) রোকন হয়েছে সিজদার মাধ্যম হওয়ার কারনে। কারন এতে ( দাড়ানো অবস্থা থেকে সিজদায় যাওয়ার মধ্যে) সর্বোচ্চ সন্মান প্রদর্শন হয়। কাজেই যখন দাড়ানোর পরে সিজদাহ পাওয়া যাবে না তখন দাড়ানো রোকন হবে না এবং তাকে এখতিয়ার দেওয়া হবে। আর বসে ইশারায় নামায পড়াই উত্তম। কেননা তা সিজদার সাথে বেশি সাদৃশ্যপূর্ন। (ফাতহুল ক্বাদীর ১/৪৬০)

অর্থাৎ নামাযে দাড়ানোর উদ্দেশ্য হল,মানুষের সবচেয়ে সন্মানী অঙ্গ তথা মাথা সবথেকে উচু অবস্থান অর্থাৎ দাড়ানো খেকে একেবারে নিচু স্থান তথা মাটিতে লাগিয়ে মহান আল্লাহ তাআলার সামনে নিজের হীনতা প্রকাশ করা। কাজেই সে যখন তার সন্মানী অঙ্গ মাটিতে লাগাতে তথা সিজদাহ করতে অক্ষম তখন দাড়ানো তার জন্য আর ফরজ থকবে না। এছাড়াও এমন ব্যক্তির দাড়ানো ফরজ না হওয়ার আরেকটি ইল্লাত(কারন) উল্লেখ করা হয়েছে-

أن السجود أصل وسائر الأركان كالتابع له، ولهذا كان السجود معتبرا بدون القيام كما في سجدة التلاوة، وليس القيام معتبرا بدون السجود بل لم يشرع بدونه، فإذا سقط الأصل سقط التابع ضرورة

অর্থঃ সিজদাহ হল মূল।অন্যান্য সকল রোকন তার অনুগামী।এজন্য কিয়াম ব্যতীত সিজদাহ পাওয়া যায় যেমনটি সিজদায়ে তিলাওয়াত এ হয়ে থাকে। কিন্তু সিজদাহ ব্যতীত কিয়াম ধর্তব্য নয়। বরং সিজদাহ ব্যতীত কিয়াম শরীআত সন্মাত নয়। কাজেই যখন মুল জিনিস (সিজদাহ) বাদ হয়ে গেল, অনুগামিটিও (কিয়াম) অবশ্যই বাদ হয়ে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৭)
অপরদিকে এই মতের বিপরীতে ফিকহে হানাফীতে আরেকটি মত রয়েছে। তা হল,যে ব্যক্তি রুকু,সিজদাহ করতে অক্ষম কিন্তু কিয়াম করতে সক্ষম তার জন্য কিয়াম ফরজ। এমন ব্যক্তির জন্য বসে নামায পড়া জায়েয নয়। আর এটা ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর বিশিষ্ট শাগরেদ ইমাম যুফার (রহঃ) এবং অন্য তিন ইমাম (ইমাম মালেক রহ. ইমাম শফেয়ী রহ. ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. এর মাযহাব)।
وقال زفر والشافعي : لا يجزئه إلا أن يصلي قائما

অর্থঃ ইমাম যুফার ও ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন,দাড়িয়ে নামায পড়া ব্যতীত তার (যে দাড়াতে সক্ষম কিন্তু রুকু সিজদাহ করতে অক্ষম ) জন্য যথেষ্ট (জায়েয) হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪৪)

ফিকহে হাম্বলীর প্রসিদ্ধ কিতাব আল-মুগনীতে রয়েছে-
من قدر على القيام وعجز عن الركوع أو السجود لم يسقط عنه القيام ويصلي قائما فيومئ بالركوع ثم يجلس فيومئ بالسجود

অর্থঃ যে দাড়াতে সক্ষম কিন্তু রুকু অথবা সিজদাহ করতে অক্ষম তার জন্য কিয়াম মাফ হবে না। সে দাড়িয়ে নামায পড়বে। অতঃপর ইশারায় রুকু করবে। এরপর বসে ইশারায় সিজদাহ করবে। (আল মুগনী ১/৭৮২)

ফিকহে মালিকীর অন্যতম কিতাব আল- মুদাওওয়ানাতুল কুবরা তে রয়েছে-

وسألت مالكا عن الرجل يقدر على القيام ولا يقدر على الركوع والسجود كيف يصلي؟ قال: يومئ برأسه قائما للركوع على قدر طاقته ويمد يديه إلى ركبتيه فإن كان يقدر على السجود سجد وإن لم يكن يقدر على السجود ويقدر على الجلوس أومأ للسجود جالسا

অর্থঃ আমি মালেক (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম দাড়াতে সক্ষম এবং রুকু সিজদাহ করতে অক্ষম ব্যক্তির ব্যপারে,সে কিভাবে নামায পড়বে? তিনি বললেন,সে তার সাধ্যমত রুকুর জন্য দাড়িয়ে মাথা দ্বারা ইশারা করবে এবং হাটুর দিকে তার দুই হাত বাড়িয়ে দিবে। যদি সে সিজদাহ করতে সক্ষম হয় সিজদাহ করবে। আর যদি সে সিজদাহ করতে সক্ষম না হয় কিন্তু বসতে সক্ষম হয় তাহলে বসে ইশারায় সিজদাহ করবে। (আল-মুদাওয়ানা তুল কুবরা ১/১৭১-১৭২

এই দ্বিতীয় পক্ষের দলীল হল-
واحتجا بما روينا عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال لعمران بن حصين رضي الله عنه : { فإن لم تستطع فقاعدا } ، علق الجواز قاعدا بشرط العجز عن القيام ، ولا عجز ؛ ولأن القيام ركن فلا يجوز تركه مع القدرة عليه كما لو كان قادرا على القيام والركوع والسجود ، والإيماء حالة القيام مشروع في الجملة بأن كان الرجل في طين وردغة راجلا ، أو في حالة الخوف من العدو وهو راجل ، فإنه يصلي قائما بالإيماء ، كذا ههنا .

