প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত মুফতী সাহেব! আপনি অবশ্য জানেন যে, বর্তমানে আমাদের দেশে চরমোনাই পীর সাহেবের একটি দল আছে যার নাম ইসলামী আন্দোলন। তাঁদের দলের প্রধানকে আমীরুল মুজাহিদীন এবং দলীয় সদস্যদের মুজাহিদ বলা হয়। এমনকি তাঁরা যে নির্বাচন করে তাকে জিহাদ ঘোষণা করেছে নায়েবে আমীরুল মুজাহিদীন রেজাউল করীম সাহেব। এদিকে মুহতারাম আব্দুল মালিক সাহেব তাঁর অনুবাদিত গ্রন্থ কিতাবুল জিহাদের ভূমিকায় জিহাদের এমন ঢালাওভাবে ব্যাবহারকে তাহারীফ (বিকৃত) বলে আখ্যায়িত করেছেন। পাশাপাশি অনেকেই এটাকে অপব্যাখ্যা বলছেন। এখন হজরতের কাছে আমার প্রশ্ন ১। জিহাদকে অন্য কোনো অর্থে ব্যবহার করা যায়? যদি যায় তাহলে কোন দলীলে? ২। গণতন্ত্রে অংশগ্রহণ করে এবং গণতন্ত্রের নিয়মে নির্বাচন করে ইলায়ে কালিমাতুল্লাহ করা শরীয়া মোতাবেক কতটুকু জায়েয?। মুহতারামের কাছে অনুরোধ, এই অধমের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পুরো জাতীর সন্দেহের অবসান করুন।

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১। জিহাদ আল্লাহ তাআলার দ্বীনকে বুলন্দ করার জন্য কাফেরদের সাথে যুদ্ধে শক্তি ব্যয় করাকে বলে। (উমদাতুল কারী ২১/১৫৩, শামেলা) এক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য হল দ্বীন বুলন্দ করা। কাজেই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা বা বুলন্দ করতে কেউ কোন মেহনত করলে তার ও জিহাদের উদ্দেশ্য যে এক এতে কোন সন্দেহ নেই। যেমন ইমাম বুখারী (রহঃ) জুমুআর দিনে মসজিদে গমনকে সাবীলিল্লাহ তথা আল্লাহর রাস্তা সাব্যস্ত করেছেন। এবং তিনি জিহাদের হাদীস দ্বারা জুমুআর জন্য মসজিদে গমনের ফযীলাত প্রমান করেছেন।
عن عَبَايَة بْنُ رِفَاعَةَ قَالَ أَدْرَكَنِي أَبُو عَبْسٍ وَأَنَا أَذْهَبُ إِلَى الْجُمُعَةِ فَقَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ اغْبَرَّتْ قَدَمَاهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ
অর্থঃ হযরত আবায়া বিন রিফাআহ (রহঃ) বলেন, আবূ আবস (রাঃ) আমাকে জুমুআর নামাযে যেতে দেখে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলতে শুনেছি, যার দুই পা আল্লাহর রাস্তায় ধুলি-ধূসরিত হয় আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের আগুন তার জন্য হারাম করে দিয়েছেন।-সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯০৭
অতএব বোঝা গেল জুমুআর জন্য মসজিদে গমনও আল্লাহর রাস্তা হিসেবে গণ্য। আর উক্ত হাদীসে সরাসরি জিহাদের হাদীসের দ্বারা জুমুআর জন্য মসজিদে গমনের ফযীলাত সাব্যস্ত করা হয়েছে।
চরমোনাই পীর সাহেব এবং তার অনুসারীরা যদি আসলেই এখলাছের সাথে দ্বীনকে বুলন্দ করার মেহনত চালিয়ে যান তবে রূপক অর্থে তাদের মেহনতও জিহাদের উদ্দেশ্যর মধ্যে শামিল। তবে বাস্তব জিহাদ সেটাই যেটা প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে।

২। গণতন্ত্র নিঃসন্দেহে ইসলাম সমর্থন করে না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে আল্লাহ তাআলার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্রের সাহায্য নেওয়া জায়েয, বরং ছাওয়াবও হবে। কাজেই কোন দল যদি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তাআলার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্রে অংশগ্রহণ করে (আর এমন একটি জামাআত থাকাও জরুরী) তবে তা বৈধ।–আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ের, পৃষ্ঠা ১০৭

Loading