প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আমি একজনকে জানি যে, তার মা ও বাবার সাথে খুবই দুর্ব্যবহার করত। তার দুর্ব্যবহার এতই চরমে পোঁছেছিল যে, একদিন তার মা তার কথা সহ্য করতে না পেরে কষ্টে হার্ট এটাক করে মারা যান। ছেলেটির বাবাও অনেক কষ্ট নিয়ে মারা যান। এরপর থেকে ছেলেটির জীবনে নানান ধরণের শাস্তি ও বালা-মুসিবত নেমে আসে। প্রশ্ন হচ্ছে: এই ছেলেটা কি কবরে/আখেরাতে ধরা খাবেই, নাকি তার মুক্তির কোনো উপায় আছে?

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
আসলে ইসলামে নিরাশ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বরং আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে নিরাশ হওয়া জঘন্যতম গোনাহ। বান্দার যতক্ষণ হায়াত থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত তার পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মালিককে রাজী খুশী করার সুযোগ থাকে। যার উজ্জ্বল প্রমান হাদীস শরীফে পাওয়া যায়। যেমন এক ব্যক্তি একশত হত্যা করার পরেও তার সংশোধনের আকাঙ্ক্ষা ও অনুশোচনার দরুন আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে সর্বদা যিনা করা সত্ত্বেও এক মহিলা কুকুরের প্রতি দয়া দেখানোর দরুন আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিয়েছেন।
তাই এখন উক্ত ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নিকট খালেছভাবে তাওবা করে নিবে এবং তার উপর পিতামাতার মৃত্যু পরবর্তী যে সাতটি হক রয়েছে তা যথাযথভাবে আদায় করবে। পিতামাতার মৃত্যু পরবর্তী সাতটি হক হল-
১। তাঁদের মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করা।
২। সওয়াব রেছানী করা।
৩। তাঁদের সাথী-সঙ্গী ও আত্মীয়-স্বজনদের সম্মান করা।
৪। সাথী-সঙ্গী ও আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য করা।
৫। শরী‘আতসম্মত ওসিয়ত পুরা করা।
৬। ঋন পরিশোধ ও আমানত আদায় করা।
৭। মাঝে মাঝে তাদের কবর যিয়ারত করা।
হাদীস শরীফে রয়েছে-
عَنْ أَبِى أُسَيْدٍ مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ السَّاعِدِىِّ قَالَ بَيْنَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِى سَلِمَةَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ بَقِىَ مِنْ بِرِّ أَبَوَىَّ شَىْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ بَعْدَ مَوْتِهِمَا قَالَ « نَعَمِ الصَّلاَةُ عَلَيْهِمَا وَالاِسْتِغْفَارُ لَهُمَا وَإِنْفَاذُ عَهْدِهِمَا مِنْ بَعْدِهِمَا وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِى لاَ تُوصَلُ إِلاَّ بِهِمَا وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا »
অর্থঃ হযরত আবু উসাইদ মালিক ইবনু রবীআহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কোনো এক দিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে বসা ছিলাম। এমন সময় বনূ সালামা সম্প্রদায়ের জনৈক ব্যক্তি এসে আরয করল, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! পিতা-মাতার মারা যাবার পরও আমার উপর তাদের প্রতি সদাচারণ করার দায়িত্ব আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তাদের জন্য দুআ করবে, তাদের গুনাহের মাগফিরাত প্রার্থনা করবে, তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করবে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে এ জন্য উত্তম ব্যবহার করবে যে, এরা তাদেরই আত্মীয় বন্ধু-বান্ধব এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান দেখাবে।–সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১৪২; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৬৬৪
অন্য হাদীসে রয়েছে-
عن ابن عمر -رضي الله تعالى عنهما- أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال: “إِنّ مِنْ أَبَرِّ البِرِّ أَنْ يَصِلَ الرَّجُلُ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ بَعْد أَنْ يُولِّي অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, পিতা-মাতার প্রতি সর্বাধিক উত্তম আনুগত্য হল, তাদের মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গী সাথীদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।-সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬৭৯
কাজেই সন্তান যখন নিজ জীবদ্দশায় পিতামাতার হক আদায় করে না, তবে মৃত্যুর পর উপরোক্ত হকগুলো যথাযথভাবে আদায় করে এবং তাদের জন্য বেশী বেশী ঈছালে ছাওয়াব করে ইংশাআল্লাহ আশা করা যায়, কিয়ামতের দিন পিতামাতা উক্ত ছাওয়াব দেখে সন্তানকে মাফ করে দিবেন। আর খালেছভাবে তাওবা করলে আল্লাহ তাআলাও মাফ করে দিবেন ইংশাআল্লাহ।

Loading