অর্থঃ আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যে রেওয়ায়েত করেছি, তা দ্বারা ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম যুফার (রহঃ) দলীল পেশ করেন। তিনি ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) কে বলেছিলেন,যদি তুমি দাড়াতে সক্ষম না হও তাহলে বসে (নামায) পড়বে।এখানে বসে নামায পড়া জায়েয হওয়াকে দাড়াতে আপারগতার শর্তের দ্বারা শর্তযুক্ত করেছেন। অথচ (এক্ষেত্রে) কোন অপারগতা নেই। তাছাড়া (নামাযে) কিয়াম একটি (স্বতন্ত্র) রোকন। কাজেই কিয়ামে সক্ষমতার ক্ষেত্রে তা তরক করা জায়েয হবে না। যেমনটি সে কিয়াম, রুকু ও সিজদায় সক্ষম হলে হত।আর কোন কোন ক্ষেত্রে দাড়িয়ে ইশারা করা শরীআত অনুমোদিত। যেমন কোন লোক কাদা-মাটিতে পায়ে হেটে চলছে অথবা পায়দল চলা অবস্থায় শক্রর পক্ষ থেকে ভয়ের মধ্যে রয়েছে,সে দাড়িয়ে ইশারায় নামায পড়বে। অনুরূপভাবে এখানেও। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪৪)

অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হল,রাসূলুসাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমরান (রাঃ) কে তখনই বসতে অনুমতি দিয়েছেন যখন দাড়াতে অক্ষম হয়। শুধুমাত্র সিজদাহ করতে না পারার করনে কিয়াম মাফ হবে না। কেননা কিয়াম নামাযের একটি স্বতন্ত্র রোকন। যা শুধুমাত্র সিজদার কারনে ফরজ হয়নি।

ফিকহে হানাফীর অনেক মুহাক্কিক ফুকাহায়ে কেরাম উল্লেখিত মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা কিয়ামকে স্বতন্ত্র একটি রোকন গন্য করেছেন। যা সিজদার অপারগতার ক্ষেত্রে মাফ হবে না। আল্লামা ইবনে নুজাইম (রহঃ) বলেন-
يفترض عليه أن يقوم للقراءة فإذا جاء أوان الركوع والسجود أومأ قاعدًا

অর্থঃ কিরাআতের জন্য তার (যে দাড়াতে সক্ষম কিন্তু রুকু, সিজদাতে অক্ষম ) কিয়াম করা ফরজ। অতঃপর যখন রুকু,সিজদার সময় হবে বসে ইশারায় তা আদায় করবে। (আন-নাহরুল ফায়েক ১/৩৩৭)

ফাতহুল ক্বাদীরে মুহাক্কিক ইবনে হুমাম(রহঃ) প্রথম মতের উপর অনেক শক্ত আপত্তি উত্থাপিত করেছেন-
وَقَدْ يَمْنَعُ أَنَّ شَرْعِيَّتَهُ لِهَذَا عَلَى وَجْهِ الْحَصْرِ بَلْ لَهُ وَلِمَا فِيهِ نَفْسِهِ مِنْ التَّعْظِيمِ كَمَا يُشَاهَدُ فِي الشَّاهِدِ مِنْ اعْتِبَارِهِ كَذَلِكَ حَتَّى يُحِبَّهُ أَهْلُ التَّجَبُّرِ لِذَلِكَ ، فَإِذَا فَاتَ أَحَدُ التَّعْظِيمَيْنِ صَارَ مَطْلُوبًا بِمَا فِيهِ نَفْسِهِ .وَيَدُلُّ عَلَى نَفْيِ هَذِهِ الدَّعْوَى أَنَّ مَنْ قَدَرَ عَلَى الْقُعُودِ وَالرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ لَا الْقِيَامِ وَجَبَ الْقُعُودُ مَعَ أَنَّهُ لَيْسَ فِي السُّجُودِ عَقِيبَهُ تِلْكَ النِّهَايَةُ لِعَدَمِ مَسْبُوقِيَّتِهِ بِالْقِيَامِ .

অর্থঃ শুধুমাত্র সিজদার সক্ষমতার ক্ষেত্রে কিয়াম ফরজ হওয়াকে সীমাবদ্ধ করা সঠিক নয়। বরং ( কিয়াম ফরজ হয়েছে) সিজদার জন্য এবং কিয়ামের মধ্যে স্বতন্ত্রভাবে সম্মান প্রর্দশন থাকার জন্য। যেমনটি বাস্তবে দেখা যায়, তা (কিয়াম)ঐরকম ( অর্থাৎ আলাদা সন্মান প্রদর্শন ) মনে করা হয়। এমনকি অহংকারীরা (তাদেরকে) সন্মানের জন্য তা(কিয়াম) পছন্দ করে। কাজেই যখন দুটি সন্মান প্রর্দশনের (কিয়াম ও সিজদাহ) কোন একটি (সিজদাহ) বাদ পড়বে তখন স্বতন্ত্রভাবে যার মধ্যে সন্মান প্রদর্শন রয়েছে তা জরুরী হবে। এই দাবীর বিপরীতে (এই মাসআলাটি ) নির্দেশনা দেয়,যে ব্যক্তি বসতে ও রুকু করতে সক্ষম কিয়াম করতে নয়,তার জন্য বসা ওয়াজিব। অথচ সিজদাহ চুড়ান্ত পর্যায়ের সন্মান প্রদর্শনের পরে হচ্ছে না। কেননা তা (সিজদাহ )কিয়ামের পরে পতিত হচ্ছে না। (ফাতহুল ক্বাদীর ১/৪৬০)

হাশিয়ায়ে ত্বাহত্বাবীতে ও উক্ত মতটিকে উল্লেখ করে সমর্থন করা হয়েছে। (হাশিয়ায়ে ত্বাহত্বারী পৃ: ২৫২)

