যে সকল সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয়

স্বর্ণ,রুপা, টাকা-পয়সা ও ব্যবসার পন্য এই চারটি জিনিষের উপর যাকাত আসে। কিছু জন্তুর উপরেও যাকাত আসে। তবে যেহেতু ঐ সকল জন্তুর উপর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য প্রযোজ্য শর্তাবলী আমাদের দেশে সাধারণত পাওয়া যায় না তাই এখানে তা উল্লেখ করা হল না। এর পরেও ঐ সকল জন্তুর যাকাত প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা পরে করা হবে ইনশাআল্লাহ।

মাসআলাঃসোনা-রূপা যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন তা যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসেবে ধর্তব্য হবে। চাই তা বিস্কুট আকারে থাকুক বা মুদ্রা হিসেবে থাকুক বা অলংকার হিসেবে থাকুক বা পাত্র হিসেবে থাকুক।

মাসআলাঃ সোনা ও রুপা যদি খাঁটি না হয় বরং তাতে অন্য ধাতু মিশ্রিত থাকে তবে বেশি অংশ সোনা বা রুপা হলে তা পুরোটাই সোনা বা রুপা হিসেবে ধর্তব্য হবে। নেসাব পরিমান হলে যাকাত দিতে হবে। আর যদি খাঁদ বা অন্য ধাতু বেশি পরিমান হয় তবে তা ঐ অন্য ধাতু হিসেবে গন্য হবে। ব্যবসা ব্যতীত উক্ত ধাতুতে যাকাত আসবে না।

মাসআলাঃ সোনা-রূপা ব্যাতিত অন্যান্য ধাতুর অলংকার যত মূল্যবানই হোক না কেন ব্যবসার নিয়ত ব্যতীত তা যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসেবে ধর্তব্য হবে না।

মাসআলাঃ ফসলী জমি, বাড়ি নির্মাণের জন্য ক্রয়কৃত জমি এবং এমনিতে ফেলে রাখা জমির উপর যাকাত ফরজ নয়। তবে এগুলো ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করলে যাকাত দিতে হবে যদি নেসাব পরিমান হয়।

মাসআলাঃ কারো একাধিক বাড়ি রয়েছে। তার উদ্দেশ্য হল ভাড়া খাটিয়ে টাকা অর্জন। তবে উক্ত বাড়ীগুলোর মূল্যের উপর যাকাত আসবে না। তবে ভাড়া বাবদ অর্জিত টাকার উপর যাকাত আসবে যদি নেসাব পরিমান হয়। অনুরূপভাবে থাকার জন্য নির্মাণকৃত বাড়ির উপরেও যাকাত আসে না।

মাসআলাঃ মিল, কলকারখানা ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যে সকল আসবাব রাখা রয়েছে সেগুলোর উপর যাকাত ফরজ নয়। কেননা এ সকল জিনিষ বিক্রি করা হয় না। তবে মেশিন থেকে উৎপন্ন পন্যের উপর যাকাত আসবে। অনুরূপভাবে কারখানায় যে সকল কাঁচামাল বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে তার উপরও যাকাত আসবে। যেমন গার্মেন্টস এ জামা-কাপড়, সুতা, বোতাম, চেইন ইত্যাদি। কাজেই এগুলোর উপর যাকাত আসবে।

মাসআলাঃ সোনা-রূপা ব্যতীত অন্য কোন বস্তু হস্তগত হওয়ার সময় ব্যবসা বা বিক্রির নিয়ত ছিল না। পরবর্তীতে সে উক্ত বস্তুতে বিক্রি বা ব্যবসার নিয়ত করল। তবে শুধুমাত্র এই নিয়তের কারনেই উক্ত বস্তু যাকাতযোগ্য সম্পদে রূপান্তরিত হবে না। বরং যখন উক্ত বস্তু বিক্রি করা হবে এবং তার বিনিময় হস্তগত হবে তখন তার উপর যাকাত আসবে যদি সে নেসাবের মালিক হয়।

মাসআলাঃ যে সকল যানবাহন ( রিক্সা, বাস, ট্রাক, লঞ্চ, জাহাজ ইত্যাদি ) ভাড়ায় খাটানো হয় অথবা উপার্জনের উদ্দেশ্যে গ্রহন করা হয় তার মূল্যের উপর যাকাত আসে না। বরং এগুলোর আয়ের উপর যাকাত আসবে। তবে এসব যানবাহন বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয় করে থাকলে এগুলোর মূল্যের উপর যাকাত আসবে। অনুরূপভাবে ব্যবহারের জন্য ক্রয়কৃত যানবাহনের উপর যাকাত আসবে না। চাই তা যত বেশি ও দামীই হোক না কেন।

মাসআলাঃ মোটা-তাজাকরনের পর বিক্রির উদ্দেশ্যে যে জানোয়ার ক্রয় করা হয় তার মূল্যের উপর যাকাত আসবে।

মাসআলাঃ সরকারী বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের জি,পি ও সি,পি ফান্ডের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে যে অংশ কেটে রাখা হয় তা হস্তগত হওয়ার পূর্বে তার উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। হস্তগত হওয়ার পর যদি সে পূর্ব থেকে নেসাবের মালিক না হয় আর উক্ত ফান্ড নেসাব পরিমাণ হয় তবে উক্ত টাকার উপর এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ওয়াজিব হবে। আর যদি পূর্ব থেকে নেসাবের মালিক হয়ে থাকে তবে ঐ টাকার যাকাত দেওয়ার সময় উক্ত ফান্ডেরও যাকাত দিতে হবে। তবে সরকারী বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে যে অংশ ( চাই কিছু অংশ হোক বা পুরো অংশ) ঐচ্ছিকভাবে কর্তন করা হয় তার উপর যাকাত আসবে।

মাসআলাঃ বিভিন্ন পেশাজীবীরা তাদের পেশায় যে সকল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে তার মূল্যের উপর যাকাত আসে না। যেমন- কৃষকের ট্র্যাক্টর,রাজমিস্ত্রির হাতুড়ি,বেলচা ইত্যাদি।

মোট কথা এক্ষেত্রে মূলনীতি হল সোনা-রুপা,নগদ টাকা ও ব্যবসার মাল ব্যতিত যত সম্পদ রয়েছে তা যত বেশি দামী হোক না কেন তার উপর যাকাত আসে না। আর সোনা-রুপা ব্যতীত যে কোন সম্পদ যখন তা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয় যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসেবে ধর্তব্য হবে।

উল্লেখ্য যে, পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে গরু-ছাগল ইত্যাদি ও ফসলের যাকাত সম্পর্কে পরে সংক্ষেপে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

Loading