প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম হযরত কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহ তা’য়ালার রহমতে ভালো আছেন। হযরত আমি ছোট কালে এবং বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি স্বপ্ন দেখেছি। অনুগ্রহ করে যদি আমার স্বপ্নে ব্যাখ্যা দিতেন তবে খুব খুশি হতাম। (যদি না দিতে চান তবে কোন আপত্তি নাই। শুধু আপনাকে আমার স্বপ্নগুলো জানানো উদ্দেশ্য।) স্বপ্ন নং ১। আমি তখন অনেক ছোট ক্লাস টু বা থ্রীতে পড়ি। আমার মা ও আমার ছোট মামা (যে এখন বিদেশে) আমাকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি প্রসীদ্ধ ঘটনা, যে একজন সাহাবী (রাঃ) হুজুরের মহরে নববীতে চুম্বন করার জন্য একটি পাওনার অভিনয় করে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তার চাদর মোবারক পিঠ থেকে সরিয়ে দেয় তখন তিনি মহরে নবুওয়াতে চুম্বন করেন। ঘটনাটি তারা আমার কাছে সুন্দর ভাবে বর্ণনা করার পর আমার মনে এমন একটি আগ্রহ পয়দা হয় যে যদি আমিও পারতাম। ঠিক সেদিন রাতেই আমি স্বপ্নে দেখি- “হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খালি গায়ে বসে আছেন। আমি তার পিছনে ছিলাম। আমি আস্তে করে গিয়ে তার পিঠের মহরে নবুওয়াতে চুম্বর করার পর লজ্জায় হতভম্ব। আর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার আব্বার সুরতে হাতে একটি প্লেটে পান্তাভাত খাচ্ছেন ও আমার কান্ড দেখে খুব হাসছেন আর আমাকে বার বার বলছেন, বল কি করলা? বল কি করলা?” এর পর আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অথ্যাৎ আমি যে তার মহরে নবুওয়াতে চুম্বন করলাম তা তিনি খুশি হয়ে বার বার শুনতে চাচ্ছেন ও আমার লজ্জা ভাঙ্গাতে চাচ্ছেন। স্বপ্ন নং ২। আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি আকাশে আছি। চারদিকে ও উপরে অন্ধকার। শুধু সামনে আল্লাহ তা’য়ালা একটি বড় সিংহাসনে বসে আছেন। আল্লাহ তা’য়ালার কুদরতি চেহারা দেখি নাই। শুধু তার বুক পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে দেখা যায়। আমি তার চেহারা দেখার চেষ্টাও করি নাই। কারণ আমি অপরাধী ছিলাম। আমি সহ আরো বেশ কয়েকজন আল্লাহ তা’য়ালার সামনে পায়ে সিকল বাধা অবস্থায় বসা। আমাদের সিকলের অপর মাথা আল্লাহ তা’য়ালার কুদরতি হাতে ছিল। কিছুক্ষণ পর আল্লাহ তা’য়ালা তার কুদরতি হাতে থাকা আমাদের পায়ের সিকলের মাথা উপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে আমাদেরকে বললেন যাও তোমাদের মাফ করে দিলাম। আমরা তখন খুশিতে পায়ে সিকল বাধা অবস্থায়ই (অপর প্রান্ত মুক্ত) লাফ দিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম আর খুশি হচ্ছিলাম যে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের মাফ করে দিয়েছেন। স্বপ্ন নং ৩। একটি বড় রাজপ্রসাদ ও এলাকা যেখানে ঠিক ভাবে ইসলামী হুকুমত চলছে না। আমি সহ আরো কয়েকজন সাহাবি প্রসাদ থেকে পলায়ন করে ঘোড়ায় চড়ে আসতেছি। কেউ একজন আমাদের দেখে পিছু ধাওয়া করলেও কিছু দুর এসে সে ফিরে যায়। আমাদের ধরতে পারে নাই। আর আমরা ঘোড়ায় চড়ে আসতে আসতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের কাছে চলে আসি। ( কবরটি মদিনা নয় বরং আমি ছোট কালে ৩৩ নং মিন্টুরোডের যে বাড়িতে বড় হয়েছি সেখানে পশ্চিম দিকে একটি মাঠের মত আছে যেখানটায় অনেক