প্রশ্ন : হযরত, আসসালামু আলাইকুম,দয়া করে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে কৃতার্থ করবেন। প্রশ্নগুল হলঃ১. ফাসেক ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করার নিয়ম কি? ২. ফাসেক হওয়ার সংজ্ঞা কি?৩. যে বা যারা দাড়ি আংশিক কামায় তারা কি ফাসেক?৪. চুল ন্যাড়া করা অথবা বাবরি রাখা ছাড়া অন্যভাবে কাফেরদের অনুকরনে রেখা বানিয়ে সেলুনে কাটলে তাদের কি ফাসেক বলা হবে?৫. যাদের বাড়িতে টেলিভিশ্ন আছে তারা কি ফাসেক?৬. যারা যেকোন ভাবে সুদের সাথে জড়িত তারা কি ফাসেক?৭. যারা লম্বা জুব্বা বা আবা খাবা পরিধান করে যা পায়ের টাখনু ছুয়ে যায় বা অতিক্রম করে যায় তারা কি ফাসেক?৮. ছগিরাহ গুনাহ বার বার করা কি কবিরা গুনাহ?৯. বাইয়াত বিহীন জীবন অতিবাহিত করা এবং এভাবে মারা গেলে কি ঈমানহীন ভাবে মৃত গন্য হবে?

উত্তর :

وعليكم السلام

উত্তরঃ ১. ফাসেক ইমামের পেছনে নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী। তাকে সরিয়ে অন্য কোন যোগ্য লোককে ইমাম বানানো ওয়াজিব। তবে যদি তার চেয়ে উত্তম, যোগ্য লোক পাওয়া না যায় তবে সেই ইমামতি করবে। এমতবস্থায় অন্য কোথাও নামায পড়ে নিবে। তবে যদি এটা সম্ভব না হয় এবং তাকে অপসরণ করলে ফেতনার আশংকা হয় তবে একাকি না পড়ে তার পিছনেই নামায পড়বে। -রদ্দুল মুহতার ৪/২৬৪,১/৫৫৯ ;আল বাহরুর রায়েক ১/৬১০,৬১১; হাশিয়ায়ে ত্বাহত্বাবী পৃ: ৩০৩।

২. যে প্রকাশ্যে গোনাহে কবীরাহ করে সে ফাসেক।-রদ্দুল মুহতার ১/৫৬০,তাবয়ীনুল হাক্বায়েক ১/১৩৪।

৩.দাড়ী কমপক্ষে একমুষ্টি রাখা ওয়াজিব। এর পূর্বে দাড়ী ছাটা বা কামানো নাজায়েয। আর যে এমনটি করে সে ফাসেক গন্য হবে।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪০৭,কিতাবুল আছার পৃ: ১৯৮।

৪. কাফেরের অনুকরনে চুল কাটা নাজায়িয। হাদীসে এ থেকে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে । কেউ জানার পরেও এভাবে চুল কাটতে থাকলে সে ফাসেক গন্য হবে। চুল কাটা বা রাখার পদ্ধতি তিনটি।
(১) বাবরি (যা সর্বোচ্চ কাধ পর্যন্ত হতে পারে)।
(২) হলক করা।
(৩) সবদিকে সমান করে কাটা।
প্রথম দুটি সুন্নাত। তৃতীয়টি জায়েয মাত্র।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৯৫ ; ফাতহুল বারী ১০/৩৬৫ ;সুনানে তিরমিজী,হাদীস নং ২৬৯৫ ; রদ্দুর মুহতার ৬/৪০৭ ; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৭ ; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৮১-৮৭।

(৫) বর্তমানে টেলিভিশনের জায়েয পদ্ধতিতে ব্যবহারের সুযোগ নেই। কাজেই যে ব্যক্তি টেলিভিশন রাখে বা দেখে তিনি অবশ্যই গুনাহগার হবেন।- সহীহ বুখারী,হাদীস নং ৫৯৫০; তাকমিলাতুল ফাতহুল মুলহিম ৪/১৬৪,আদ্দুররুল মুখতার ৫/২৪৫।

