প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম হযরত আমার এক অফিসের কলিক আছে। সে একবার আমাকে তার টুপি ধুয়ে দিতে বলেছিলেন কিন্তু আমি দিইনি। এই জন্য সে আমার সাথে রাগ করে ভালো করে কথা বলে না, আমার সাথে নামায পড়তে চায় না, আমার সাথে এক সাথে খেতে চায় না। তো এখন আমার কি করণীয় এবং তার-ই বা কি করনীয়। উল্লেখ্য, সে বলেছে আপনি যে সমাধান দিবেন তা সে মেনে নিবে এবং আমিও মেনে নিবো বলে প্রতিজ্ঞা করছি। দয়া করে একটি সঠিক ও সহজ সমাধান আশা করছি। জাযাকাল্লাহু খাইরান।

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
মাশাআল্লাহ। একজন আলেমের সিদ্ধান্ত আপনারা মেনে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। এটাও অনেক বড় ব্যাপার।
আপনাদের যে বিষয়টি নিয়ে মনোমালিন্য চলছে তা কিন্তু একেবারেই তুচ্ছ একটি ঘটনা। আপনি হয়তোবা ইকরামুল মুসলিমীন তথা মুসলমান ভাইয়ের উপকারার্থে টুপিটি ধুয়ে দিলে এ পর্যন্ত গড়াতো না। আবার আপনার টুপি না ধুয়ে দেওয়া তথা আপনার কলিকের অনুরোধ না রাখার বিষয়টি আপনার কলিক স্বাভাবিকভাবে নিলেও এতদূর যেত না। কেননা আমার অনুরোধ অপর কেউ না রাখতে পারে এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া সমপর্যায়ের কাউকে টুপি ধুয়ে দিতে বলাটাও বেমানান। তবে সম্পর্ক গভীর হলে তাও স্বাভাবিক। আসলে আমাদের সকলেরই ছাড় দেওয়ার মনমানসিকতা একেবারেই কম।
আপনাদের বিষয়টি কিন্তু নিছক দুনিয়াবি একটি বিষয়। চলুন এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা জেনে নেওয়া যাক-
১। قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- لاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثٍ فَمَنْ هَجَرَ فَوْقَ ثَلاَثٍ فَمَاتَ دَخَلَ النَّارَ
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোন মুসলমানের জন্য তিনদিনের বেশী তার (দ্বীনী) ভাইকে পরিত্যাগ করা বৈধ নয়। কেউ তিন দিনের বেশী পরিত্যাগ করে মৃত্যুবরণ করলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৯১৬
২। أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثِ لَيَالٍ يَلْتَقِيَانِ فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا وَخَيْرُهُمَا الَّذِي يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কারো জন্য হালাল নয় যে, সে তিন দিনের বেশী তার (দ্বীনী) ভাইকে এমনভাবে পরিত্যাগ করবে যে, দুজনের সাক্ষাত হলে একজন এদিকে অন্যজন সেদিকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। তাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি যে সরবপ্রথম সালাম দেয়।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৬০৭৭
৩। আল্লাহ্‌ তাআলা কিয়ামতের দিবসে যে সাতজনকে তার আরশের নিচে ছায়া দিবেন তাদের এক শ্রেণী হল ঐ দুই ব্যক্তি যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য মহব্বত করে।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৬৬০
৪। অন্য হাদীসে রয়েছে যে আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসল এবং আল্লাহর জন্যই কারো সাথে দুশমনি রাখল। অনুরূপভাবে আল্লাহর জন্য দান করল এবং আল্লাহর জন্যই দান করা থেকে বিরত থাকল, সে তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করল।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৮৩
জ্ঞানীদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। আপনারা পূর্বের সবকিছু ভুলে গিয়ে আল্লাহর জন্য পূর্বের ন্যায় ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করুন। আর পরবর্তী ফলাফলও আমাকে জানানোর অনুরোধ রইল।

Loading