প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। আমার ৩টি প্রশ্ন রয়েছে। নিম্নে এগুলো দেয়া হলো- ১। দুনিয়াবী পড়াশুনা করার উদ্দেশ্যে (যেমন- ইঞ্জিনিয়ারিং) কাফিরদের দেশে (আমেরিকা, কানাডা ইত্যাদি) পড়তে যাবার এবং সেখানে আমৃত্যু বসবাস করার ইচ্ছাকে (আর্থিক সচ্ছলতার জন্যে) ইসলাম কি চোখে দেখে? যদি বসবাসকারীরা পূর্ণ ইসলাম সচেতন অ্যান্ড পূর্ণ ইবাদাত পালনকারী এবং কুরআন সুন্নাহ এর আলোকে জীবন কাটানর ইচ্ছা থাকে তাহলে? তাদের বাচ্চা-কাচ্চা না, তাদের নাতি নাতনী যদি পথভ্রস্ট হয়ে থাকে ঐ দেশের কালচার এর কারণে অথবা এম্নিতেই তাহলেও কি তার গুনাহ হিযরত পালনকারীদের হবে? উল্লেখ্য বাচ্চাদের পূর্ণ আলেম বানানোর ইচ্ছা থাক্লেও পরবর্তী জেনারেশন খারাপ হয়ে যেতে পারে (বাংলাদেশেও এটি ঘটতে পারে অথবা সৌদি আরবে)। ২। একই সাথে কয়েক জায়গায় আযান দিলে কিভাবে আযানের জবাব দিতে হবে? ৩। বর্তমানে সকল বাসা বাড়িতেই গোসলখানা+পায়খানা একসাথে। কোনো কারণে এ আমরা যদি বাথরুমে (গোসলখানায় কাজ) ঢুকি(পায়খানা /পেশাবের উদ্দেশ্যে নয়) তাহলেও কি প্রতিবার বাথরুমের দোয়া পড়তে হবে? ধন্যবাদ

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম

কোন ব্যক্তির বিধর্মীদের দেশে স্থায়ী ভাবে বসবাস করার ইচ্ছা করা এটা এমন একটা মাসআলা, যার হুকুম সময়, অবস্থার ভিন্নতা এবং বসবাসকারীর উদ্দেশ্যের ভিন্নতা কারণে বিভিন্ন হয়। যেমন (ক) যদি কোন মুসলমানকে তার দেশের মধ্যে কোন কারন ছাড়া কষ্ট দেয়া হয় অথবা জোর করে জেলে দেয়া হয় অথবা তার সম্পদ দখল করে নেয় আর এক্ষেত্রে তার কোন বিধর্মীদের দেশে বসবাস করা ব্যতীত এ জুলুম থেকে বাচার আর কোন উপায় নেই তবে এই সূরতে ঐ ব্যক্তির জন্য কোন বিধর্মীদের দেশে বসবাস করা  জায়েয। তবে শর্ত হল ঐ ব্যক্তি ঐদেশে গিয়ে পরিপূর্ণভাবে ইসলামের উপর চলবে এবং ঐদেশের কালচার থেকে নিজেকে হিফাযতে রাখবে।

(খ) অনুরূপভাবে যদি কোন ব্যক্তি সীমাহীন চেষ্টা করেও ইসলামী রাষ্টে জীবন যাপনের  উপকরন অর্জন করতে না পারে, আর কোন বিধর্মীদের দেশে কোন বৈধ কাজ পায় এবং তার উপর ভিত্তি করে সে ঐ দেশে বসবাস করার ইচ্ছা করে, তাহলে শর্ত সাপেক্ষে বসবাস করা জায়েয আছে। আর শর্ত হল ঐ ব্যক্তি ঐ দেশে গিয়ে পরিপূর্ণভাবে ইসলামের উপর চলবে এবং ঐদেশের কালচার থেকে নিজেকে হিফাযতে রাখবে।

হালাল কামাই করা এমন এক ফরজ যার জন্য শরীয়ত কোন স্থান নির্দিষ্ট করেনি। বরং ব্যাপকভাবে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে চাও হালাল রিযিক তালাশ কর।