দালীলিক বিচারে দ্বিতীয় মতটিকে শক্তিশালী মনে হয়। কেননা এই মতটি আল্লাহ তাআলার বানী ‘‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে (নামাযে ) বিনীতভাবে দণ্ডায়মান হও”(সূরা বাকারাহ,২৩৮)এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস “তুমি দাড়িয়ে নামায আদায় করবে,তাতে সক্ষম না হলে বসে”(বুখারী শরীফ হাদীস নং-১১১৭)এর বেশি নিকটবর্তী। হাদীসে কিয়ামে অক্ষমতার ক্ষেত্রেই কেবল বসার কথা বলা হয়েছে ।সুতরাং কিয়ামে সক্ষম হলে শুধুমাত্র সিজদাহ করতে না পারাই বসে নামায জায়েয হওয়ার কারন হতে পারে না। তাছাড়া কিয়াম নামাযের অন্যান্য রোকন সমূহের মত একটি স্বতন্ত্র রোকন। যা অন্য রোকনে অক্ষমতার দরুন মাফ হতে পারে না। বিশেষভাবে এমন একটি রোকন যা ষ্পষ্টভাবে আয়াতে কুরআনী দ্বারা প্রমানীত।
আল্লামা ইবনে কুদামাহ (রহ) বলেন-
ولأن القيام ركن قدر عليه فلزمه الإتيان به كالقراءة والعجز عن غيره لا يقتضي سقوطه كما لو عجز عن القراءة
অর্থঃ তাছাড়া সক্ষম ব্যক্তির জন্য কিয়াম একটি রোকন। সুতরাং কিরাআতের মত তা ( কিয়াম) আদায় করা জরুরী। অন্য কিছুতে অপারগ হওয়া (যেমন সিজদাহ ) তা (কিয়াম) মাফ হওয়ার দাবী করে না। যেমনটি কেউ কিরাআতে অক্ষম হলে হয় ( সেক্ষেত্রে তার জন্য কিয়াম মাফ হয় না)।(আল মুগনী-১/৪৪৪)

কিয়াম নামাযে এত গুরুত্বপূর্ন একটি রোকন যে,কেউ যদি একেবারে সামান্য সময়ের জন্য কিয়ামে সক্ষম হয় তবে ততটুকু পরিমান কিয়াম করা জরুরী।

وإن قدر على بعض القيام ولو متكئا على عصا أو حائط قام لزوما بقدر ما يقدر ولو قدر آية أو تكبيرة على المذهب
و قال العلامة ابن عابدين تحته: لو قدر على بعض القيام دون تمامه ، أو كان يقدر على القيام لبعض القراءة دون تمامها يؤمر بأن يكبر قائما ويقرأ ما قدر عليه ثم يقعد إن عجز وهو المذهب الصحيح لا يروى خلافه عن أصحابنا ؛ ولو ترك هذا خفت أن لا تجوز صلاته وفي شرح القاضي : فإن عجز عن القيام مستويا قالوا يقوم متكئا لا يجزيه إلا ذلك.
অর্থঃ যদি সে কিছুক্ষন দাড়াতে সক্ষম হয়,যদিও বা লাঠি বা দেয়ালে ভর করে হোক তবে (সহীহ) মাযহাব অনুযায়ী যতটুক পরিমান দাড়াতে সক্ষম ততটুকু অবশ্যই দাড়াবে।যদিও এক আয়াত পরিমান বা তাকবীরে তাহরীমা পরিমান হোক।

আল্লামা ইবনে আবেদীন (রহঃ) উক্ত ইবারতের টীকায় উল্লেখ করেন, যদি কিছুক্ষন দাড়াতে সক্ষম হয় পূরো সময় নয় অথবা তিলাওয়াতের কিছু সময়ে দাড়াতে সক্ষম হয় পূরো সময় নয় তবে তাকে আদেশ করা হবে,সে যেন দাড়িয়ে তাকবীর বলে এবং যতটুকু পরিমানে সক্ষম (দাড়িয়ে) তিলাওয়াত করে। অতঃপর সে (দাড়াতে ) অক্ষম হলে বসে পড়বে। আর এটাই সহীহ মাযহাব। আমাদের উলামা থেকে এর বিপরীত কিছু বর্নিত নেই। যদি এটা (সক্ষমতা পরিমান দাড়ানো )কেউ ছেড়ে দেয়,আমি আশংকা করি তার নামায সহীহ হবে না।

কাযীর ব্যাখ্যাগ্রন্থে রয়েছে,যদি সোজা হয়ে দাড়াতে অক্ষম হয় তবে উলামায়ে কেরাম বলেছেন হেলান দিয়ে দাড়াবে। এটা (হেলান দিয়ে দাড়ানো) ছাড়া অন্য কিছু তার জন্য যথেষ্ট হবে না। (আদ্দুররুল মুখতারের সাথে রদ্দুল মুহতার ২/৫৬৭)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে,কোন ব্যক্তি যতটুকু দাড়াতে সক্ষম ততটুকু তার জন্য দাড়ানো জরুরী। যদি প্রথম রাকাআত দাড়াতে সক্ষম হয় এরপর বসা থেকে দ্বিতীয় রাকাআতের জন্য উঠতে না পারে তবে প্রথম রাকাআত দাড়িয়েই পড়তে হবে। এমনকি যদি শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় দাড়াতে সক্ষম হয় তবে রদ্দুল মুহতারের ইবারত দ্বারা বুঝা যায় ততটুকু তার জন্য দাড়ানো জরুরী।