(৬) হাঁ,সুদের সাথে জড়িত ব্যক্তি ফাসেক।-সুরা বাকারাহ ,আয়াত নং ২৭৯ ; সহীহ মুসলিম ,হাদীস নং ৪১৭৭।

(৭) পুরুষের জন্য দাঁড়ানো অবস্থায় টাখনু অতিক্রম করে এমন কোন জামা,পায়জামা, লুঙ্গি,প্যান্ট,আবা-কাবা,জুব্বা,কোর্তা,পাঞ্জাবি ,চাদর ইত্যাদি পরিধান করা জায়েয নেই। কাজেই কেউ ইচ্ছাকৃত এমনটি করতে থাকলে তিনি ফাসেক গন্য হবে। তবে কারো যদি কখনো কখনো এমন হয় আর সে লক্ষ্য করার পর উপরে তুলে নেয় তাহলে তার কথা ভিন্ন।
-সহীহ বুখারী,হাদীস নং ৫৭৮৭ ; সুনানে নাসাঈ,হাদীস নং ৫৩৪৬।

৮। হাঁ,সগীরাহ গুনাহ বারবার করলে তা কবীরাহ হয়ে যায় ।-ফাতহুল বারী ২/১২ ; আল বাহরুর রায়েক ৫/২০৯।

৯। ঈমানহীন মৃত্যু তো বলা যায় না,তবে প্রত্যেকের আত্মশুদ্ধি করা ফরজ। প্রতিটি মানুষের অন্তরে ১০টি বাতেনী রোগ রয়েছে। যথা – (১) লোভ (২) অহেতুক কথা বলার আগ্রহ (৩) অযথা ক্রোধ (৪) হিংসা (৫) কৃপনতা (৬) পদের মোহ (৭) দুনিয়ার মোহ (৮) অহংকার (৯) খোদপছন্দী (১০) রিয়া বা লোক দেখানো প্রবনতা। এগুলো অন্তর থেকে দুর করে ১০টি ভালো গুন তথা (১) তাওবা (২) খোদা ভীতি (৩) দুনিয়ার প্রতি অনিহা (৪) সবর (৫) শুকর (৬) এখলাস (৭) তাওয়াক্কুল (৮) আল্লাহ ও তার রাসুলের মহব্বত (৯) তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্টি (১০) মৃত্যু চিন্তা অর্জন করা এবং সর্বদা আল্লাহ তাআলার ধ্যান অর্জন করা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়ষ্ক নর-নারীর উপর ফরজে আইন । আর একেই আত্মশুদ্ধি বলে।

এটা কখনও একা একা অর্জন হয় না। কুরআনে কারীমের অসংখ্য আয়াত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অগনিত হাদীস ,সাহাবায়ে কেরাম,তাবেঈন, তাবে তাবেঈন,আইম্মায়ে মুজতাহিদীনসহ সকল যুগের আল্লাহ ওয়ালাদের আমল ও বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা একথা স্বীকৃত যে ,আত্মশুদ্ধির জন্য এমন কোন শাইখের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক রাখা জরুরী যিনি অন্য শাইখের সোহবাতে থেকে নিজের আত্মার পরিশুদ্ধি করেছেন।

উল্লেখ্য যে , আত্মশুদ্ধির জন্য কোন আল্লাহ ওয়ালা শাইখের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক রেখে অন্তরের রোগের চিকিৎসা করা জরুরী। তবে হাতে হাত রেখে বাইয়াত হওয়া বা তার মুরীদ হওয়া জরুরী না। বরং মুস্তাহাব ও বরকতের কাজ।

কাজেই কেউ নিজের আত্মশুদ্ধি না করে মৃত্যুবরন করলে সে ফরজ তরককারী এবং মারাত্মক গোনাহগার হবে। তার ঐ বাতেনী রোগের কারনে যে গোনাহসমুহ হবে তার শাস্তি তাকে ভোগ করতে হবে।-সুরা তাওবাহ ১১৯,আনআম ১২০,আশ শামস ৭-৯ ; সুনানে আহমাদ হাদীস নং ৯৬৭৫ ; রদ্দুল মুহতার ১/৪৩ ;এমদাদুল ফাতাওয়া ৫/১৩৯ ;ফাতওয়া মাহমুদিয়া ১৫/৮৮।

Loading