গাছপালা ও নিরিবিলি।) আমরা যখন কবরের কাছে গেলাম তখন কবরের বাহিরে খোলা পা বের করা ছিলো। আমি খুব ভক্তির সাথে একটি পায়ে খুব আস্তে স্পর্ষ করে সালাম করি। যখন কবরের ভিতরের দিকে খেয়াল করলাম তখন দেখলাম হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুয়ে আছেন এবং ছতরের কাপড় ঠিক না থাকায় আমি সম্মানের সাথে চোখের হেফাজত করি। এরপর দেখি আমার সালামের পর এবং সাহাবাদের আগমনে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আস্তে আস্তে কবর থেকে উঠে দাড়াচ্ছেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পরিপূর্ণ ভাবে উঠে দাড়ালেন তখন একজন সাহাবী হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন – হুজুর আয়শা (রাঃ) তো আপনার কথা মত কাজ করছেন না। তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আস্তে আস্তে হাটতে ছিলেন (যেমন আমরা কথা বলার সময় একদিক থেকে অন্য দিকে বার বার হাটি আর কথা বলি ঠিক সেরকম) আর সাহাবাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে ছিলেন। কিন্তু আমি বুঝি নাই যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলতে ছিলেন। আমি শুধু ভয়ে আর শ্রদ্ধায় চুপ চাপ অনড় ভাবে সাহাবাদের সাথে দাড়িয়ে ছিলাম আর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা শুনতে ছিলাম। একটু পরেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। স্বপ্ন নং ৪। আমি এক ঝলক দেখলাম বিশাল একটি বাহিনী জেহাদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছিলাম এর সেনাপতি আমাদের হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কিন্তু আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখি নাই। আমি পায়দল ছিলাম। আমার হাতে একটি বর্শা বা অন্য কোন যুদ্ধাস্ত্র ছিল। আমার পাশেই একটি ঘোড়ায় ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুফতি আব্দুস সালাম সাহেব (দাঃ) ছিলেন। আমি ইচ্ছা করেই মুফতি আব্দুস সালাম সাহেব (দাঃ) এর সাথে সাথে থাকছিলাম কারণ আমি বুঝতে পারছিলাম হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কোন নির্দেশনা দেন তবে তা আরবীতে দিবেন। আর আমি যেহেতু আরবী বুঝি না তাই আমি আব্দুস সালাম সাহেবের কাছ থেকে বুঝে নিতে পারবো। স্বপ্ন নং ৫। আমি আপনার সাইটে দেখলাম মুহাম্মাদ নাম রাখা যায়। এর পর রাতে শুয়ে আমার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করলাম আমাদের ছেলের নাম আজ থেকে মুহাম্মাদ। এর পর ঘুমালে স্বপ্নে দেখলাম- “আমি কোন একটি সংবাদ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেয়ার জন্য যাচ্ছি। পথে একটি টিনের ঘর। ঘরের উত্তর দিকে একটি জানালা। জানালার পাশ দিয়েই যাতায়াতের রাস্তা। জানালায় একটি লোক দাড়ানো যে ভিতরের কারো কথা শুনছেন। আমি দাড়ানো লোকটিকে অতিক্রম করে আবার পিছনে ফিরে লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলাম হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি ভিতরে আছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। পরে আমি পিছনে এসে জানালা দিয়ে দেখলাম যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি খাটের উপর লুঙ্গি,পাঞ্জাবী, টুপি, পাগড়ী পড়ে বসে আরো কয়েকজনের সাথে কথা বলছেন। আমি তখন জানালা থেকে সরে ঘরে পিছন দিয়ে