প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। প্রশ্নঃ-১। আমি ইতিপূর্বে আপনার কাছে প্রশ্ন করেছিলাম আমার ইসলামী ব্যাংকে অনেক আগের ১টি সেভিং একাউন্ট আছে দীর্ঘদিন পর একাউন্ট যাচাই করে দেখলাম তাতে জমানো টাকার সাথে ২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনি বলেছিলেন এই একাউন্ট রাখা জায়েয হবে না। আমি কারেন্ট একাউন্ট করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ইসলামী ব্যাংক ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া করে দিচ্ছেনা। এতে আপনার কাছ থেকে কীভাবে সহায়তা পেতে পারি? আর যে সেভিংস একাউন্টটি আছে তাতে যদি আমি হিসাব করে টাকা রাখি আবার হিসাব করে উঠাই এবং মাঝে মাঝে ব্যালেন্স চেক করে বাড়তি যে টাকা হয়েছে তা উঠানো টাকা থেকে সদকা করে দিই তাহলে হবে কি? হাতের কাজ করে সৎ উপার্জনের মাধ্যমে টাকা আয় করি তার মধ্যে যদি খুতখুতি থাকে তাহলে সেই টাকা দিয়ে কিছু কিনতে মনে চায় না। প্রশ্নঃ-২। আমি যদি আমার স্ত্রীকে বলি তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই। তুমি তোমার মত থাক আমি আমার মত থাকি। তুমি তোমার বাড়িতে চলে যাও তাহলে কি হবে? বিবাহ দোহরানোর নিয়ম কি? বিস্তারিত বললে চির কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর :

তানকীহ (প্রশ্ন স্পষ্টকরণ): আপনি ২ নং প্রশ্নে বর্ণিত কথাগুলো আপনার স্ত্রীকে কি নিয়তে বলেছিলেন? তালাকের নিয়তে? একথা জানার পরেই আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে ইংশাআল্লাহ।
তানকীহের উত্তরঃ আমি আমার স্ত্রীকে উক্ত কথাগুলো কোন বিচ্ছেদের নিয়তে বলিনি শুধুমাত্র ও আমার কথা শোনেনা বিধায় উক্ত কথাগুলো বলেছি।
মূল উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১। আপনি অন্য কোন ব্যাংকে চেষ্টা করুন। হয়ে যাবে ইংশাআল্লাহ।ইসলামী ব্যাংকের বর্তমানে একটু বাধ্যবাধকতা বেশী। বিভিন্ন ফরমালিটিস তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরন করতে হয়। একজন ডুবন্ত মানুষ যেভাবে বাঁচার চেষ্টা করে সেভাবেই বরং তার চেয়ে আরো একটু যত্নবান হয়ে চেষ্টা করুন। কারণ সূদী মুআমালায় সম্পৃক্ত হওয়া আল্লাহ তাআলার সাথে যুদ্ধ করার শামিল।
আর রইল সূদ গ্রহন করে সদকাহ করার প্রসঙ্গ এটা তো পরবর্তীতে তাওবাহ করার নিয়তে গুনাহ করার মত বা একজনের উপর জুলুম করে অন্য কারো উপর এহসান করার মত। অথচ উভয়টি জঘন্যতম গুনাহ। হাদীসে তো যে সূদ খায় তার উপর লানত এসেছে।
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ
অর্থঃ সূদ যে খায় এবং দেয় তাদের উপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত দিয়েছেন।–সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৭৬।
উক্ত হাদীসে এটা বলা হয়নি যে ছদকাহ করলে তা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। চোরও তো চুরি করে বিভিন্ন কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে থাকে। এর দ্বারা কি সে চুরির গোনাহ থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। বিশেষ করে সূদের মত একটি ভয়াবহ গোনাহ যার ভয়াবহতা আল্লাহ্‌ তাআলা এভাবে বর্ণনা করেছেন-
“( সূদের ভয়াবহতা জানার পরেও যদি তোমরা ছেড়ে না দাও , তবে আল্লাহ্ ও তার রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হও)” -সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৭৯
কত বড় মারাত্মক কথা আল্লাহ্‌ তাআলা খালেক হয়ে সামান্য মাখলূকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিচ্ছেন। পুরো কুরআন শরীফে মাত্র এই একটি জায়গায় আল্লাহ্‌ তাআলা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে মূলত যুদ্ধ ঘোষণা উদ্দেশ্য নয় বরং সূদের ভয়াবহতা বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। কাজেই সূদের মত ভয়াবহ গুনাহের ক্ষেত্রে তা গ্রহন করে ছদকাহ করা কখনই সমীচিন হতে পারে না।
হ্যাঁ, ছদকাহ করার হুকুম তাকে দেওয়া হয় যার মালিকানায় কোনভাবে সূদ এসে গেছে। কিন্তু বুঝে শুনে সূদ গ্রহন করে ছদকাহ করা কখনই জায়েয নয়।
২। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত কথাগুলো আপনি তালাকের নিয়তে বলেননি। যদি তা-ই হয় তবে আপনার স্ত্রীর উপর কোন তালাক পতিত হয়নি।– ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩১৪; ফাতাওয়া কাযী খান ১/৪৬৮

Loading