و قال العبد الضعيف عفا الله عنه ان في التعليل بحصر ركنية القيام للسجود فيه نظر لما في نفسه من التعظيم.و ايضا النص القطعي و هو قوله تعالي “وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ” و قول النبي صلي الله عليه و سلم لعمران “صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا” لا يعارضه الدليل الظني الذي هو التعليل المذكور و قال الامام احمد بن حنبل “ان ضعيف الحديث احب الي من راي الرجال.(تدريب الراوي 2/113) و قد علل هذه المسئلة صاحب البدائع بوجه اخر حيث قال :أن الغالب أن من عجز عن الركوع والسجود كان عن القيام أعجز ؛ لأن الانتقال من القعود إلى القيام أشق من الانتقال من القيام إلى الركوع ، والغالب ملحق بالمتيقن في الأحكام ، فصار كأنه عجز عن الأمرين ، إلا أنه متى صلى قائما جاز ؛ لأنه تكلف فعلا ليس عليه ، فصار كما لو تكلف الركوع جاز وإن لم يكن عليه كذا ههنا.الي ان قال : وأما الحديث فنحن نقول بموجبه : إن العجز شرط لكنه موجود ههنا نظرا إلى الغالب ، لما ذكرنا أن الغالب هو العجز في هذه الحالة ، والقدرة في غاية الندرة ، والنادر ملحق بالعدم انتهي.
و تعليل المسئلة بذلك اولي و اوفق مما عللها به الجمهور من علمائنا و لكن التمسك بالنصوص اولي و لا يقل مذهب زفر عن ان يكون الاحتياط في اخذه.لان حديث عمران مؤيد صريح له.

উপমহাদেশের অন্যতম মুহাক্কিক আল্লামা যুফার আহমাদ উছমানী (রহঃ) এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর বলেন-
و الاحوط عندي ما ذكره في النهر من وجوب القيام عليه للقراءة,و انما الخلاف في وجوب القيام للايماء بالركوع و السجود, فالافضل عندنا الايماء بهما قاعدا, و لا يجب القيام للايماء بواحد منهما وعند الشافعية و من وافقهم يؤمي للركوع قائما و للسجود قاعدا كما مر, هذا و ان تفرد صاحب “النهر” بذكره و لم يوافقه عليه احد من ناقلي المذهب, ولكنه قوي من حيث الدليل, فان ظاهر حديث عمران مؤيد له كما لا يخفي.

অর্থঃ নাহারে (আন-নাহরুল ফায়েক) যা (তার মুসান্নেফ ) উল্লেখ করেছেন আমার নিকট তার মধ্যেই সতর্কতা রয়েছে। অর্থাৎ কিরাআতের জন্য তার উপর কিয়াম ফরজ হবে। আর মতবিরোধ তো ইশারায় রুকু সিজদার জন্য দাড়ানো ওয়াজিব হওয়ার মধ্যে রয়েছে। আমাদের নিকট উত্তম হল উভয়টি বসে ইশারায় আদায় করা। এর কোন একটি ইশারায় আদায়ের জন্য কিয়াম ওয়াজিব হবে না। শাফেয়ীদের এবং তাদের যারা অনুসরন করে,তাদের নিকট রুকুর জন্য দাড়িয়ে ইশারা করবে এবং সিজদার জন্য বসে যেমনটি পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে। এটা (উল্লেখিত ব্যক্তির জন্য কিয়াম ফরজ হওয়া ) যদিও নাহার এর মুসান্নিফ এককভাবে আলোচনা করেছেন এবং মাযহাব বর্ননাকারীদের অন্য কেউ তার অনুকরন করেননি তবে দলীলের দিক দিয়ে তা শক্তিশালী। এছাড়া ইমরান (রাঃ) এর হদীসের বাহ্যিক দিক নিঃসন্দেহ উল্লেখিত মতটিকে শক্তিশলী করে। (এলউস সুনান ৭/২০৩)

সারকথা,যে ব্যক্তি কিয়াম করতে সক্ষম কিন্তু রুকু সিজদাহ বা শুধু সিজদাহ করতে অক্ষম সে দাড়িয়ে নামায পড়বে। শধূমাত্র সিজদাহ করতে অক্ষম হওয়ার কারনে সে কিয়াম এর রুখছত (ছাড়) পাবে না। অতঃপর সে বসে ইশারায় রুকু সিজদা আদায় করবে। এই মতটিকে গ্রহন করার মধ্যে অন্তত অধিক সতর্কতা কয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই।

তবে কেউ যদি ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ মতের উপরে আমল করে তথা বসে নামায পড়ে তাহলে তার নামায সহীহ হয়নি একথা বলা যাবে না। কেননা সে মুজতাহিদ এর মতের উপর আমল করেছে। বরং কিয়াম না করাটাই আমাদের মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত। যদিও দলীলের বিচারে কিয়াম জরুরী হওয়ার মতটিই শক্তিশালী।

এখন প্রশ্ন হল,যে ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায পড়তে পারে না সে তো বসেই নামায পড়বে। কিন্তু বসার নির্দিষ্ট কোন ধরন আছে নাকি সে যে কোন ভাবেই বসতে পারবে?

এর জবাব হল, উল্লেখিত ব্যক্তি তার সুবিধামত যে কোন সূরতে বসতে পারবে।তার জন্য কোন খাস সূরতে বসা জরুরী নয়। তবে উভয় বৈঠকে সুস্থ ব্যক্তির বৈঠকে বসার ন্যায় বসবে। অর্থাৎ বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসবে এবং ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো খাড়া করে রাখবে। আর যদি এটাও না পারে তবে বৈঠকেও তার সুবিধামত বসবে।

إذَا صَلَّى الْمَرِيضُ قَاعِدًا كَيْفَ يَقْعُدُ الْأَصَحُّ أَنْ يَقْعُدَ كَيْفَ يَتَيَسَّرُ عَلَيْهِ

অর্থঃ যখন অসুস্থ ব্যক্তি বসে নামায পড়বে,কিভাবে বসবে? বিশুদ্ধমত হল তার যেভাবে (বসলে) সহজ হয় সেভাবে বসবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২০২)

ثم إذا صلى المريض قاعدا بركوع وسجود أو بإيماء كيف يقعد أما في حال التشهد فإنه يجلس كما يجلس للتشهد بالإجماع وأما في حالة القراءة وحال الركوع روي عن أبي حنيفة أنه يجلس كيف شاء من غير كراهة …………….والصحيح ما روي عن أبي حنيفة لأن عذر المرض أسقط عنه الأركان فلأن يسقط عنه الهيئات أولى.

