প্রশ্ন : ১। সাহু সেজদা যদি নামাযের পর দেই তবে কি তাকবীরে তাহরীমা বেধে তারপর দিতে হবে? ২। আর হানাফী মাযহাব এ যেভাবে সিজদায়ে সাহু করা হয় সে প্রসঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন হল, সিজদায়ে সাহু করার পর যদি পুনরায় সন্দেহ আসে সালাম ফিরানোর আগে যে, সিজদায়ে সাহু দিছি কি দেই নাই তবে পুনরায় সাহু সিজদাহ করলে নামাযের ক্ষতি হবে কি না? ৩। তালাক পতিত হওয়ার পর ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সরাসরি স্ত্রী কে বলা হয়, তোমাকে ফিরিয়ে নিলাম তাহলে কি যথেষ্ট নাকি কারো সামনে সাক্ষী রেখে বলতে হবে বা সহবাসই কি যথেষ্ট? ৪। তালাকের এক বৈঠক বলতে কি বোঝানো হয়েছে? এক তালাক হওয়ার পর তিন মাসের মধ্যে আবার তালাক দিলেও ২য় তালাক বলে গন্য হবে? মানে সহীহ হাদীস দ্বারা তো এটা বোঝা যায় যে তিন তালাকও এক তালাক হিসেবেই গন্য। আমি বোঝাতে চাচ্ছি ঠিক ১০ মিনিট পর আবার তালাক বললেও কি পুনরায় আরেকটি তালাক পতিত হয়? মানে বৈঠক এর ব্যাপার টা ভালভাবে জানতে চাচ্ছি? ৫। যেখানে মৌখিক রুজু বা কথার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার কোন ব্যবস্থা মানে যদি এমন হয় যে পুনরায় শরীয়ত সম্মত উপায়ে বিবাহ ছাড়া আর যদি মিলনের ব্যবস্থা না থাকে তবে সেক্ষেত্রে পুনরায় বিবাহ হওয়ার পর কি নতুন করে তিন তালাক এর সুযোগ থাকবে নাকি এরপর আবার কোন কারনে তালাক পতিত হলে সে নতুন ভাবে এক তালাক ধার্য্য হবে নাকি আগের তালাক এর সাথে মিল রেখে আরো একটি তালাক পতিত হবে?

উত্তর :

