প্রশ্ন : হযরত আমি জন্মনিয়ন্ত্রন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। আপনার প্রশ্নোত্তর ক্যাটাগরিতে এমন কোন অপশন পেলাম না। অনুগ্রহ করে উত্তর দিবেন।

উত্তর :

জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি গ্রহণের লক্ষ্য নানা ধরনের হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রতিরোধ করা এবং সুখী সংসার গড়া। যার কারণ হিসাবে বলা হয় যে, এটা গ্রহণ না করলে, মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য ও বাসস্থান প্রভৃতির ভারসাম্য রক্ষা পাবে না। অথচ এ বিশ্বাসের দ্বারা আল্লাহ তাআলার রাজ্জাকিয়্যাতের (রিযিকদাতা হওয়ার) অস্বীকার করা হয়, যা কুফর এবং ঈমান বিধ্বংসী। কারণ আল্লাহ তাআলা সকলের রিযিকের দায়িত্ব নিজে নিয়েছেন। কোন মাখলূকের উপর এ দায়িত্ব অর্পন করেননি। আল্লাহ তাআলা বলেন “তোমরা দারিদ্রের ভয়ে নিজ সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমি তাদেরকেও রিযিক দেই এবং তোমাদেরকেও”।- সুরা ইসরা, আয়াত ৩১
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন-
“আমি তাদের কাছে কোন রকম রিযিক চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিক। আল্লাহ নিজেই তো রিযিকদাতা, প্রবল পরাক্রমশালী”।- সূরা যারিয়াত, আয়াত ৫৭, ৫৮

কাজেই মানুষ রিযিক অন্বেষণের দায়িত্ব হিসেবে চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু কে কতটুকু পাবে এটা আল্লাহ তাআলার ফয়সালার উপর নির্ভরশীল। এ আক্বীদা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর ব্যতিক্রম কোন বিশ্বাস রাখা কুফর।

জন্ম নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রচলিত তিনটি ব্যবস্থা রয়েছে।
১। স্থায়ী ব্যবস্থা: যেমন পুরুষদের জন্য ভ্যাসেকটমি ও মহিলাদের জন্য লাইগেশন। এ ব্যবস্থায় অপারেশনের মাধ্যমে পুরুষ বা নারীর সন্তান দেওয়ার ও নেওয়ার ব্যবস্থা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জায়েয নয় বরং হারাম। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য বা কারণ যাই হোক না কেন। কেননা এ ব্যবস্থার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার দেওয়া প্রজনন ক্ষমতাকে নষ্ট করা হয় এবং আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকে বিকৃত করা হয়, যা সম্পূর্ণ হারাম।
তবে কারো বিশেষ কোন উযর থাকলে বা স্থায়ী কোন উযর থাকলে সেক্ষেত্রে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জায়েয। যেমন কোন মহিলার এমন কোন অসুস্থতা আছে যে, সন্তান ধারণ তার পক্ষে সম্ভব নয়। বরং সন্তান পেটে আসলে তার মারা যাওয়ার আশংকা আছে অথবা কোন মহিলার গর্ভাশয়ে এমন কোন রোগ রয়েছে যে, তা কেটে না ফেললে তার মৃত্যুর আশংকা রয়েছে। এসকল ক্ষেত্রে বিজ্ঞ দ্বীনদার ডাক্তারের পরামর্শে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জায়েয।

২। মেয়াদী ব্যবস্থা: যেমন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ইনজেকশন নেওয়া অথবা আই,ইউ,ডি (এক ধরনের প্লাষ্টিক কয়েল) ব্যবহার করা ইত্যাদি। এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা মাকরূহ।

৩। সাময়িক ব্যবস্থা: যেমন কনডম ব্যবহার করা, জন্মনিরোধক পিল/বড়ি ব্যবহার করা ইত্যাদি।
এ পদ্ধতি গ্রহণের উদ্দেশ্য যদি এটা হয় যে, এতে পৃথিবীর লোকসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত থাকবে, খাদ্য সংকট হবে না ইত্যাদি তবে তা জায়েয নয়। কেননা এটা সম্পূর্ণ কুফরী ধ্যান ধারণা।
তবে এ পদ্ধতি যদি দ্বীনদার কোন ডাক্তারের পরামর্শে স্ত্রী বা সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে করা হয় তবে তা জায়েয।
আর এ পদ্ধতি যদি এ কারণে গ্রহণ করা হয় যে, সন্তান কম হলে ঝামেলা কম হবে, ছিমছাম থাকা যাবে এবং আক্বীদাগত কোন সমস্যা না থাকে তবে তা স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে জায়েয। যদিও তা অনুত্তম। শরয়ী চাহিদার খেলাফ। কেননা হাদীস শরীফে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমি কিয়ামতের দিন উম্মতের আধিক্য নিয়ে গর্ব করব।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে জন্ম নিয়ন্ত্রনের বিষয়টি একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন এন.জি.ও জন্ম নিয়ন্ত্রেনের পক্ষে যে ঢালাওভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে তা ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই আপত্তিকর। কোন কোন মহলে এটাকে বাধ্যতামূলক করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আসলে কাফের মুশরিকরা কখনো চায় না যে, মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ুক। তারা মুসলিম সমাজে যিনা ব্যভিচার ব্যপকভাবে ছড়িয়ে মুসলমানদেরকে আল্লাহ তাআলার সাহায্য থেকে বঞ্চিত করে গযবে ফেলার উদ্দেশ্যে এটা চালু করেছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় বর্তমানে প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছিল না। বিভিন্ন হাদীসে আযলের কথা পাওয়া যায়। কিন্তু আযল আর বর্তমান জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি এক নয়। আযল নিশ্চিত কোন পদ্ধতি নয়, অপরদিকে প্রচলিত প্রথা অনেকটা নিশ্চিত পন্থা। সে যামানায় আযল ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে করা হত। কিন্তু বর্তমান পদ্ধতি ছোট ও সুখী পরিবার গড়ার স্বপ্নে করা হয় যা একেবারে অমূলক ও নাজায়েয। তাছাড়া কোন কোন সাহাবী ব্যক্তিগতভাবে আযলের অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাক্তিগত ভাবে আযলের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু সাথে সাথে ঈমান শুধরিয়ে দিয়েছেন এই বলে যে, জেনে রাখ কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়াতে যত সন্তান আসার আসবেই। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটাকে অপছন্দ করেছেন। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল যে, হাদীস শরীফে যে পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে আযলের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তা বর্তমান জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতির প্রেক্ষাপটের সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই হাদীসের আযলের উপর অনুমান করে বর্তমান জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ঢালাওভাবে অনুমোদন দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ২০৫২; রদ্দুল মুহতার ৩/১৭৩; ইমদাদুল মুফতীন, পৃষ্ঠা ৯৭৫

Loading