প্রশ্ন : হযরতের কাছে জানতে ইছুক ১। মাজূর ব্যক্তিগণ যখন চেয়ারে বা মাটিতে বসে জামাআতের সাথে নামায আদায় করে তখন দেখা যাচ্ছে যে, ইমাম সাহেব রুকূ এবং সিজদায় যাওয়ার সময়ে চেয়ারে বা মাটিতে বসে আদায় করা ব্যক্তি ইমামের আগে রুকূ ও সিজদার রোকনগুলো আদায় করে থাকে, যেহেতু তারা বসা অবস্থায় থাকে সেহেতু ইমামের তাকবীরে তাশরীক বলার সাথে সাথে রুকূ বা সিজদায় চলে যায়, এতে নামাযের কোন ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাচ্ছি দলীল সহ। এবং এক্ষেত্রে চেয়ারে বা মাটিতে বসা ব্যক্তির কি করনীয়? এবং মসজিদের ইমাম সাহেবের কোন দায়িত্ব আছে কিনা? ২। নামাযের ওয়াজিব গুলোর মধ্যে ১টি ওয়াজিব হলো প্রত্যেক রোকনই মুক্তাদী ইমামকে অনুসরন করবে। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, নামাযের রোকনের কোন ব্যাখ্যা আছে কিনা? যেমন সিজদা একটি রোকন, এক্ষেএে সিজদায় যাওয়া আবার সিজদা থেকে উঠে বসা পর্যন্ত হচ্ছে একটা রোকন, এমন কিনা? তাহলে বসা ব্যক্তি ইমামের আগে সিজদায় গেলো, কিন্তু উঠা ইমামের সাথে হলো আবার হয় সিজদায় যাওয়া ইমামের সাথে কিন্তু সোজা হয়ে দাঁড়ানো চেয়ারে বসা ব্যক্তি ইমামের আগে উঠে গেলো। এসব ক্ষেএে নামায মাকরূহ তাহরীমীর সাথে আদায় হয় কিনা? হযরত একটু খোলাসা ভাবে উওর দিলে অনেক ভালো হত। আল্লাহ তাআলা আপনাকে ও আপনার পরিবারকে দোজাহানে কামিয়াবী দান করুন। ৩। মুসলমান মেয়েদের বিয়ের আগে নাম ছিল ফাতেমা বিন্তে কামাল বাবার নাম যুক্ত ছিল। এখন বিয়ের পর তার নামের সাথে স্বামীর নাম যুক্ত করা শরীয়ত সম্মত কিনা?

উত্তর :

প্রিয় দ্বীনী ভাই আপনার উত্তর দিতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
১। মুক্তাদী দাঁড়িয়ে, (নীচে জমিনে বা চেয়ারে) বসে যেভাবেই নামায আদায় করুক না কেন কোন অবস্থাতেই কোন আমল (যেমন রুকূতে যাওয়া, রুকূ থেকে উঠা, সিজদায় যাওয়া, সিজদাহ থেকে উঠা ইত্যাদি) ইমামের পূর্বে করবে না। কোন আমল ইমামের পূর্বে করা মাকরূহ এবং এর দ্বারা নামায মাকরূহ হয়ে যায়। হাদীস শরীফে এমন ব্যক্তির জন্য কঠোর ধমকি এসেছে। হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمَا يَخْشَى أَوْ أَلاَ يَخْشَى أَحَدُكُمْ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ وَالإِمَامُ سَاجِدٌ أَنْ يُحَوِّلَ اللَّهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ أَوْ صُورَتَهُ صُورَةَ حِمَارٍ
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পূর্বে সিজদাহ থেকে মাথা উঠিয়ে ফেলে সে কি এই ভয় করে না যে, আল্লাহ তাআলা তার মাথাকে গাধার মাথার ন্যায় করে দিতে পারেন অথবা তার চেহারাকে গাধার চেহারার ন্যায় করে দিতে পারেন।
তাই বসে নামায আদায়কারী মুক্তাদীগণ এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। তারা লক্ষ্য রাখবেন কোন আমল যেন ইমামের পূর্বে না হয়। এক্ষেত্রে তারা উক্ত আমলগুলো ইমামের একটু পরে এমনভাবে শুরু করবেন যাতে ইমামের পূর্বে না হয়ে যায়।
উল্লেখ্য যে, আপনি নামাযের প্রথম তাকবীরকে “তাকবীরে তাশরীক” উল্লেখ করেছেন। নামাযের প্রথম তাকবীরকে “তাকবীরে তাশরীক” বলে না। বরং “তাকবীরে তাহরীমা” বলে।
২। নামযের রোকন নামাযের ভিতরের এমন আমলসমূহকে বলে যা ছাড়া নামায আদায় হয় না। নামাযের মধ্যে রোকন ছয়টি। যথা-
ক। তাকরীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) বলা। (সূরা মুদ্দাছছির, আয়াত ৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৬১)
খ। ফরজ ও ওয়াজিব নামায দাঁড়িয়ে পড়া। (সূরা বাক্বারাহ, আয়াত ২৩৮; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১১১৭)
গ। ক্বিরাআত পড়া। (সূরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত ২০; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৩৮)
ঘ। রুকু করা। (সূরা হজ্ব, আয়াত ৭৭; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৭৪২)
ঙ। দুই সিজদাহ করা। (সূরা হজ্ব, আয়াত ৭৭; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৭৪২)
চ। শেষ বৈঠক করে নিজস্ব কোন কাজের মাধ্যমে নামায থেকে বের হওয়া। উভয়টি ফরজ। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ৪০৮; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ২৯৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩৭ (যাকারিয়া); আল বাহরুর রায়েক ১/৫১৩}
উক্ত আমলসমূহের ক্ষেত্রে পুরো রুকূ একটি রোকন। অনুরূপভাবে পুরো সিজদাহ একটি রোকন। কাজেই রুকূতে যাওয়া, দেরী করা, রুকূ থেকে উঠা এগুলো সবই রুকুর সম্পূরক আমল। সিজদাহের খেত্রেও অনুরূপ।
৩। নিয়ম তো হল নামকে পিতার দিকেই সম্পৃক্ত করা। মহিলা সাহাবিয়াগণও তাদের নাম পিতার দিকে সম্পৃক্ত করতেন। যেমন আয়েশা বিনতে আবূ বকর অথবা আয়েশা সিদ্দীকা। অথচ তার স্বামী পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হলেও আয়েশা মুহাম্মাদ বলে ডাকা হত না বা কোন মুহাদ্দিসও এমনভাবে উল্লেখ করেননি। এরপরেও কেউ নিজের স্বামীর দিকে নামকে নিসবত করতে চাইলে তাতে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কোন আপত্তি নেই।

Loading