অর্থ: অসুস্থ ব্যক্তি যখন বসে রুকু সিজদা অথবা ইশারা করবে, সে কিভাবে বসবে? তাশাহহুদের সময় সর্বসম্মতিক্রমে সে তাশাহহুদের ন্যয় বসবে।আর কিরাআত ও রুকুর সময় আবু হানিফা(রহঃ) থেকে বর্নিত আছে সে কোন কারাহাত ব্যতিত তার ইচ্ছামত বসবে। ……….আবু হানীফা (রহঃ) থেকে যা বর্নিত আছে তা-ই সহীহ। কেননা রোগের ওযর তার থেকে রোকনই (কিয়াম) মাফ করে দিয়েছে কাজেই (বসার)ধরন উত্তমভাবে মাফ হবে। (আল-বাহরুর রায়েক ৫/১৫)

চেয়ারে বসে নামায প্রসঙ্গঃ

এখন প্রশ্ন হল, কেউ চেয়ারে বসে নামায আদায় করতে পারবে কি না?

এর জবাব হল,যে ব্যক্তি দাড়াতে ও রুকু সিজদাহ করতে সক্ষম সে চেয়ারে বসে নামায ইদায় করলে তা সহীহ হবে না। যে দাড়াতে ও জমিনে বসতে সক্ষম কিন্তু সিজদাহ করতে অক্ষম সে দাড়িয়ে নামায আদায় করবে। শুধু সিজদাহ বসে ইশারায় করবে। আর যে বক্তি দাড়াতে সক্ষম কিন্তু নিচে বসতে সক্ষম নয় সে দাড়িয়ে নামায পড়বে তবে রুকু,সিজদাহ ও বৈঠকের সময় চেয়ারে বসবে। এবং ইশারায় রুকু ও সিজদাহ করবে। যে ব্যক্তি দাড়াতে ও বসতে কোনটতেই সক্ষম নয় সে পূরো নামায চেয়ারে বসে ইশারায় আদায় করতে পরবে। উপরের মাসআলাগুলো দলীলসহ আলোচনা পূর্বে অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।

এখানে একটি প্রসিদ্ধ আপত্তি রয়েছে। তা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানাসহ খায়রুল কুরূনে রোগও ছিল চেয়ারও ছিল। কিন্তু ঐ তিন যুগে চেয়ারে বসে নামাযের কোন নযীর নেই। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবনের শেষ দিকে বেশ কিছু দিন অসুস্থ ছিলেন। তিনি তখন জমিনে বসে নামায পড়েছেন চেয়ারে নয়। কাজেই চেয়রে বসে নামায পড়া নাজায়েয ও বিদআত। যদি এটা জায়েয হত তবে সাহাবায়ে কেরাম বা খাইরুল কুরূনের কেউ অবশ্যই চেয়ারে বসে নামায পড়তেন।

আপত্তিটির জবাব বুঝতে হলে একটু লম্বা আলোচনা দরকার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়াতে অক্ষম ব্যক্তির জন্য বসে নামায পড়তে বলেছেন। তিনি ইমরান (রা) কে বলেছেন “যদি তুমি (দাড়াতে) সক্ষম না হও তবে বসে (নামায পড়বে)”

এখানে হাদীসে দাড়াতে অক্ষম ব্যক্তির জন্য قعود(বসা) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর তা সম্পূর্ন শর্তমূক্ত। নির্দিষ্ট কোন ধরনকে খাস করা হয়নি বা নির্দিষ্ট কোন ধরনকে বাদও দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ জমিনের উপর বসতেই হবে বা এমনভাবে বসা যাবে বা এমনভাবে বসা যাবে না কোনটিই বলা হয়নি। বরং শব্দটিকে মুতলাক (শর্তমুক্ত ) রাখা হয়েছে। যা সর্ব প্রকার বসাকে শামিল করে।অর্থাৎ যে সকল সূরতের উপর “বসা” শব্দ প্রয়োগ হয় তার সবগুলোই এখানে প্রযোজ্য হবে।

তাছাড়া আরবী ভাষায় قعود শব্দের জন্য জমিনের জপর বসা জরুরী নয়। আহলে আরব কিয়ামের বিপরীতে قعود শব্দ ব্যবহার করে থাকে। আল্লামা আবুল হুসাইন আহমাদ ইবনে ফারেস (রহ) বলেন-
إذا كان قائماً كانت الحال التي تخالفها القُعود

অর্থঃ যখন কেউ দণ্ডায়মান হয়,সেটাই قعود (বসা) এর বিপরীত অবস্থা হয়। (মু’জামু মাক্বয়ীসিল লুগাত ১/৪৭৩)

লিসানুল আরবে রয়েছে-
القعود نقيض القيتم
অর্থঃ কিয়ামের বিপরীত অবস্থাকেই قعود (বসা) বলে। -লিসাসুল আরব ৩/৩৫৭
অর্থাৎ শাব্দিক অর্থে قعود শব্দের মধ্যে জমিনে বসার কোন অর্থ নেই। বরং দাড়ানোর বিপরীতে অবস্থাকেই قعود বলে।চাই জমিনে বসা হোক বা চেয়ারে বা অন্য কোন কিছুতে।

এছাড়াও আহলে আরব চেয়ারের উপর বসাকে قعود শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করে থাকে। বিভিন্ন হাদীসে চেয়ারে বসার জন্য قعود শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সুনানে আবু দাউদ ও নাসঈ শরীফের একটি রেওয়ায়েতে রয়েছে-

عن عَبْدَ خَيْرٍ قَالَ رَأَيْتُ عَلِيًّا – رضى الله عنه – أُتِىَ بِكُرْسِىٍّ فَقَعَدَ عَلَيْهِ

