প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম হাদীসে আছে, মা বাবার প্রতি সন্তানের আনেক দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব যত্নের সাথে পালন করতে হবে অন্যথায় গোনাহগার হবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে ১। সন্তান বলতে ছেলে মেয়ে উভয়কে বুঝান হয়েছে? এখেত্রে মেয়ের দায়িত্ব কতটুকু? ২। যদি কোনো মা বাবাকে তার ছেলে সন্তান দেখাশোনা না করে বা ছেলে সন্তান নাই সেখেত্রে হাদীস কি? ৩। মেয়ে যদি বিবাহিতা হয় এবং স্বামী বা শশুরবাড়ির লোকজন মায়ের খেদমত করা পছন্দ না করে সেখেত্রে কি করনীয়? ৪। মায়ের দেখাশোনার জন্য যদি কোনো লোক না থাকে, মেয়ে তার সাথে মাকে এনে রাখে এবং তাতে শশুরবাড়ির লোকজন অখুশি হয় তখন কি করনীয়? ৫। যদি স্বামীর আর্থিক অবস্থা ভালো না হয় সেখেত্রে মেয়ের করনীয় কি? স্বামীর অবাধ্য হয়ে মায়ের দেখাশোনা করা যাবে কি? ৬। মা বাবাকে দেখাশোনা করার কেউ না থাকলে, হাদীস অনুযায়ী মেয়ের দায়িত্ব কতখানি এবং দেখাশোনার কেউ থাকলে দায়িত্ব কতখানি? বিস্তারিতভাবে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১+৫+৬। হ্যাঁ, সন্তান বলতে ছেলে মেয়ে উভয়কে বুঝান হয়েছে। অর্থাৎ ছেলে মেয়ে প্রত্যেকের উপরই পিতা-মাতার হক রয়েছে।
আর মেয়ের দায়িত্ব হল, যদি পিতামাতা অসচ্ছল ও মুখাপেক্ষী হয় এবং মেয়ে সচ্ছল হয় (চাই মেয়ে বিবাহিতা হোক বা অবিবাহিতা) তবে সেক্ষেত্রে মেয়ের উপর পিতামাতার ভরণপোষণ ওয়াজিব। এক্ষেত্রে যদি তার সচ্ছল অন্য ভাইবোন থাকে তবে তাদের উপরেও ভরণপোষণ সমানভাবে ওয়াজিব। আর পিতামাতা সচ্ছল হলে সন্তানের উপর তাদের ভরণপোষণ ওয়াজিব নয়। এক্ষেত্রে তারা তাদের সাথে উত্তম আচরণ করবে এবং তাদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখবে। তাদের শরীয়তসম্মত আদেশ মেনে চলবে এবং যথাযথভাবে তাদের খেদমত করতে থাকবে। খেয়াল রাখবে তারা যেন কষ্ট না পায়।
আর পিতামাতা অসচ্ছল এবং মেয়েও অসচ্ছল হলে সেক্ষেত্রে মেয়ে সাধ্যমত পিতামাতাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে মেয়েরা ঘরোয়া পরিবেশে কোন হস্তশিল্প (যেমন সেলাই এর কাজ) বা হাঁস মুরগী পালন করে তাদের সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু স্বামীর অগোচরে তার সম্পদ থেকে পিতামাতাকে কিছু দেওয়া জায়েয হবে না। তবে স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে কোন সমস্যা নেই।
২। যদি কোন ছেলে পিতামাতার হক আদায় না করে বা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে দেখাশোনা না করে তবে তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠোর ধমকীর কথা এসেছে।
আর শুধু মেয়ে থাকলে তার করনীয় পূর্বের উত্তর থেকে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা।
৩+৪। যদি মায়ের দেখাশোনার জন্য মেয়ে ব্যতীত অন্য কেউই না থাকে আর মা ও মেয়ে উভয়েই অসচ্ছল হয় সেক্ষেত্রে নিয়ম হল রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তার ব্যয়ভার বহন করা হবে। এটা অসম্ভব হলে জনসাধারণের উপর তার ভরণপোষণ ওয়াজিব। আর মা যদি শারীরিক ভাবে অক্ষম হয় এবং তাকে মেয়ে ব্যতীত দেখাশোনার কেউ না থাকে তবে তার খেদমতের অন্য কোন ব্যবস্থা (যেমন কোন খাদেমা নিযুক্ত করা) না করা গেলে তখন মেয়ের উপরেই তার খেদমত করা জরুরী হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে স্বামী বা শ্বশুর বাড়ির লোকদেরকে হেকমতের সাথে বুঝাবে এবং সমন্বয়ের সাথে সামনে চলার চেষ্টা করবে।
আর শারীরিক ভাবে অক্ষম না হলে তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে। তার খোঁজ খবর নিবে। মাঝে মধ্যে তার সাথে স্বামীর অনুমতি নিয়ে সাক্ষাত করবে এবং সাধ্যমত তার খেদমত করবে। পিতামাতার সাথে ভালো আচরণ যদি স্বামী বা শ্বশুর বাড়ির লোকজন পছন্দ নাও করে তবুও তা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে স্বামীর কথা শোনা যাবে না। কেননা হাদীস শরীফে আছে, আল্লাহ তাআলার নাফরমানী করে কোন মাখলূকের আনুগত্য করা যাবে না। তাই পিতামাতার সাথে সর্বদা ভালো আচরণ জারী রাখতে হবে।
সুত্রসমূহঃ সূরা ইসরা, আয়াত ২৪; সূরা লুকমান, আয়াত ১৫; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৩১০৪; রদ্দুল মুহতার ৩/৬২১-৬২৫; ইমদাদুল আহকাম ২/৮৮৯

Loading