প্রশ্ন : ভাইয়া দাড়ি রাখার বিষয়ে মেহেরবানী করে কিছু বললে খুশী হতাম।

উত্তর :

এ ব্যাপারে আমার শায়খ মুফতী মানসূরুল হকে সাহেব (দাঃ বাঃ) এর আমালুস সুন্নাহ নামক কিতাব থেকে একটি লিখা হুবহু তুলে দিলাম-
শরী’আতের দৃষ্টিতে পুরুষদের জন্য দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব। দাঁড়ি মুন্ডানো বা কেটে ছেঁটে নিজের হাতের এক মুষ্টির (চার আঙ্গুল পরিমাণের ছোট করা) কম করা হারাম-কবীরা গুনাহ ও গুনাহে জারিয়া। আর মোঁচ এতটুকু ছোট করা সুন্নাত যাতে উপরের ঠোটের কিনারা ছাফ থাকে। বড় বড় মোঁচ রাখা অমুসলিমদের তরীকা এবং মোঁচ একেবারে মুন্ডানোও নিষেধ। (আদদুররুল মুখতার, ৫: ২৮৮)

দাঁড়ি রাখার ফায়দাসমূহ
১. দাঁড়ি রাখা শি‘আরে ইসলাম অর্থাৎ এর দ্বারা মুসলমানদের জাতীয় নিদর্শনের পরিচয় পাওয়া যায় এবং শরী‘আতের হুকুম পূর্ণ করা হয়। (মুসলিম শরীফ হাঃ নং ৫৬, ২৬১)
২। আল্লাহ তাআলার খিলকাত ও সৃষ্টি বৈশিষ্ট্যকে ঠিক রাখা হয়, পবিত্র কুরআনে যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (মুসলিম শরীফ হাঃনং ৫৬, ২৬১)
৩। মহিলাদের সামঞ্জস্যতা থেকে বাঁচা যায়।
৪। চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকে।
৫। ইমাম ও মুআযযিন হওয়ার যোগ্যতা বিদ্যমান থাকে।
৭। মুসলমানদের সম্মান ও সালাম পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়।
৮। চেহারার মধ্যে নূর চমকাতে থাকে ও চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৯। অনেক গুনাহের কাজ হতে বিরত থাকা সহজ হয়ে যায়। কারণ, দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তিকে শয়তান সহজে অন্যায় কাজে লিপ্ত করতে পারে না। দাঁড়ির কারণে সে ব্যক্তি অবৈধ কাজে অংশগ্রহণ করতেও লজ্জা বোধ করে।
১০। শেভ করার অনর্থক সময় ও অর্থের অপচয় বন্ধ হয়।
১১। ওয়াজিব আদায়কারী হিসেবে দীনদার-পরহেজগার এ জাতীয় সম্মানিত উপাধিতে ভুষিত হয়।
১২। একজন মুমিন হিসেবে সহজে পরিচিত হওয়া যায়। নতুবা মুমিন ও কাফের পার্থক্য করা খুবই মুশকিল হয়ে যায়।
১৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অন্তর মুবারক খুশী করা হয়।
১৪। গুনাহে জারিয়া (তথা চলমান গুনাহ) হতে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৫। পুরুষদের সৌন্দর্য হচ্ছে দাঁড়ি। কারণ, পুরুষ জাতী তো সিংহের ন্যায় বাহাদুর। আর সিংহের মুখের শোভা হল দাঁড়ি।
১৬। রাস্তা ঘাটে বা অপরিচিত স্থানে মারা গেলে মুসলমান হিসেবে তার গোসল ও কাফন-দাফন নসীব হয়।
১৭। কবরে মুনকার নাকীরের সুওয়াল-জওয়াব সহজ হয়।
১৮। এর দ্বারা হাশরের ময়দানে উম্মতে মুহাম্মাদী বলে চেনা সহজ হবে এবং হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুপারিশ লাভের উসীলা হবে।

