প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, হযরত আমি পারিবারিক সমস্যা নিয়ে বিব্রত। আমার স্ত্রী, স্বামী এবং শশুর শাশুড়ী কাউেক শ্রদ্ধা করেনা এবং একই সাথে থাকতে পছন্দ করেনা। এমতাবস্থায় আমি একমাত্র পুত্র সন্তান হিসাবে কিভাবে বাবা মায়ের হক আদায় করতে পারি।পারিবারিক মহা অসুবিধায় আছি। মেহেরবানি করে উত্তর দিবেন।

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম

স্ত্রী যদি একান্নভুক্ত পরিবারে থাকতে না চায় তবে তাকে বাধ্য করা জায়েয নেই। এক্ষেত্রে স্বামীর উপর স্ত্রীর জন্য পৃথক ঘরের ( অন্তত একটি কামরার) ব্যবস্থা করা ওয়াজিব। স্বাভাবিক ভাবে প্রত্যেক নারীই এ কামনা করবে যে, সে স্বামীকে নিয়ে স্বাধীনভাবে নিজের মত করে একটা সংসার গড়ে তুলবে। তার থাকার জন্য ভিন্ন একটি ঘর থাকবে যেখানে সে তার মালামাল সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করতে পারবে এবং স্বাধীনভাবে তার স্বামীর সাথে বিনোদন ও মনোরঞ্জন করতে পারবে। একান্নভুক্ত পরিবার অনেক ক্ষেত্রেই এ কামনায় বাঁধা সৃষ্টি করে। ফলে শ্বশুর-শাশুড়ী, ননদ, দেবর প্রমুখদের সাথে পুত্রবধূর বনিবনা হয়ে উঠে না। তাই সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে।

তাছাড়া আমাদের দেশে শাশুড়ী-পুত্রবধূর বৈরিভাব একটি চিরাচরিত নিয়ম। একদিক দিয়ে শাশুড়ী যেমন পুত্রবধকে মেয়ে মনে করতে পারে না অন্যদিক দিয়ে পুত্রবধূও শাশুড়ীকে মা মনে করতে পারে না। ফলে অশান্তির আগুন দিন দিন বাড়তে থাকে। যার খেসারত ছেলে বা স্বামীকেই দিতে হয়। এক্ষেত্রে মূল সমস্যা হল দ্বীনী মূল্যবোধের অভাব। প্রত্যেকে যদি অপরের অধিকারের দিকে লক্ষ্য রাখতো তবে কোন সমস্যা হত না। কিন্ত প্রত্যেকে নিজের অধিকার নিয়ে ব্যস্ত।

হযরত থানভী (রঃ) বলতেন, চুলার আগুন থেকেই সংসারের শান্তিতে আগুন লাগে, অতএব এই যুগে শুরু থেকেই চুলা পৃথক করে দেওয়া সমীচীন।

অনেক পিতা-মাতা ও সন্তান মনে করেন স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার গড়ে উঠলে পিতা-মাতা অবহেলিত বা বঞ্চিত হবেন। এটা একটি ভুল ধারনা। সন্তানকে দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত করলে এবং ভালভাবে গড়ে তুললে সন্তান পিতা-মাতার হকের ব্যাপারে ত্রুটি করবে না ইংশাআল্লাহ। তাছাড়া জোর জবরদস্তি করে কিছুদিন একসাথে থাকলেও একদিন তো পৃথক হতেই হবে। কিন্ত তখন এমনভাবে পৃথক হবে যে কেউ কারো চেহারা দেখতে চাইবে না। তাই আগেভাগেই পৃথক হওয়া ভাল।

প্রশ্নোক্তখেত্রে আপনি স্ত্রীর জন্য দ্বীনী তালীমের ব্যবস্থা করুন এবং তাকে বুঝাতে থাকুন। অনুরূপভাবে আপনার পিতা-মাতাকেও অপরের হকের ব্যাপারে সচেতন করুন। এরপরেও আপনার স্ত্রী যদি একসাথে থাকতে না চান তবে তার আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা জরুরী। এমতাবস্থায় আপনি আপনার মাতা-পিতার হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করে যাবেন। এতে তারা প্রথমে একটু কষ্ট পেলেও আপনি যখন তাদের খেদমত চালিয়ে যাবেন এবং অর্থনৈতিক ভাবে তাদের সহযোগিতা করে যাবেন তারা সন্তুষ্ট হয়ে যাবে ইংশাআল্লাহ।

তবে স্ত্রীর একথা মনে রাখা উচিত রক্ত পানি করে তিলেতিলে তার একমাত্র ছেলেকে মানুষ করার পরে তাকে বিবাহ দেওয়ার পর দুদিন পরেই যদি তার পুত্রবধূ আলাদা সংসারের জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং ছেলেকে মা-বাবা থেকে দূরে সরাতে চায় তবে তিনি বিষয়টিকে কীভাবে নিবেন?-রদ্দুল মুহতার ৩/৫৯৯-৬০১; আল বাহরুর রায়েক ৪/৩২৮;ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৫৬; তোহফায়ে জাওযাইন।

Loading