অর্থঃ আবদে খাইর (রহঃ) থেকে বর্নিত তিন বলেন, আমি আলী (রা) কে দেখেছি,(তার জন্য) একটি চেয়ার আনা হয়েছে। অতঃপর তিনি তার উপর বসেছেন। (সুনানে আবু দাউদ হা:১১৩ ,নাসাঈ শরীফ হা: ৯৩)

عن أَبي رِفَاعَةَ………….. فَأُتِيَ بِكُرْسِيٍّ خِلْتُ قَوَائِمَهُ حَدِيدًا فَقَعَدَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ……

অর্থঃ হযরত আবু রিফাআহ (রাঃ) থেকে বর্নিত……………. অতঃপর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য) একটি চেয়ার আনা হল। তিনি বলেন, আমি ধরনা করি তার পায়াগুলো লোহার ছিল। অতঃপর তিনি তার উপর বসলেন। (নাসাঈ শরীফ হা:৫৩৯২)

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرَةَ عَنْ أَبِيهِ ذَكَرَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَعَدَ عَلَى بَعِيرِهِ
অর্থঃ হযরত আবু বাকরাহ (রা) থেকে বর্নিত,তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উটের উপর বসলেন। -বুখারী শরীফ হা:৬৭
عَنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ قَيْسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَعَدَ عَلَى الْمِنْبَرِ

অর্থঃ ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপরে বসলেন। (মুসলিম শরীফ,হা: ৭৫৭৬)

উপরে উল্লেখিত প্রত্যেকটি হাদীসে “বসা” শব্দের জন্য قعود ব্যবহার করা হয়েছে। যার কোনটি জমিনে বসার অর্থে ব্যবহার হয়নি। বরং কোনটি মিম্বরের উপর,কোনটি ছাওয়ারীর উপর,কোনটি চেয়ারের উপর বসার জন্য বাবহারিত হয়েছে। কাজেই ইমরান (রাঃ) এর রেওয়ায়েতে فقاعدا (বসে পড়বে) শব্দকে জমিনে বসার মথ্যে সীমাবদ্ধ করা ঠিক নয়। বরং চেয়ারে বসার উপরেও শব্দটি প্রযোজ্য হবে।

তাছাড়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাওয়ারীতে বসেও নামায আদায় করতেন।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يُصَلِّى عَلَى رَاحِلَتِهِ حَيْثُ تَوَجَّهَتْ بِهِ.

অর্থঃ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ছাওয়ারীর উপর আরোহীত অবস্থায় ছাওয়ারীর দিকে ফিরে নামায পড়তেন। -সহীহ মুসলিম,হা: ১৬৪৫

كَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يُصَلِّي عَلَى رَاحِلَتِهِ وَيُوتِرُ عَلَيْهَا وَيُخْبِرُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُهُ

অর্থঃ ইবনে উমর (রাঃ)তার ছাওয়ারীর উপর নামায পড়তেন এবং তার উপর বেতর পড়তেন। আর তিনি বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন করতেন। (সহীহ বুখারী হাঃ১০৯৫)

ছাওয়ারীতে বসে নামায পড়ার সাথে চেয়ারে বসে নামায পড়ার যথেষ্ট মিল রয়েছে। সুতরাং খায়রুল কুরুনে এর কোন নযীর ছিল না একথা বলাও ঠিক নয়।

যাই হোক, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমিনে না বসে তথা ছাওয়ারীতে বসে নামায আদায় করেছেন। পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, দাড়াতে অক্ষম ব্যক্তি যখন বসে নামায আদায় করবে এবং তাশাহহুদের ন্যয় বসতে পারবে না সে তার সুবিধামত সূরতে বসবে । কোন খাস সূরতে তার জন্য বসা জরুরী নয়। হাফেজ ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন-
لم يبين كيفية القعود فيؤخذ من إطلاقه جوازه على أي صفة شاء المصلى

অর্থঃ বসার ধরন বর্ননা করেনি। কাজেই নিঃশর্তভাবে উল্লেখ করা থেকে মুছল্লীর জন্য তার ইচ্ছামত বসা জায়েয হওয়া গ্রহন করা হবে। (ফাতহুল বারী ২/৫৮৬ )

সুতারাং চেয়ারে বসাও যেহেতু এক প্রকার বসা তাই তাও বসে নামায পড়ার মধ্যে শামিল থাকবে। তাছাড়া বসা বলা হয় মানুষের শরীরের উপরের অর্ধেক সোজা হওয়াকে। দাড়িয়ে ও বসে নামায পড়ার মধ্যে পার্থক্য হল,দাড়িয়ে নামায পড়ার সময় নিচের অংশ ও উপরের অংশ উভয়টিই সোজা থাকাবে। আর বসে নামায পড়ার ক্ষেত্রে শুধু উপরের অংশ সোজা থাকাই যথেষ্ট। নিচের অংশ মুসল্লী তার সুবিধা অনুযায়ী যে কোন ভাবে রাখতে পারে। আল মুহিতুল বুরহানীতে এই পার্থক্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

والقيام المطلق إنما يكون باستواء الشق الأعلى والأسفل والشق الأعلى أصل؛ لأن الآدمي لا يعيش إلا به والشق الأسفل تبع؛ لأنه يعيش بدونه……….. فأما صلاة التطوع شرعت عند قيام النصف الأعلى، فإذا صلى قاعداً فقد صلى،

অর্থঃ পরিপূর্ন কিয়াম হয় (শরীরের) নিচের অংশ ও উপরের অংশ সোজা হওয়ার দ্বারা। উপরের অংশই হল মূল। কেননা মানুষ তা ছাড়া বাঁচতে পারে না। আর নিচের অংশ হল অনুগামী। কেননা (মানুষ ) তা ছাড়াও বেঁচে থাকে।…………….. আর নফল নামায উপরের অর্ধেক সোজা থাকা অবস্থায় শরিয়াত সম্মত করা হয়েছে। কাজেই কেউ যখন বসে নামায পড়ল,(কেমন যেন ) সে পরিপূর্ন নামায পড়ল।(আল-মুহীতুল বুরহানী ১/৪২১)