ঘুরে বাড়ির দরজা যা দক্ষিণ দিকে ছিলো এসে দরজা দিয়ে ঘরে ঠুকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম করলাম এবং তার সাথে মুসাফা করলাম। এর পর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু বললাম এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আমাকে কিছু বললেন যা আমার মনে নাই।” এর পর আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। স্বপ্ন নং ৬। আমি দেখলাম একটি টিনের সেট ঘর। যা দেখতে অনেকটা স্কুল ঘরের মত লম্বা। যার অনেকগুলো কক্ষ। স্কুল ঘরটির দরজা পূর্ব মুখী। আমি সহ আরো অনেক মানুষ এ কথা জানতে পেরে ছুটে এসেছি যে এখানের আল্লাহ তা’য়ালা ও হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। যখন ঘরের সামনে পৌছলাম তখন একেবারে শেষে দক্ষিণের রুমে যার পরে আরো কোন রুম নেই আল্লাহ তা’য়ালা আছেন এবং তার সাথের পরের উত্তরের রুমে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছেন। সেখানের উভয় রুমেই অনেক মানুষ। আমি দৌড়ে আসছিলাম আর চিন্তা করছিলাম হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে তো আগে দেখেছি সুতরাং এখন আল্লাহ তা’য়ালাকে দেখবো। তাই আমি দক্ষিনের আল্লাহ তা’য়ালার রুমে গেলাম। আমি দেখলাম অনেক সুন্দর একজন দাড়ি ওয়ালা মানুষ (যিনি আল্লাহ তা’য়ালার সূরতে ছিলেন) তার সাথে আরো বেশ কয়েকজন মানুষ আছে। আমি রুমে ঢুকে আল্লাহ তা’য়ালাকে দেখে তাকে প্রশ্ন করার আগেই আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে হাসি মুখে বললেন থাক থাক আর বলতে হবে না ভালো আছি। আমি তখন বুঝলাম তিনি আল্লাহ তা’য়ালা সুতরাং তিনি সবই জানেন সুতরাং আমি কি প্রশ্ন করবো তা তার জানা স্বাভাবিক। এরপর আমি তাকে যে প্রশ্নই করতে চাই দেখলাম আমার প্রশ্ন করার আর প্রয়োজন হচ্ছে না। মনে প্রশ্ন আসছে আর আল্লাহ তা’য়ালা আমার অন্তর দেখে দেখেই উত্তর দিচ্ছে। আমি এতে একটুও অবাক হলাম না। কারণ আমি ভাবছিলাম তিনি আল্লাহ আমার মুখে প্রশ্ন করার প্রয়োজন নেই। এর পর আমিও স্পষ্ট ভাবে অনুভব করলাম আমার অন্তরের সকল প্রশ্ন ‍ গুলো কি ভাবে অন্তরে আসছে আর তিনি স্পষ্ট ভাবে তা দেখছেন আর প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
আল্লাহ তাআলার রহমতে ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ।
১+৫। মাশাআল্লাহ অত্যন্ত ভালো দেখেছেন। আসলে আপনার প্রতিটি স্বপ্নই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সুসংবাদ। এই স্বপ্নে আপনাকে প্রতিটি আমল সুন্নাতে নববীর আলোকে করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।
২। এই স্বপ্নে আপনাকে বুঝানো হয়েছে যে, একদিন আল্লাহ্‌র সামনে দাঁড়াতে হবে সবকিছুর হিসাব নিকাশ দেওয়ার জন্য। কাজেই তুমি সেভাবে আমল করতে থাক।
৩। এটা আল্লাহ তাআলা আপনাকে নেক কাজে আরো বেশী উদ্বুদ্ধ করার জন্য দেখিয়েছেন।
৪। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে, হক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যেন আপনি অনড় থাকেন এবং আল্লাহ তাআলার দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আপনাকে মেহনত করতে হবে।
৬। এর দ্বারা আপনাকে বুঝানো হয়েছে আল্লাহ তাআলা অন্তর্যামী। তাই অন্তরের সকল গুনাহের ব্যাপারেও সতর্ক থাকা উচিত এবং আত্মশুদ্ধির জন্য যথেষ্ট ফিকির করা উচিত।

Loading