প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, আমি নিরুপায় হয়ে এক আলেমের সাথে পরামর্শ করার পর দেশীয় এক ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিয়েছি। আমি নিরুপায় এই জন্য যে, প্রয়োজনে আমার এত টাকা মাসে মাসে বা যখন তখন ধার দেবার কেউ নেই। ব্যংকের লোক বলেন: ইহা শরীয়ত ভিত্তিক কার্ড। তাদের সাথে এই কার্ডের চুক্তি এরকম: আমার কার্ডের লিমিট দেড় লক্ষের বেশি। পরিশোধের মেয়াদ ষাট দিন। এ সময়ের ভিতরে ব্যবহৃত অর্থপরিমান পরিশোধ না করতে পারলে ২০০০ টাকা মেইন্টেনেন্স ফি দিতে হয়। এই অর্থদন্ড কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিপরীতে নয়। বরং এক পয়সা বাকি থাকলেও দিতে হবে, দেড় লাখ টাকা বাকি থাকলেও ঐ একই পরিমান (২০০০টাকা) প্রতিমাসে দিতে হবে যতদিন পর্যন্ত না পরিপূর্ণ টাকা পরিশোধ হচ্ছে। এই মেইন্টেনেন্স ফি ২০০০ টাকা এর সাথে late ফি ৩০০ টাকা + (যদি কোন মাসে ক্রেডিট খরচ সর্বোচ্চ লিমিট ক্রস করে ,তাহলে) এক্সেস লিমিট ফি ৫০০ টাকা, অর্থাৎ ২০০০ থেকে ২৮০০ টাকা প্রতিমাসে গুনতে হতে হবে, এই শর্তে কার্ড নেয়া। পরপর তিনমাস না দিলে তারা অব্যবহৃত টাকা লক করে দেয়, আর ব্যবহার করা যায় না। উল্লেখ্য আমি গত দুই বছরের মধ্যে শুধুমাত্র একমাসে ভুলবশত একটি পেমেন্ট দিতে ভুলে যাবার কারণে ২০০০ টাকা মেইনটেনেন্স ফি দিয়েছি। অন্যথায় কখনও দিতে হয়নি। আমার প্রশ্ন হলো: ১) আমার দেয়া এই মেইনটেনেন্স ফি কি সূদ দেয়া হয়েছে কিনা? ২) আর আমি যে চুক্তির বলে এই কার্ড ব্যবহার করছি, তা সুদের আওতায় পড়ে কিনা? পড়লে কীভাবে? ৩) সুদ হলে ব্যাংকের লোকেরা এটাকে শরীয়ত সম্মতই বা বলছে কিভাবে? ৪) বর্তমান সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে, ব্যক্তিগত লোন বা টাকা ধার যে কোন ইমার্জেন্সি বা প্রয়োজনে ম্যানেজ করা অসম্ভব কঠিন ব্যাপার, সে বিবেচনায় এইসব কার্ড নেয়া যায় কিনা? মানে শরীয়তে ন্যূনতম সুযোগ আছে কিনা? ৫) যদি এইরকম চুক্তিতে না করা যায়, তাহলে কিরকম চুক্তিতে করা গেলে তা সহীহ হত, তা যদি একটু আলোচনা করতেন বা আমাদের পরামর্শ দিতেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে আপনার এই খেদমতের উত্তম জাযা দান করুন, আমীন।