উপরের ইবারত দ্বারা বুঝা গেল, বসে নামায পড়ার বস্তবতা হল উপরের অংশ সোজা থাকবে নিচের অংশ নয়। আর তা জমিনে বসে নামায পড়া , ছাওয়ারীতে বসে নামায পড়া এবং চেয়ারে বসে নামায পড়া সর্ব প্রকারের উপর পরিপূর্নভাবে প্রযোজ্য হয়।

আর রাইল, রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও চেয়ার ব্যবহার করেননি। এটা চেয়ারে বসে নামায নিষদ্ধ হওয়ার দলীল হতে পারে না। কেননা কোন জিনিস কখনও না করা তা নিষদ্ধ হওয়ার দলীল নয়। কত জিনিসই তো রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারেননি অথচ তা মুবা্হ‌ তাছাড়া রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক কোন কিছুকে ব্যপকভাবে বর্ননা করার পর নির্দিষ্ট কোন সূরতকে এখতিয়ার করা দ্বারা অন্যান্য সূরতগুলো নিষিদ্ধ হয় না। সুতরাং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মুতলাকভাবে (ব্যপকভাবে) বসে নামায পড়ার অনুমতি দেওয়ার পর নিজে সর্বদা নিচে বসে নামায পড়ার দ্বারা চেয়ারে বসে নামায পড়া নিষিদ্ধ হবে না। বরং কেন কিছু নিষিদ্ধ হওয়ার জন্য শরয়ী দলীল প্রয়োজন। আর তা এখনে অনুপস্থিত।

আর রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম নিচে বসে নামায পড়তেন কেননা তারা এতে অভ্যস্ত ছিলেন। তারা বেশি ছাওয়াবের আশায় নামাযে অতিরিক্ত কষ্ট সহ্য করার মধ্যে স্বস্তি অনুভব করতেন। যেমন আবু দাউদের একটি রেওয়ায়েতে রয়েছে রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাল (রাঃ) কে বলেছিলেন-

يا بلال اقم الصلوة ارحنا بها
অর্থঃ হে বেলাল! নামাযের ইকামত দাও ,নামায(সম্পন্ন হওয়ার) দ্বারা আমাদের প্রশান্তি দান কর। )সুনানে আবু দাউদ হা: ৪৯৮৫(

অর্থাৎ নামায দ্বারা তারা প্রশান্তি লাভ করতেন,নামায থেকে নয়। তারা চেয়ারে বসে এজন্য নামায পড়েননি যে ,চেয়ারে বসে নামায পড়লে তা সহীহ হবে না। বরং তারা নামাযে তাদের গোলামিত্ব পরিপূর্ন মাত্রায় প্রকাশ করতেন। কেননা নামাযের হেকমত হল বান্দা বিনয়াবনত হয়ে পরিপূর্ন মাত্রায় গোলামীত্ব প্রকাশ করবে। আর তা চেয়ারে বসার চেয়ে জমিনে বসলে পরিপূর্ন মাত্রায় প্রকাশ পায়।

সারকথা ইমরান (রাঃ) হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয়,যে ব্যক্তি দাঁড়াতে অক্ষম সে বসে নামায পড়বে। এখানে বসার নির্দিষ্ট কোন ধরনকে খাস করা হয়নি এবং বাদও দেওয়া হয়নি। কাজেই চেয়ারে বসে নামায পড়া বৈধ হবে। উক্ত ব্যপকতাকে নির্দিষ্ট কোন সূরতে সিমাবদ্ধ করা যাবে না। যেমন রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাওয়ারীতে যেভাবে বসে নফল নামায আদায় করেছেন সে ভাবেই বসা জরুরী কেউ বলেন না। বরং মুসল্লি তার সুবিধা অনুযায়ী যে কোন ভাবে ছাওয়ারিতে বসলেই নামায আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে শরীরের উপরের অর্ধেক সোজা থাকা শর্ত।

উপরে উল্লেখিত আলোচনা থেকে নিন্মলিখিত বিষয়গুলো জানা গেল
(১) যে ব্যক্তি দাড়াতে ও রুকু-সিজদা করতে সক্ষম সে জমিনে বা চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে তার নামায হবে না। বরং সে দাড়িয়ে যথা নিয়মে রুকু- সিজদার দারা নামায আদায় করবে।
(২) যে ব্যক্তি আরামের জন্য বা সাধারন কষ্টের বাহানায় চেয়ারে বসে নামায পড়ে তার নামায সহীহ হবে না।
(৩) যে ব্যক্তি দাড়াতে ও বসতে সক্ষম কিন্তু রুকু-সিজদাহ করতে অক্ষম তার জন্য দাড়িয়ে কিরাত পড়া জরুরী। অতঃপর সে জমিনে বসে ইশারায় রুকু-সিজদাহ আদায় করবে। এমন ব্যক্তি যদি চেয়ারে বসে ইশারায় রুকু- সিজদাহ আদায় করে তবে তা মাকরূহে তানযীহী বা অনুত্তম।
(৪) যে ব্যক্তি দাড়াতে অক্ষম কিন্তু নিচে বসতে ও সিজদাহ করতে সক্ষম এমন ব্যক্তি চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা করলে তার নামায বাতিল গন্য হবে। তার জন্য নিচে বসে জমিনের উপর সিজদাহ করা জরুরী।
(৫) যে ব্যক্তি দাড়াতে সক্ষম কিন্তু নিচে বসতে অক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য দাড়িয়ে কিরাআত পড়া জরুরী। অতঃপর সে চেয়ারে বসে ইশারায় রুকু- সিজদাহ করবে।
(৬) যে ব্যক্তি দাড়াতে ও নিচে বসতে অক্ষম এমন ব্যক্তি পূরো নামায চেয়ারে বসে ইশারায় রুকু-সিজদাহ করবে।
(৭) যে ব্যক্তি দাড়াতে ও রুকু-সিজদাহ করতে অক্ষম কিন্তু নিচে বসতে সক্ষম এমন ব্যক্তি নিচে বসে ইশারার দ্বারা নামায আদায় করবে। যদি সে চেয়ারে বসে ইশারায় নামায আদায় করে তবে তা অনুত্তম বা মাকরূহে তানযীহী।

