প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম মহিলাদের কোন কোন নামায পুরুষদের থেকে আলাদা? যেমন মহিলাদের জুমার নামায নেই। যোহর পড়তে হয়। ঈদের নামায পুরুষদের জন্য ওয়াজিব, মহিলাদের কি ঈদের নামায পড়তে হবে? জানাযার নামায কি মহিলারা পড়তে পারে? পারলে কিভাবে? রমযানে তারাবীহ কি মসজিদে পড়তে পারবে যদি ব্যবস্থা থাকে? অথবা নির্দিষ্ট জায়গায় পর্দার সাথে মহিলাদের ওয়াক্তিয়া নামায বা তারাবীহ বা জানাযা বা অন্য যে কোনো নামাযের পৃথক জামাতের ব্যবস্থা করা হয় সেখানে কি মহিলাদের পাঠানো যাবে বা মহিলাদের সেখানে গিয়ে নামায পড়া কি বেশি ফযীলতপূর্ণ হবে? মহিলারা যেতে আগ্রহী হলে কি করনীয়? মহিলাদের ঘরের বাইরে গিয়ে যেকোনো নামায পড়তে যাওয়াটা সহীহ কিনা। যদি ব্যাপারটা ওয়াজ-মাহফিলের ক্ষেত্রে হয় তাহলে কি হুকুম? আর মহিলাদের মহিলা মাদ্রাসায় অনাবাসিক/ আবাসিকভাবে পড়ানো/ভর্তি করাটা ঠিক হবে কিনা?

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
মহিলাদের নামায যতটা অন্দরমহলে এবং গোপনীয়তার সাথে হবে ছাওয়াব তত বেশী হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

“মহিলাদের জন্য ঘরে নামায পড়া বারান্দায় নামায পড়ার ছেয়ে উত্তম। আর ঘরের ভিতর ছোট হুজরার মধ্যে নামায পড়া ঘরের সাধারান অংশে নামায পড়ার তুলনায় অধিক পছন্দনীয়”।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৫৭০

অন্য এক হাদীসে রয়েছে মেয়েদের জন্য জামাআতে নামায পড়ার ছেয়ে একা নামায পড়ায় পঁচিশ গুন বেশী সাওয়াব রয়েছে।–কানজুল উম্মাল, হাদীস নং ৪৫১৮৭

নিজের ঘরে সাওয়াব বেশী হওয়ার পরেও মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়ায় সৌন্দর্যের প্রদর্শনী ছাড়া আর কি প্রয়োজন থাকতে পারে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে যদিও মেয়েদের দ্বীনের নিত্য নতুন হুকুম-আহকাম শিক্ষা করার জন্য কঠোর শর্তাবলীর সাথে মসজিদে হাযির হয়ে জামাআতের সাথে নামায পড়ার অনুমতি ছিল কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পরে ধীরে ধীরে যখন ফেতনা ফাসাদ বৃদ্ধি পেতে লাগলো তখন হযরত উমর (রাঃ) মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করে দিলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নিকত এই অভিযোগ করা হলে তিনি বললেন হযরত উমর (রাঃ) যে অবস্থার প্রেক্ষিতে মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নিষেধ করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি এই অবস্থা দেখতেন তাহলে তিনিও মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন।(সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৫৬৯)

এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ফুকাহায়ে কিরামের অভিমত হল সকল শ্রেণীর মহিলাদের জন্য মসজিদে বা অন্য কোথাও নামায পড়তে যাওয়া মাকরূহে তাহরীমী। চাই তা ফরজ নামাযের জন্য হোক বা জুমুআর জন্য বা ঈদের জন্য হোক বা তারাবীহের জন্য অথবা জানাজার জন্য। আর পৃথকভাবে শুধু মহিলাদের জন্য কোথাও জামাআতের ব্যবস্থা করা মাকরূহে তাহরীমী।

তাই মহিলাদের জন্য একাকী ভাবে ঘরেই নামায পড়া উত্তম। মসজিদে যাওয়ার অনুমতি নেই। যদি তাদের সাওয়াবই উদ্দেশ্য হয় তবে মসজিদের তুলনায় ঘরের অন্দর মহলে নামায আদায় করা তাদের জন্য অধিক উপযুক্ত।–তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৪৮,৩৪৯; আল বাহরুর রায়েক ১/৬২৭,৬২৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৬৩; মাজমাউল আনহুর ১/১০৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৬৫; ফাতহুল কদীর ১/৩৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৮; মারাকীল ফালাহ, পৃষ্ঠা ৩০৪; হিদায়া ১/১২৩; কিফায়াতুল মুফতী ৩/১৪৩; আযীযুল ফাতাওয়া ৩/৩০১; ইমদাদুল আহকাম ১/৫১৬-৫১৮; আহসানুল ফাতাওয়া ৩/৩১৩;

রইল ওয়াজ মাহফিলে যাওয়া প্রসঙ্গ তো মেয়েদের দ্বীনী তালীম গ্রহনের সঠিক পদ্ধতি হল তারা ঘরোয়াভাবে তাদের বাবা-মা, ভাই,স্বামী,দাদা এধরনের মাহরামদের নিকট থেকে দ্বীনী ইলম শিক্ষা করবে। এভাবে যদি প্রয়োজন পূরা হয়ে যায় তবে তো আর কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্যথায় প্রয়োজনে তার কোন মাহরামের সাথে পর্দার সঙ্গে কোন মাহফিলে যেতে পারে যদি সেখানে পর্দার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকে এবং কোন ফেতনার আশংকা না থাকে।

আর মেয়েদের জন্য আবাসিকভাবে মহিলা মাদারাসায় লেখাপড়া করায় খুব একটা কল্যাণ নেই। অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতা সাক্ষী যে, এক্ষেত্রে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণের পরিমানই বেশী। হ্যাঁ, কিছু মাদ্রাসা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তার সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। তাই কোথাও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকলে (যেমন সেখানে মেয়েরা অভিভাবক ছাড়া বাইরে যেতে পারে না, অন্য পরপুরুষও ভিতরে ঢুকতে পারে না, এরপরেও ভিতরে তাদের কন্ট্রোলের জন্য আলেমদের তত্ত্বাবধায়নে একাধিক আলেমা থাকেন ইত্যাদি) তারা আবাসিকভাবে সেখানে থেকে পড়ালেখা করতে পারে। অন্যথায় কোন মাহরামের সাথে আসা যাওয়া করে পড়ালেখা করবে। আর এতেই অধিক কল্যাণ।

Loading