প্রিয় দ্বীনী ভাই আপনার উত্তর দিতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
১। নামাযের পর বলতে যদি উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পরে সিজদায়ে সাহূ দেওয়া উদ্দেশ্য হয়, তবে আপনি যদি সিজদায়ে সাহূর কথা ভুলে যান এমনকি উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলেন সেক্ষেত্রে নামায পরিপন্থী কোন কিছু না হয়ে থাকলে দুটি সিজদাহ দিয়ে পুনরায় তাশাহহুদ, দুরূদ ও দুআ মাছূরাহ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবেন। এক্ষেত্রে নতুন করে তাকবীরে তাহরীমা দিতে হবে না। আর সিজদায়ে সাহূর কথা স্মরণ থাকলে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে পুনরায় তাশাহহুদ, দুরূদ ও দুআ মাছূরাহ পড়ে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবেন। এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমা দিতে হবে না।
২। সিজদায়ে সাহূ নামাযে একবারই দিতে হয়। সিজদায়ে সাহূ ওয়াজিব হওয়ার পরে যদি কখনো সন্দেহ হয় যে, তা দেওয়া হয়েছে কি হয়নি তবে প্রবল ধারণার উপর আমল করবে। যদি প্রবল ধারণা হয় দেওয়া হয়েছে তবে আর দিবে না। না দেওয়ার ধারণা প্রবল হলে পুনরায় দিয়ে দিবে। কিন্তু প্রবল ধারণার ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে সেখত্রেও পুনরায় দিয়ে দিবে।–রদ্দুল মুহতার ২/৮০
৩। না, রুজূ বা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। রুজূ মৌখিকভাবে করা যায়। অনুরূপভাবে সহবাস বা স্বামী স্ত্রীসুলভ বিশেষ আচরনের দ্বারাও রুজূ হয়ে যায়।
৪। হাদীস শরীফে এক বাক্যে, এক বৈঠকে এক তালাকের বেশী দিতে নিষেধ করা হয়েছে। আর বৈঠক অর্থ মজলিস। যদিও এক সাথে তিন তালাক দিলে পতিত হয়ে যায়। চাই একই মজলিসে পৃথক পৃথকভাবে তিন তালাক দেওয়া হোক কিংবা একই শব্দে তিন তালাক দেওয়া হোক। যেমন কোন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করতে কুরআন হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ যদি হত্যা করে ফেলে তবে কি লোকটি মারা যাবে না? নাকি কুরআন হাদীসের নিষেধাজ্ঞার কারণে লোকটি মরবে না? অনুরূপভাবে একসাথে তিন তালাক দিতে হাদীস শরীফে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ দিলে তা পতিত হয়ে যায়। আর এক তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতের মধ্যে যখনই আরেকটি তালাক দেওয়া হবে তা পতিত হবে। চাই সামান্য সময় পরে হোক বা দেরী করে হোক।
আর আপনার বক্তব্য “সহীহ হাদীস দ্বারা তো এটা বোঝা যায় যে তিন তালাকও এক তালাক হিসেবেই গন্য” সঠিক নয়। একাধিক সহীহ হাদীসে তিন তালাককে তিন তালাকই গণ্য করা হয়েছে। যেমন-
ক। عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلًا طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا فَتَزَوَّجَتْ فَطَلَّقَ فَسُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَحِلُّ لِلْأَوَّلِ قَالَ لَا حَتَّى يَذُوقَ عُسَيْلَتَهَا كَمَا ذَاقَ الْأَوَّلُ
অর্থঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিল। অতঃপর ঐ মহিলা অন্যত্র বিবাহ করল এবং তার (পরের) স্বামী (তাকে) তালাক দিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, ঐ মহিলা কি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে? তিনি বললেন, না যতক্ষণ পর্যন্ত (দ্বিতীয় স্বামী) তার মধু আস্বাদন (অর্থাৎ মেলামেশা) না করে যেমনিভাবে প্রথম স্বামী আস্বাদন করেছে।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫২৬১
যদি তিন তালাক দিলে এক তালাক হত তবে উক্ত মহিলার অন্যত্র বিবাহ করার কি প্রয়োজন ছিল? উক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে, তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হয়।
খ। ان رجلا قال لعبد الله بن عباس إني طلقت امرأتي مائة تطليقة فماذا ترى على فقال له بن عباس طلقت منك لثلاث وسبع وتسعون اتخذت بها آيات الله هزوا
অর্থঃ এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর ‎কাছে জিজ্ঞাসা করল আমি আমার স্ত্রীকে একশত তালাক দিয়েছি, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? ‎তখন ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি যা দিয়েছ তা থেকে তিন তালাক তোমার স্ত্রীর উপর ‎পতিত হয়েছে, আর সাতানব্বই তালাকের মাধ্যমে তুমি আল্লাহ তাআলার সাথে উপহাস ‎করেছ।-মুআত্তা মালেক, হাদীস নং ১১৪৬
এই মর্মে অসংখ্য হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীনসহ যুগ যুগ ধরে প্রায় সকল উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে একসাথে বা এক মজলিসে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হয়। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে বিস্তারিত লিখার ইচ্ছা রয়েছে ইংশাআল্লাহ।
৫। স্ত্রীকে এক, দুই বা তিন তালাক যা-ই দেওয়া হোক না কেন স্ত্রী যদি অন্যত্র বিবাহে আবদ্ধ হওয়ার পর পুনরায় প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে আসে সেক্ষেত্রে স্বামী নতুন করে তিন তালাকের মালিক হবেন। আর এক বা দুই তালাক দেওয়ার পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলে বা (স্ত্রী অন্যত্র বিবাহে আবদ্ধ হবার পূর্বে ঐ স্বামী তাকে) নতুন করে বিবাহ করলে উভয় অবস্থায় স্বামী অবশিষ্ট এক বা দুই তালাকের মালিক হবেন।–তাতারখানিয়া ৩/৬০৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৭৫

Loading