প্রশ্ন : সালাম নিবেন ১। “হুরমতে মুছাহারাহ” কাকে বলে? এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। ২। “দেনমহর ” আমরা বিয়েতে অনেক টাকা দেনমহর ধরে থাকি। কিন্তু তা নগদ পরিশোধ করা সাধ্যের বাইরে, তখন স্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে (উক্ত টাকা DPS করে ১০- ১৫ বছরে বা আরো বেশি) পরিশোধ করে। বা পরিশোধ করতে পারে না। মাফ চেয়ে নেয়া হয়। সেও মাফ করে দিতে বাধ্য হয়। এর হুকুম বা মাসআলা কি?

উত্তর :

১। ওয়া আলাইকুমুস সালাম
সালাম আসসালামু আলাইকুম বলে দেওয়াই সুন্নাত।
নিম্নোক্ত লিঙ্কের বিষয়বস্তুর শেষের দিকে আপনি হুরমাতে মুছাহারাহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন-
http://muftihusain.com/article/আমাদের-প্রিয়তমা-স্ত্রীগন/
২। বিবাহে মোহর সাধ্যের মধ্যে ধার্য করতে হয়। এটা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক স্বামীর উপর স্ত্রীর জন্য একটা নির্ধারিত হক। যা স্বামীর জন্য আদায় করা জরুরী। আদায় না করার নিয়তে অধিক মোহর ধার্য করা যেমনিভাবে গোনাহের কাজ তেমনিভাবে স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্কও জায়েয হয় না। হযরত উমর (রাঃ) বলেন-
لاَ تُغَالُوا بِصُدُقِ النِّسَاءِ فَإِنَّهَا لَوْ كَانَتْ مَكْرُمَةً فِى الدُّنْيَا أَوْ تَقْوَى عِنْدَ اللَّهِ لَكَانَ أَوْلاَكُمْ بِهَا النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- مَا أَصْدَقَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- امْرَأَةً مِنْ نِسَائِهِ وَلاَ أُصْدِقَتِ امْرَأَةٌ مِنْ بَنَاتِهِ أَكْثَرَ مِنْ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ أُوقِيَّةً
অর্থঃ তোমরা মহিলাদের মোহর নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। যদি এটা দুনিয়াতে সন্মানের কারন হত অথবা আল্লাহ তাআলার নিকট খোদাভীতির কিছু হত তবে তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বেশী উপযুক্ত ছিলেন। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার স্ত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে অনুরূপভাবে মেয়েদের মধ্য থেকে কারো ১২ উকিয়ার বেশী মোহর ধার্য করেননি।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ২১০৮
তাই মোহর এমনভাবে ধার্য করা উচিত যাতে তা আদায় করা যায়। উত্তম হল স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের পূর্বেই মোহর পরিশোধ করে দেওয়া। এটা স্বামীর দায়িত্বে থাকা একটা ঋণ। যা অন্যান্য ঋণের মত আদায় করা জরুরী। তবে স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সন্তুষ্টিচিত্তে মোহরের টাকা হাতে পাওয়ার পর মোহরের কিছু অংশ বা পুরো মোহর স্বামীকে হেবা করে দেয় তবে তা মাফ হয়ে যাবে। কিন্তু চাপে পড়ে মাফ করলে বা লজ্জায় মাফ করলে মাফ হবে না। সম্পূর্ণ সন্তুষ্টিচিত্তে মাফ করলেই কেবল মাফ হয়। অনেককেই দেখা যায় বাসর রাতেই স্ত্রীকে বিভিন্নভাবে ভুলিয়ে ভালিয়ে মাফ চাইতে থাকে। স্ত্রীও লজ্জার খাতিরে মাফ করতে বাধ্য হয়। এভাবে মাফ করলেও মাফ হবে না। স্বামী কর্তৃক মোহর মাফের জন্য এভাবে চাপাচাপি করা বা দুর্ব্যবহার করা অথবা অন্য কোন হীলা করা জায়েয নয়। স্বামীর উচিত একেবারে না পারলেও ধীরে ধীরে তা পরিশোধ করতে থাকা। টাকা হাতে পাওয়ার পর যদি স্ত্রী মোহরের কোন অংশ সন্তুষ্টিচিত্তে স্বামীকে হাদিয়া দেয় তবে তা গ্রহন করা জায়েয। তবে টাকা হাতে না দিয়ে অন্তরের সন্তুষ্টি বুঝা মুশকিল। অনেককেই দেখা যায় মোহরের টাকা মাফ করে দেওয়ার পরেও কোন বাক বিতণ্ডার সময় পুনরায় মোহর চায়। এ থেকেই বুঝা যায় সে পূর্বে সন্তুষ্টিচিত্তে মোহর মাফ করেনি। তাই হাকীমুল উম্মাত আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) মাফ করার ক্ষেত্রে মোহর হাতে দেওয়ার কথা বলেছেন।
আর ব্যাংকে DPS করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। একান্ত প্রয়োজনে কারেন্ট একাউন্ট খোলা জায়েয। তাই আপনি যখন যা হস্তগত হয় তা একাউন্টে না রেখে স্ত্রীকে দিয়ে দিবেন।-সূরা নিসা, আয়াত নং ৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২০৬৯৫; তাতারখানিয়া ৩/৪২, ৪৩

Loading