বর্তমানে চেয়ারে বসে নামায একটি অভ্যাস ও ফ্যাশনে পরিনত হয়ে গিয়েছে। যা পরিহার করা অত্যন্ত জরুরী। এটাকে শুধু মাত্র ঐ ব্যক্তির জন্যই সীমাবদ্ধ করা উচিত যিনি নিচে বসতে অক্ষম। এবং জরুরতকে তার সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখা উচিত। নিচে বসার সক্ষমতা থাকা সত্তেও চেয়ারে বসে নামায আদায় করার মধ্যে আল্লামা ত্বাকী উসমানী সাহেব (দাঃ বাঃ) অনেক গুলো আপত্তিকর দিক তুলে ধরেছেন-

১. মাযুর ব্যক্তিদের জন্য জমিনে বসে নামায আদায় করাই উত্তম ও মাসনূন তরীকা। এর উপরই সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম এবং পরবর্তীদের আমল চলে আসছে। চেয়ারে বসে নামায আদায় করার রেওয়াজ কেবল শুরু হয়েছে। খায়রুল কুরূনে এর নযীর নেই। অথচ সে যুগে মাযুরও ছিল চেয়ারও ছিল।

২. যে ব্যক্তি শরীয়তের দৃষ্টিতে মাযুর নয়, অর্থাৎ কিয়াম, রুকু সিজদা করতে সক্ষম, তার জন্য জমিনে বাচেয়ারে বসে ফরয এবং ওয়াজিব নামায আদায় করাই জায়েয নেই। অথচ কখনো কখনো দেখা যায় এধরণের সুস্থ ব্যক্তিও সামনে চেয়ার পেয়ে চেয়ারে বসে নামায আদায় করে নেয়। ফলে তার নামাযই হয় না।

৩. চেয়ারের ব্যবহারের কারণে কাতার সোজা করা ও সোজা রাখার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। অথচমিলে মিলে দাড়ানো ও কাতার সোজা করার বিষয়ে হাদীস শরীফে জোর তাকীদ এসেছে।

৪. বিনা প্রয়োজনে মসজিদে চেয়ারের অধিক্যের কারণে তা
নাসারাদের গির্জা ও ইহুদীদের উপাসনালয়ের সাদৃশ দেখা যায়। তারা গির্জায় চেয়ার ও বেঞ্চে বসে উপাসনা করে। আর দ্বীনী বিষয়ে ইহুদী নাসারা ও অন্যান্য জাতির সাদৃশ্য থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

৫. নামায তো এমন ইবাদত যা আদায় করতে হয় বিনয়াবনত হয়ে বিগলিতচিত্তে। আর চেয়ারে বসে নামাযআদায় করার চেয়ে জমিনে বসে নামায আদায়ের মাঝে তা পূর্ণমাত্রায় পাওয়া যায়।

৬. কোন কোন যুবক ও সুস্থ ব্যক্তি নামাযের পর মসজিদে রাখা চেয়ারে বসে আরাম করে। কখনো কখনোচেয়ার নিয়ে গোল হয়ে বসে আলাপচারিতায় লিপ্ত হয়। এটা মসজিদের পবিত্রতা, মার্যাদা ও আদবের খেলাফ।

৭. মসজিদে চেয়ারের ব্যবহারের কারণে কোন কোন ছুরতে কুরআনে কারীম এবং মুরববী নামাযীদের আদবও এহতেরামের ব্যত্যয় ঘটে।’’
এরপর তিনি বলেন-
“এ জন্যই ইশারায় নামায আদায় করার জন্যও যথাসম্ভব চেয়ারের ব্যবহার না করা চাই। চেয়ারব্যবহারের প্রতি নিরুৎসাহিত করা চায় এবং এর ব্যবহার কেবলমাত্র ঐ সকল ব্যক্তির মাঝে সিমাবদ্ধ করাউচিত, যারা জমিনে বসে নামায আদায় করতে সক্ষম নয়”

বিবিধ মাসায়েলঃ

মাসআলাঃ চেয়ারের পেছনের পায়া দ্বারা কাতার সোজা করবে সামনের পায়া দারা নয়।এবং চেয়ারে উপবিষ্ট মুসল্লী অন্যদের কাধের সাথেতার কাধ মিলিয়ে কাতার সোজা করবে।

মাসআলাঃ ইশারায় সিজাদার সময় সামনে কোন টেবিল, বালিশ বা অন্য কিছু রেখে তাতে সিজদা করবে না। বরং শুধু ইশারাই করবে।
عن جابر بن عبد الله رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه و سلم عاد مريضا فرآه يصلي على وسادة فأخذها فرمى بها فأخذ عودا ليصلي عليه فأخذه فرمى به وقال صل على الأرض إن استطعت وإلا فأوم إيماء واجعل سجودك أخفض من ركوعك
অর্থঃ জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন রোগী দেখতে গেলেন। তিনি তাকে একটি বালিশের উপর সিজদা করতে দেখলেন। তিনি তা (বালিশ) নিয়ে সরিয়ে রাখলেন। অতঃপর লোকটি একটি কাঠের টুকরা নিল তার উপর সিজদার জন্য। রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিয়ে নিক্ষেপ করলেন। এবং তিনি বললেন,তুমি সক্ষম হলে জমিনের উপর সিজদাহ করবে অন্যথায় ইশারাহ করবে।এবং তোমার সিজদাহ রুকু থেকে বেশি ঝুকিয়ে করবে। (সুনানে বাইহাক্বী হা: ৩৪৮৪)
মাসআলাঃ ইশারায় রুকু সিজদার সময় সিজদাতে রুকুর চেয়ে বেশি ঝুকবে। (সুনানে বাইহাক্বী হা: ৩৪৮৪)
و الله تعالي اعلم و علمه اتم و احكم.

Loading