প্রশ্ন : ১/ ঘোড়া পরিদর্শনে মগ্ন হওয়ার কারণে হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর আছরের ছালাত ক্বাযা হয়ে যায়। তাতে তিনি ক্ষু্ব্ধ হয়ে সব ঘোড়া কুরবানী করে দেন। কেউ বলেছেন, তিনি আল্লাহর নিকটে সূর্যকে ফিরিয়ে দেবার আবেদন করেন। সেমতে সূর্যকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং তিনি আছরের ছালাত আদায় করে নেন। তারপর সূর্য অস্তমিত হয়। — ঘটনা কি সত্য? ২/ একদা রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর কোলে মাথা মোবারক রেখে ঘুমাচ্ছিলেন/আরাম ফরমাচ্ছিলেন ছিলেন, তখন (ঘুমে) ওহী নাযিল হচ্ছিল। সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল ততক্ষণ পর্যন্ত হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আসর নামায পড়তে পারেন নি। অতঃপর রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! আলী তোমার এবং তোমার রাসূলের আনুগত্য করেছে তাই সূর্যকে পুনরায় উদিত করে দাও। বর্ণনাকারী আসমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন : আমি দেখেছি যে সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে তা পুনরায় রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশে উদয় হয়েছে। — ঘটনা কি সত্য? ৩/ জিহাদের কারনে রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অথবা কোন সাহাবীর নামায কাযা হবার কোন ঘটনা কি আছে? আর থাকলে কি সূর্যকে পুনরায় উদিত করানোর কোন ঘটনা ঘটেছে? ৪/এই ঘটনাগুলো মসজিদে তাবলীগের মসজিদওয়ার জোড়ে এক সাথিভাই খুব ইয়াকীনের সাথে বলছিল। আমার কাছে ঘটনাগুলো সন্দেহজনক মনে হওয়ায় আমি মজলিশ ত্যাগ করি।কাজটা কি ঠিক হয়েছে?

উত্তর :

প্রশ্নের উত্তর দিতে দেরি হওয়াতে দুঃখিত, মাফ করবেন। আসলে প্রশ্নের বিষয়গুলোতে তাহকীক করতে বেশ সময় লেগে গিয়েছে।

১।ঘটনাটি কুরআনুল কারীমে রয়েছে।(সূরা ছোয়াদ, আয়াত ৩১-৩৩)

তবে “তিনি আল্লাহর নিকটে সূর্যকে ফিরিয়ে দেবার আবেদন করেন। সেমতে সূর্যকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং তিনি আছরের ছালাত আদায় করে নেন। তারপর সূর্য অস্তমিত হয়” এমনটি হাদীস বা তাফসীরের কোন নির্ভরযোগ্য কিতাবে খুঁজে পাইনি।

২। বর্ণনাটি নির্ভরযোগ্য নয়। বরং মুনকার পর্যায়ের।– আসনাল মাতালিব ১/১৫২; বিদায়া নিহায়া ৬/৮৭; তালখীসু কিতাবিল মাউজূআত, হাফেজ যাহাবী ১/৬৩।

৩।হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহ কিছু সাহাবীর খন্দকের যুদ্ধে কয়েক ওয়াক্ত নামায ছুটে গিয়েছিল। অনুরূপভাবে খয়বারের যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহ বেশ কিছু সাহাবীর ফজরের নামায ছুটে গিয়েছিল। কিছু সাহাবী কর্তৃক বনূ কুরাইযাহ এর যুদ্ধের সময় আসরের নামায ছুটে গিয়েছিল ( রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হুকুম সরাসরি পালনার্থে)। তবে সূর্যকে পুনরায় উদিত করানোর কোন ঘটনা ঘটেনি। -সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৯২; সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং ৬৬১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৩৫৫৫, ৮৩১৫; বিদায়া নিহায়া ৪/১১০; তালখীসু কিতাবিল মাউজূআত, হাফেজ যাহাবী ১/৬৪।

৪।নিশ্চিতভাবে কোন হাদীস বা ঘটনা অগ্রহনযোগ্য মনে হলে মজলিস শেষে হেকমতের সাথে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। তবে কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদীস “যে ইচ্ছাকৃত আমার উপর মিথ্যারোপ করল সে নিজের ঠিকানা জাহান্নাম করে নিল” কে  উদ্দেশ্য করে দ্বীনী আত্মমর্যাদাবোধের কারনে মজলিস ত্যাগ করে তবে তাকে মাজূর ধরা যেতে পারে।আর কেউ জেনে শুনে বা হঠকারীতাবশত ভিত্তিহীন হাদীস বললে সেই মজলিস ত্যাগ করা উচিত।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১০৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪।

Loading