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১+২। এতো স্পষ্ট সূদী কারবার। কার্যত সূদকে মেইনটেনেন্স ফি, সার্ভিস চার্জ, মুনাফা, লভ্যাংশ যাই নাম দেওয়া হোক না কেন তা সূদ। বিষয়টি আপনারো বুঝা উচিৎ ছিল। একটু ভাবুন, আপনি সময়মত টাকা দিলে বিষয়টি কি তারা মেইনটেন করে না? তখন কি অন্য কেউ মেইনটেন করে? নাকি টাকা সময়মত দিতে না পারলেই মেইনটেনের প্রয়োজন হয়? টাকা দিলে আর কি মেইনটেনের প্রয়োজন নেই? এসব ভাঁওতাবাজি করে তারাই বা কিভাবে সূদকে হালাল করে, মানুষকে কিভাবে বুঝায় আর মানুষই বা কিভাবে এত সহজে বুঝে ফেলে তা বুঝে আসে না। আরে বাবা, সূদ যদি তোমার খেতেই হয় তবে সূদ বলেই খাও। মেইনটেনেন্স ফি বলে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছো কেন? আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন, আপনার লিমিট যদি ৩ লাখ টাকা থাকত তবে মেইনটেনেন্স ফি ৪০০০ টাকা নিত। সারকথা, যে নির্ধারিত হারে সূদ তারা নিয়ে থাকে সেই অংকই তারা কষে থাকে।
যাই হোক আপনার জন্য উক্ত সূদী কারবারে চুক্তিবদ্ধ হওয়া জায়েয হয়নি। উক্ত চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করে খালেছভাবে আল্লাহ তাআলার নিকত তাওবা করে নিবেন।

৩। হ্যাঁ, খুব চমৎকার কথা। যারা সারাদিন সূদী কারবারে ব্যস্ত তাদের নিকট আপনি ফতোয়া নিতে যাচ্ছেন। দেশে কি আলেমের অভাব পড়ে গিয়েছে যে, ব্যাংকারের নিকট মাসআলা নিতে হবে। কাজেই তারা কিভাবে বৈধ বলে তাদের নিকটই শুনুন।

৪। একান্ত ঠেকায় শুকরও খাওয়া যায়। যখন আর খাওয়ার কোন কিছু পাওয়া যায় না ওদিকে না খেলে জীবন নাশের আশংকা রয়েছে তখন কোমর সোজা হওয়া পরিমাণ শুকরও খাওয়া জায়েয। এখন এ জাতীয় কোন অপারগতা বা জরুরত দেখা দিলে এবং কারো নিকট টাকা ঋণ পাওয়া না গেলে, সেক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজনে সূদের ভিত্তিতে টাকা আনা জায়েয। তবে সূদ নেওয়া কোন অবস্থাতেই জায়েয নয়। সূদী কারবারে জড়িত হওয়া মানে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। এখন কতটুকু ঠেকায় পড়লে আপনি আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন বা আপনার জন্য তা বৈধ হবে বিষয়টি আপনিই বুঝতে পারবেন। অনেকের কাছে তো পুরনো টেলিভিশন পরিবর্তন করে নতুন আপডেট টেলিভিশন আনাও জরুরতের মধ্যে পড়ে। আলমারি ভর্তি অগনিত কাপর থাকা সত্ত্বেও ঈদের সময় নতুন কাপর নেওয়া জরুরতের মধ্যে পড়ে।
তবে আগাম ধারণা প্রসূত বা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সূদী কারবারে জড়িত হওয়া বৈধ হবে না। বরং উক্ত অবস্থা সৃষ্টি হলেই কেবল ইস্তেগফারের সাথে এ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আর তা হবে জরুরত মাফিক। প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে উক্ত চুক্তি থেকে ফিরে আসবে।

৫। নগদ টাকা নিয়ে ব্যাংকের সাথে বৈধ কোন চুক্তি করা সম্ভব বলে মনে হয় না। তারা সূদ ছাড়া কোন কিছু চিন্তা করতে পারে না। তবে আপনার কোন পণ্যের প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে তারা যদি পণ্যটি কিনে আপনার নিকট বেশি মূল্যে কিস্তিতে বিক্রি করে তবে তা বৈধ হবে। আর এজন্যও বেশ কিছু হুকুম আহকাম রয়েছে যা বিজ্ঞ কোন মুফতী থেকে জেনে নিবেন।
সূত্রসমূহঃ সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৭৫-২৭৯; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৯৬২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৭৬

Loading