দাঁড়ি না রাখার ক্ষতিসমূহ
১। দাঁড়ি মুন্ডালে অথবা এক মুষ্টি থেকে ছোট করলে শি’আরে ইসলাম তথা মুসলমানদের জাতীয় নিদর্শন এবং শরী’আতের হুকুম তরক করা হয়। যা জায়েয নয়।
২। আল্লাহ তা’য়ালার খিলকাত ও সৃষ্টি বৈশিষ্ট্যকে নষ্ট করা হয়। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৮৮৬, মেরকাত ৮/২৭৯)
৩। পুরুষ জাতি মহিলাদের সাদৃশ্য হয়ে যায়, যা শরী’আতে হারাম।
৪। চোখের দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পেতে থাকে।
৫। সূরাহ-ক্বিরাআত সহীহ থাকলেও শরী’আতে তার আযান, ইক্বামত ও ইমামতির যোগ্যতা থাকে না। কেননা যে দাঁড়ি এক মুষ্টির কম করে রাখে সে ফাসিক, আর ফাসিক ব্যক্তি ইমাম ও মুআযযিন হওয়ার যোগ্য নয়। (আদদুররুল মুখতার ১/৫৬৭)
৬। মুসলমানদের সম্মান ও সালাম পাওয়ার যোগ্য হয় না। কেননা ফাসিককে সালাম দেওয়া মাকরূহ। (ফাতাওয়া শামী ৬/৪১৫)
৭। চেহারার নূর চলে যায় এবং প্রকৃত সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে পারস্যের দাঁড়িবিহীন দূতকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখে চেহারা ফিরিয়ে নিয়ে বলেছিলেন যে, তোমার চেহারা এত বিশ্রী বানাতে কে বলেছে? (আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া ৪/২৯১)
তাছাড়া দাঁড়ি মুন্ডালে অল্প দিনেই তার দাঁড়ি পেকে সাদা হয়ে যায়। যার ফলে তখন তার দাঁড়ি রাখতে ইচ্ছা করলেও লজ্জার দরুন তা রাখা মুশকিল হয়।
৮। বিভিন্ন ধরনের গুনাহ থেকে বাঁচা কঠিন হয়ে যায় এবং সহজে বিভিন্ন গুনাহের মধ্যে জড়িয়ে পড়তে হয়।
৯। শেভ করার মাধ্যমে সময় ও অর্থের অপচয় হয়। যা স্পষ্ট নাজায়েয। (সূরায়ে বনী ইসরাঈল ২৬,২৭)
১০। তার শরাফত বা বুযুর্গী নষ্ট হয়ে যায় এবং মানুষ তাকে ফাসিক, পাপী ও নাফরমান ইত্যাদি বলে স্মরণ করে থাকে।
১১। ঐ ব্যক্তি মুমিন, নাকি কাফের? তা বুঝা যায় না এবং তার হকও আদায় করা যায় না।
১২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তর মুবারকে আঘাত দেয়া হয়।
১৩। অন্যান্য গুনাহ একবার করলে তার বাহ্যিক আছর পরক্ষণেই অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু দাঁড়ি না রাখলে সর্বদা গুনাহগার হিসাবে চিহ্নিত হতে থাকে।
১৪। পুরুষের সৌন্দর্যের বিকৃতি ঘটে এবং তার গাম্ভীর্যতা শেষ হয়ে যায়।
১৫। দাঁড়িবিহীন লোক রাস্তা ঘাটে মারা গেলে তার গোসল, কাফন-দাফন নিয়ে দারুণ সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাকে শশ্মানে নেয়া হবে? নাকি গোরস্থানে নেয়া হবে? তা নির্ণয় করাও মুশকিল হয়ে যায়।
১৬। কবরে মুনকার-নাকীরের সুওয়াল-জওয়াব কঠিন হয়ে যাবে।
১৭। হাশরের ময়দানে উম্মতে মুহাম্মাদী বলে দাবী করা ও উম্মতে মুহাম্মাদী হিসেবে পরিচয় দিয়ে শাফা’আতের আশা করাও মুশকিল হবে।

Loading