প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, ১। আমি ইলম শিক্ষা করতে খুবই আগ্রহী, কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমি আমাদের পরিবারের উপার্জনকারী একমাত্র সন্তান। আমাদের পরিবারে সদস্য মোট ৪ জন- আব্বু, আম্মু, ছোট বোন এবং আমি। আমাদের পরিবারে আব্বা মাযূর হওয়ায় তেমন একটা কাজ করতে পারে না। আমাদের নিজস্ব কোন বাড়ী-ঘর নেই, ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকাতে ভাড়া বাসায় থাকি। আমার বয়স ২৪ বছর। আমি এখনও বিয়ে করিনি। আল্লাহ তাআলা হেদায়েত দেয়ার আগে নরমাল বাসায় থাকতাম যেখান পর্দা করা সম্ভব ছিল না। যেমন ১০ পরিবারের ২টি বাথরুম, একটি পাকের ঘর ইত্যাদি। পরে আমি বেপর্দার কারনে ফ্ল্যাট বাসায় থাকি যার ভাড়া তার চেয়ে তিন গুন বেশী। যাই হোক আল্লাহর রহমতে দিন চলে যায়। কিন্তু টাকা জমানোর মতো টাকা বাকি থাকে না। আর আমাদের এমন কোন টাকা পয়সা জমানোও নেই। আমি যদি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে যাই তাহলে জীবিকার তাগিদে হয়তো মা ও ছোট বোনের বেপর্দা (গার্মেন্টস এ কাজ করা ইত্যাদি) হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। যদি আমার পরিবারের খরচাদি না দেই তাহলে কি গোনাহ? ২। মা-বাবা ও ছোট বোন যদি অভিশাপ দেয় তাহলে কি হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পিতা মাতাকে পেয়েও যে জান্নাত কামাতে পারল না সে ধ্বংস হোক। ৩। উপরোক্ত তিনটি কারনে পরিবার ফেলে যেতে পারছি না। কিন্তু আবার আল্লাহ তাআলা যদি হাশরের ময়দানে আমাকে প্রশ্ন করে তুমি আমার উপর তাওয়াক্কুল করলে না কেন? তাহলে কি উত্তর দিব? এই জন্য আবার পরিবার ফেলে মাদ্রাসায় ভর্তি হতে মন চায়। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন “জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে বেশী”। হাদীসে আছে “আল্লাহ তাআলা বলেন: বান্দা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা করবে তেমনি আমাকে পাবে”। ৪। এখন যদি আমি আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে পরিবার ফেলে ইলম শিক্ষার জন্য চলে যাই তাহলে কি গোনাহ হবে, আল্লাহর আদেশ কোনটি? ৫। তাহলে কি আমি ইলম শিখতে পারবো না? (বেশী ইলমের কথা বলছি না, শুধু কোরআন শরীফ বুঝতে পাড়ি এতটুকু ইলম হলেই চলবে) এখন আমার কি করা উচিৎ?

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১+২+৪। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা আপনার জন্য জরুরী। তাদেরকে ফেলে ইলম অন্বেষণের জন্য আপনার মাদরাসায় পড়ে থাকা জায়েয হবে না।
৩। না, মাযূর পিতামাতার খেদমতে নিয়োজিত থাকলে আল্লাহ তাআলা এমন প্রশ্ন (তুমি আমার উপর তাওয়াক্কুল করলে না কেন?) করবেন না ইংশাআল্লাহ।
৫। আপনি মাদরাসা দারুর রাশাদ (মীরপুর সাড়ে এগার, পল্লবী, পানির ট্যাঙ্কির কাছে, মুসলিম বাজারের পাশে) এ যোগাযোগ করতে পারেন। সেখানে নৈশ কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। সম্ভবত সপ্তাহে দুই তিন দিন ক্লাশ হয়। সেখান থেকে এধরনের অন্য ব্যবস্থাপনার সন্ধানও পাবেন। ঢাকায় এখন প্রচুর পরিমাণে সাধারণ শিক্ষিতদের ইলম শিক্ষার জন্য নৈশ কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। সপ্তাহে দুই/তিন দিন সন্ধ্যার পর তালীম দেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মোটামুটি কুরআন হাদীস বুঝা যায় এতটুকু ইলম অর্জন করতে পারবেন ইংশাআল্লাহ। অথবা আপনার নিকটস্থ কোন আলেমের নিকট থেকেও সুযোগমত ধীরে ধীরে ইলম শিখতে পারেন। নিরাশ হওয়ার কোন কারন নেই। আপনার জযবা বা আবেগই আপনাকে সামনে বাড়িয়ে দিবে ইংশাআল্লাহ।
সুত্রসমূহঃ ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৬২১-৬২৩; আল বাহরুর রায়েক ৪/২৫৮; ফাতহুল কদীর ৪/৪১৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪০৮

Loading