প্রশ্ন : হযরত ,আমার প্রশ্ন হলো: কবর যিয়ারতের উক্ত আমল( বিভিন্ন সুরা পড়াটা) কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বা সাহবীদের দ্বারা প্রমানিত? শারীরিক আমল তথা কুরআন পড়ে মৃত্যুব্যক্তি কে ঈছালে ছাওয়াব করাটা কি হাদীস দ্বারা প্রমানিত? মেহেরবানী করে দলীল সহ জানালে খুশি হবো।
উত্তর :قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اقْرَءُوهَا عَلَى مَوْتَاكُمْ يَعْنِي يس
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত কর।-সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩১২৩ ; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৩০০২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২০৩০১।
উল্লেখিত হাদীসটি দ্বারা যেমনিভাবে মৃত ব্যক্তির (লাশের) পাশে বসে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করা বুঝা যায় তেমনিভাবে দাফনের পরেও তিলাওয়াত করা বুঝা যায়। কেননা হাদীসে দাফনের পূর্বে বা পরে এমন কোন কথা বলা হয়নি। বরং উলামায়ে কেরাম বলেছেন হাদীসটি দাফনের পরবর্তী তিলাওয়াত প্রমান করার অধিক উপযুক্ত।(মিরকাতুল মাফাতীহ৫/৩২৯) কেননা এর বরকতে মৃত ব্যক্তির প্রশ্নোত্তর সহজ হয়। এ কারনেই একাধিক সহীহ হাদীসে দাফনের পরে মৃত ব্যক্তির প্রশ্নোত্তর সহজের জন্য দুআ করতে বলা হয়েছে।–সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৬; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩২২৩।
হযরত ইবনে উমর(রাঃ) মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তার মাথার নিকট সূরা বাকারার প্রথমের অংশ এবং পায়ের নিকট শেষের অংশ পড়া পছন্দ করতেন।–বাইহাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীস নং ৭৩১৯।
من مر على المقابر فقرأ فيها إحدى عشرة مرة ( قل هو الله أحد ) ثم وهب أجره الأموات أعطي من الأجر بعدد الأموات
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি কোন কবরস্থানের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে এগার বার সূরা ইখলাস পড়ে অতঃপর তার ছাওয়াব মৃত ব্যক্তিদের জন্য বখশে দেয়, তাকে মৃত ব্যক্তিদের সমপরিমাণ ছাওয়াব দেওয়া হবে।–কানযুল উম্মাল, হাদীস নং ৪২৫৯৬; শারহুস সুদুর, পৃষ্ঠা ১২৩।
عن أنس أن رسول الله قال من دخل المقابر فقرأ سورة يس خفف الله عنهم وكان له بعدد من فيها حسنات
অর্থঃ হযরত আনাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করে আল্লাহ্ তাআলা তাদের (কবরবাসীদের) আযাব লাঘব করে দেন।–ইলাউস সুনান, হাদীস নং ২৩২২ (৮/৩৪২)।
এধরনের আরো বেশ কিছু হাদীস রয়েছে যেগুলো কবরের নিকট কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করে মৃত ব্যক্তির জন্য বখশে দেওয়ার বৈধতা প্রমান করে। হাদীসগুলো যদিও দুর্বল তবে সমষ্টিগতভাবে তা সনদের আধিক্যের কারনে হাসান লি গাইরিহির পর্যায়ে পৌঁছে। উলূমুল হাদীসে যারা সাধারন জ্ঞান রাখেন তারা বিষয়টি জানেন। তাছাড়া ফাজায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য। এ মাসআলার ব্যপারে আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন- উমদাতুল কারী শরহে বুখারী ৬/৭; মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ ৫/৪৬৫(শামেলা); শাওকানী, নাইলুল আউতার ৪/২৫৪।
এছাড়া শারীরিক ইবাদাতের ছাওয়াব মৃত ব্যক্তির জন্য পৌঁছানোর ব্যপারে বুখারী, মুসলিমেও হাদীস রয়েছে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ – رضى الله عنهما – قَالَ جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّى مَاتَتْ وَعَلَيْهَا صَوْمُ نَذْرٍ أَفَأَصُومُ عَنْهَا قَالَ أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ فَقَضَيْتِيهِ أَكَانَ يُؤَدِّى ذَلِكِ عَنْهَا قَالَتْ نَعَمْ. قَالَ فَصُومِى عَنْ أُمِّكِ
অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামের নিকট এক মহিলা এসে বলল ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমার মা মারা গেছেন আর তার জিম্মায় মান্নতের রোযা রয়ে গেছে। আমি কি তার পক্ষ থেকে আদায় করব? তখন তিনি বললেন, আচ্ছা বলত দেখি যদি তমার মায়ের জিম্মায় কোন ঋণ থাকত আর তুমি তা আদায় করতে তবে কি তা তার পক্ষ থেকে আদায় হত? সে বলল হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বললেন তাহলে তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে রোযা রাখ।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৫২।