প্রশ্ন : ১। যিনা/ ব্যাভিচার/ সমকামিতার মতো নিকৃষ্ট পাপ যারা করেছেন তারা কি কোন সৎ পবিত্র নারীকে বিবাহ করতে পারবে? ২। দ্বীনের বুঝ না থাকার কারণে উপরে উল্লেখিত পাপ যদি কেউ করে, (আল্লাহপাক সবাইকে এইসব গুনাহ থেকে হেফাজত করুক) এবং সে তওবা না করে কোন সৎ পবিত্র নারীকে বিবাহ করে, তাহলে কি তার বিবাহ বৈধ হবে না বাতিল হয়ে যাবে? আর বিয়ের পর সে যদি তার ভুল বুঝতে পেরে তওবা করে তাহলে কি তওবা কবুল হবে এবং বিয়ে কি বৈধ থাকবে? ৩। সূরা নূর এর ৩ এবং ৪ নং আয়াতের যদি একটু ব্যাখ্যা করতেন?

উত্তর :

১। পারবে।
২। বিবাহে কোন সমস্যা হবে না। আর খালেছভাবে তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা তা কবূল করবেন ইংশাআল্লাহ।
৩। সূরা নূর এর ৩ নং আয়াতের অর্থ এই-
“ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারীকেই বিবাহ করে। আর ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করে কেবল সেই পুরুষ যে নিজে ব্যভিচারকারী বা মুশরিক। মুমিনদের জন্য এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে”।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা হল, যে ব্যক্তি ব্যভিচার করতে অভ্যস্ত এবং এ কারণে সে মোটেই লজ্জিত নয় আর না তাওবা করার কোন গুরুত্ব বোধ করে, তার অভিরুচি হয় কেবল ব্যভিচারিণী নারীতেই। কাজেই প্রথমত সে বিবাহ নয়, বরং ব্যভিচারেরই ধান্ধায় থাকে। অগত্যা যদি বিবাহ করতেই হয়, তবে এমন কোন নারীকে খুঁজে নেয়, যে তার মতই একজন ব্যভিচারিণী, হোক না সে মুশরিক। এমনিভাবে যে নারী ব্যভিচারে অভ্যস্ত, তারও অভিরুচি হয় কেবল ব্যভিচারী পুরুষে। তাই তাকে বিবাহও করে এমন কোন ব্যক্তি যার নিজেরও ব্যভিচারের অভ্যাস আছে। তার স্ত্রী একজন দাসী ব্যভিচারিণী- এ কারণে সে কোন গ্লানি বোধ করে না। সে নারী নিজেও ওই রকম পুরুষই পসন্দ করে, হোক না সে পুরুষটি মুশরিক।
অর্থাৎ, বিবাহের জন্য ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণীকে পসন্দ করা মুমিনদের জন্য হারাম। জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের উচিত চারিত্রিক পবিত্র তাকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখা। এটা ভিন্ন কথা যে, কেউ কোন ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করে ফেললে তার সে বিবাহকে বাতিল করা হবে না এবং বিবাহ জনিত সমস্ত বিধান ও দায়-দায়িত্ব সেক্ষেত্রে কার্যকর হবে। কিন্তু সে কেন ভুল নির্বাচন করল, সেজন্য অবশ্যই গোনাহগার হবে। প্রকাশ থাকে যে, এ বিধান কেবল সেই ব্যভিচারীর জন্য, যে ব্যভিচারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এবং তা থেকে তাওবার গরজ বোধ করে না। কেউ যদি ব্যভিচারের পর আন্তরিকভাবে তাওবা করে ফেলে, তার সঙ্গে বিবাহে কোন দোষ নেই।
আয়াতটির উপরে বর্ণিত ব্যাখ্যা ছাড়া অন্য ব্যাখ্যাও করা হয়েছে, কিন্তু তার চেয়ে এ ব্যাখ্যাই বেশি সহজ ও নিখুঁত। ‘বয়ানুল কুরআন’ গ্রন্থে হযরত হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী (রহ.) ও এ ব্যাখ্যাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।–মুফতী তাকী উসমানী, তাওজীহুল কুরআন ২/৪২০
সারকথা, উক্ত আয়াতে “ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারীকেই বিবাহ করে। আর ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করে কেবল সেই পুরুষ যে নিজে ব্যভিচারকারী বা মুশরিক” বলে ব্যভিচারী এবং ব্যভিচারিণীর অভিরুচির কথা তুলে ধরা হয়েছে। তারা পুতপবিত্র কাউকে বিবাহ করলে বিবাহই হবে না এটা বুঝানো উদ্দেশ্য না। আর এটাও বলা হয়েছে পুতপবিত্র মুমিন এবং মুমিনার জন্য ব্যভিচারী এবং ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করা জায়েয নয়। যদিও বিবাহ করলে বিবাহ হয়ে যাবে।
আর সূরা নূরের ৪ নং আয়াত তো একেবারেই স্পষ্ট।

Loading