(গ) অনুরূপভাবে যদি কোন ব্যক্তি কোন বিধর্মীদের দেশে এই নিয়তে বসবাস করে যে, সে ঐদেশের বিধর্মীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবে এবং তাদেরকে মুসলমান বানাবে। সেখানে যে মুসলমানেরা রয়েছে তাদেরকে শরীয়তের সহীহ আহকামগুলো বলে দিবে এবং তাদেরকে দ্বীনের উপর রাখতে এবং শরীয়তের উপর আমল করতে উৎসাহিত করবে। এই নিয়তে বসবাস করা শুধু জায়েয নয়, বরং ছাওয়াবেরও কাজ। কেননা বহু সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈগন (রাঃ) ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে অনেক বিধর্মীদের দেশে হিজরত করেছেন।

(ঘ) যদি কোন ব্যক্তি নিজ দেশে এবং নিজ শহরের মধ্যে নিজের প্রয়োজন মেটানো পরিমান টাকা পয়সা অর্জন করতে পারে তবে তার জন্য শুধু আরাম আয়েশের উদ্দেশ্যে বিধর্মীদের দেশে হিজরত করা মাকরূহ। হাদীস শরীফে অত্যাধিক প্রয়োজন ছাড়া মুশরিকদের সাথে বসবাস করতে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত মাকহুল (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিজের সন্তানদেরকে মুশরিকদের মধ্যে ছেড়ে দিও না।

আর আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধরূপে গ্রহন করো না এবং সাহায্যকারী বানিওনা। (সুরা নিসা আয়াত ৯০)

এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, কাফেরদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হারাম। বর্ণিত আছে যে, আনসাররা রাসূলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে কাফেরদের বিরুদ্ধে ইহুদীদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি বললেন এরা দুরাচারী জাতি। তাদের প্রয়োজন আমাদের নেই।

তাই কাফেরদের দেশে শুধুমাত্র দুনিয়াবী পড়াশুনার উদ্দেশ্যে গমন করা, বিনা কারণে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা এবং নিজ দেশে প্রয়োজন পূরা হওয়া সত্ত্বেও তাদের দেশে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য যাওয়া কোন মুসলমানের জন্য বৈধ নয়।

যদি কোন ব্যক্তি ওজরের কারণে কাফেরদের দেশে বসবাস করে এবং সন্তানদেরকে ইসলামী শিক্ষা দেওয়ার পরেও যদি সন্তান বা নাতি নাত্নী পথভ্রষ্ট হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ হিজরত পালনকারীর কোন গুনাহ হবে না। আর যদি বিনা ওজরে কোন ব্যক্তি কাফেরদের দেশে বসবাস করে এবং সন্তানদেরকে ইসলামী শিক্ষা না দেয় অথবা দেওয়ার চেষ্টাও না করে আর পরে যদি সন্তান বা নাতি নাত্নী পথভ্রষ্ট হয় তাহলে হিজরতপালনকারীর গুনাহ হবে।

২। একাধিক আযান যদি আগে পরে হয়, তাহলে প্রথম আযানের উত্তর দিলেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। যদিও পরের আযানগুলোর উত্তর দেওয়াও উত্তম। আর একই মুহূর্তে এক সাথে আযানের ধ্বনি কানে আসলে স্বীয় মহল্লার মসজিদ যেখানে সে নামায পড়ে, সেটির আযানের উত্তর দিবে।

৩। ইস্তিঞ্জার উদ্দেশ্যে ভিতরে প্রবেশ করলে বাহির থেকে দুআ পড়ে ভিতরে প্রবেশ করবে এবং বের হয়েও দুআ পড়বে। আর অন্যান্য কাজের জন্য প্রবেশ করলে বাহির থেকে বিসমিল্লাহ পড়ে ভিতরে প্রবেশ করবে।

উল্লেখ্য যে, বাথরুম ও গোসলখানা এক সাথে করা উচিৎ নয়। কেননা এতে অনেক দুআর উপর আমল করা যায় না।

সূত্র সমূহঃ সূরা নিসা, আয়াত নং ৯০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৭৮৯; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৬

 

Loading