১। খানা খাবার পূর্বে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৭৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩৭৩২)
২। খাবার পূর্বে জুতা খুলে নেওয়া। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ৭১২৯; সুনানে দারেমী, হাদীস নং ২০৮০)
৩। বিনয়ীভাবে বসে খানা খাওয়া, অহংকারীদের ন্যায় দম্ভভাব নিয়ে না বসা। কোন উযর না থাকলে হোলান দিয়ে না বসা এবং কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে বসা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪৫২; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩৯৮; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ১৫০৪৭)
৪। তিন পদ্ধতিতে বসে খানা খাওয়া-
(ক) উভয় হাঁটু তুলে বসা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪৫২; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ১৪৪২৯)
(খ) ডান হাঁটু উঠিয়ে বাম হাঁটুর উপর বসা। (ফাতহুল বারী ৯/৫৪২)
(গ) উভয় হাঁটু মাটিতে বিছিয়ে বসা। (সূনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৭৭৫; শুআবুল ঈমান, বাইহাক্বী, হাদীস নং ৫৮৪৭)
৫। দস্তরখান বিছিয়ে খানা খাওয়া। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১২৩২৫)
৬। প্রথমে খানা প্রতি মুখাপেক্ষী হয়ে বসা। অতঃপর দস্তরখান বিছানো। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৪২১৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫৭১)
৭। জমিনের উপর বসে বসার বরাবর খাবার রেখে খাওয়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৪১৫; আল-মু’জামুল কাবীর, তাবারানী, হাদীস নং ৮১৯২)
৮। খাবার সামনে এলে এই দুআ পড়া-
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيمَا رَزَقْتَنَا
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৩১৩; শুআবুল ঈমান, বাইহাক্বী, হাদীস নং ৬০৪০)
৯। কিছুটা উচ্চসরে বিসমিল্লাহ বলে খানা শুরু করা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৮৮)
১০। ডান হাত দিয়ে খানা খাওয়া। বাম হাতে না খাওয়া। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৮৬; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৩৭৬)
১১। খানার মজলিসে বয়সের দিক দিয়ে যিনি বড় এবং বুযুর্গ তার দ্বারা খানা শুরু করানো। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩২৪৯)
১২। এক ধরনের খাবার হলে নিজের সামনে থেকে খাওয়া। তবে খাবার পাত্রে বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকলে অন্য জায়গা থেকে খেতে সমস্যা নেই। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৩৭৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৮৮; আস-সুনানুল কুবরা, নাসায়ী, হাদীস নং ৬৭৬২)
১৩। পাত্রের মাঝখান থেকে না খাওয়া। কেননা পাত্রের মধ্যখানে বরকত অবতীর্ন হয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৪৩৯; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ১৫০০৯)
১৪। খাবারের কোন অংশ পড়ে গেলে তা তুলে খাওয়া। খাবারে কোন ময়লা লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করে খাওয়া। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪২১; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৮৪৭)
১৫। জামাআতের সাথে একত্রে খানা খাওয়া। ইহা অধিক বরকতের কারন। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৭৯৯; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবারানী, হাদীস নং ১৩২৩৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩২৮৬)
১৬। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম সাধারনত তিন আঙ্গুল (মধ্যমা, বৃদ্ধা ও তর্জনী) দ্বারা খানা খেতেন। তাই খাবার শুকনা হলে উক্ত তিন আঙ্গুল দ্বারা খাওয়া। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪১৮; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবারানী, হাদীস নং ১৬৪৯)
১৭। খেজুর, বিস্কুট, আঙ্গুর ইত্যাদি জাতীয় খাবার মজলিসে খেলে সাথীদের অনুমতি ব্যতীত একসাথে একাধিক না খাওয়া, বরং একটি একটি করে খাওয়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২৪৫৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪৫৪)
১৮। খাদ্যের দোষ ত্রুটি বের না করা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৩৫৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৫০১)
১৯। খাওয়ার পর খাবারের পাত্র সমূহ আঙ্গুল দ্বারা ভালভাবে চেটে পরিষ্কর করে খাওয়া। এতে খাবারের পাত্র সমূহ আহার কারীর জন্য মাগফেরাতের দুআ করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪২০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৫২২৪; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ১৮০৪)
২০। হাতের আঙ্গুল সমূহ ভালভাবে চেটে খাওয়া। প্রথমে মধ্যমা অতঃপর পর্যায়ক্রমে তর্জনী, বৃদ্ধা, অনামিকা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি চেটে খাওয়া। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪১৭; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবারানী, হাদীস নং ১৬৪৯)
২১। খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে খাওয়ার মাঝে স্মরণ হলে এই দুআ পড়া-
بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ
(সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৫২১৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৫২১৪)
২২। খাওয়ার শেষে এই দুআ পড়া-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ
(সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৮৫২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১১২৭৬)
২৩। খাবারে ফুকঁ না দেওয়া। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩২৮৮)
২৪। বেশী গরম খাবার না খাওয়া। বরং কিছুটা ঠান্ডা করে খাওয়া। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৪১৫০; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ১৫০২৬)
২৫। এমতাবস্থায় খানা শেষ করা যাতে কিছু ক্ষুধা বাক্বী থাকে। উত্তম হল পেটকে তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ খানা খওয়া, এক ভাগ পানি পান করা এবং এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফাঁকা রাখা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৩৯৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩৩৪৯)
২৬। নিজের খাওয়া হয়ে গেলেও হাত উঠিয়ে না নেওয়া বরং হাত নাড়া-চড়া করতে থাকা অথবা একেবারে অল্প অল্প করে খেতে থাকা, যাতে সাথীরা লজ্জায় তৃপ্ত হওয়ার পূর্বেই খানা শেষ না করে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩২৯৫; শুআবুল ঈমান, বাইহাক্বী, হাদীস নং ৬০৩৭)
২৭। খওয়ার শেষে আগে দস্তরখান উঠিয়ে তারপর নিজে উঠা। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩২৯৫; শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৬০৫১)
২৮। খাবার পরিবেশনকারীর জন্য তার ডান দিক থেকে পর্যায়ক্রমে বাম দিকে খাবার পরিবেশন করা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৬২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪০)
২৯। দস্তরখানা ও অবশিষ্ট খাবার উঠানোর সময় এই দুআ পড়া-
الْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا
(সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৪৫৮; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৮৫১)
৩০। খাওয়ার পর উভয় হাত ধোয়া। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৭৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩৭৩২)
৩১। কুলি করে মুখ পরিষ্কার করা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৪৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৭১৯৫)
৩২। কারো মেহমান হয়ে খানা খেলে প্রথমে খানা খাওয়ার নির্ধারিত দুআ পড়া। অতঃপর এই দুআ পড়া-
اللَّهُمَّ أطْعِمْ مَنْ أطْعَمَنِي، وَاسْقِ مَنْ سَقانِي
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩৮০৯)
অতঃপর মেযবানকে শুনিয়ে এই দুআ পড়া-
أَكَلَ طَعَامَكُمْ الْأَبْرَارُ وَصَلَّتْ عَلَيْكُمْ الْمَلَائِكَةُ وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمْ الصَّائِمُونَ
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১২৪০৬; সুনানে বাইহাকী, হাদীস নং ৮৩৯৪)

Loading