প্রশ্ন : এখন অনেক যুবকেরা ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে টাকা আয় করছে। ইউটিউবের সিস্টেম হলো- ১। প্রথমে চ্যানেল খোলা ২। চ্যানেলে ১০০০ (এক হাজার) সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা হলে Google তা মনিটাইজেশন করে। ৩। তারপর ভিডিও এর নিচে বিভিন্ন অ্যাড দেয়া হয়। হতে পারে অ্যাডগুলো খারাপ কিংবা ভালো। এটা আমার নিজের দ্বারাই হয়তোবা নির্ধারিত করা যায় যে, আমি কোন অ্যাডটা মানুষকে দেখাতে চাই। ৪। যদি ওই অ্যাড এ কেউ ক্লিক করে এতে গুগল আমাকে টাকা দেয়। মুলত অ্যাড দেখানোর মাধ্যমেই টাকাটা তারা দেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্রেডিট কার্ড এর মত একটি কার্ড রেজিস্ট্রেশন করতে হয় যার দ্বারা এই টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে হয়। ভিডিও তৈরী করতে অনেকে অনেক মেহনত করছে কেউ দ্বিনী কাজে, কেউ মানুষের বিভিন্ন উপকারে আবার কেউ বা খারাপ ভিডিও বানাচ্ছে। যে যেই ভিডিওই বানাক না কেন সবই অনেক কষ্টের ফলে বানানো। ইউটিউবে ৯৫% মানুষ তাদের নিজের চেহারা দেখিয়ে ভিডিও বানায় কেউ ভাল ভিডিও বানায় আবার কেউ খারাপ ভিডিও বানায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো হলো ওয়াজ, সুরা কিরাআত, এমনকি বড় বড় আলেম ওলামাও ভিডিও বানায়। তারাও দেওবন্দ থেকে পড়েছে, অনেকে আবার বিভিন্ন যন্ত্রের আনবক্সিং করে, টিউটোরিয়াল এর ভিডিও বানায়। এখান থেকে জানলাম ভিডিও করাই হারাম। প্রশ্নঃ ১। এরুপ ভাবে টাকা আয় কি হালাল হবে? ২। যদি চেহারা না দেখানো হয় শুধু কন্ঠ দিয়ে বিভিন্ন স্ক্রিন এর মাধ্যমে ভিডিও বানানো হয় তাহলে কি তা জায়েয? ৩। ইসলামের দাওয়াত দিয়েও তো অনেকে টাকা আয় করতেছে এটা কি হালাল হবে যদি মুল উদ্দেশ্য দাওয়াত হয়? ৪। নাকি এরুপ কষ্ট পুরোটাই বৃথা?

উত্তর :

১+২+৩+৪। আমরা বিষয়টি নিয়ে অনেক যাচাই বাছাই করেছি। যতদূর জানতে পেরেছি, নির্ধারিত কিছু ধাপ ও শর্ত পূরণ করার পরে গুগল চ্যানেলে অ্যাড শো করার অফার দেয়। এক্ষেত্রে চ্যানেল হোল্ডারের অ্যাডের প্রকৃতি ও ধরণ নির্বাচনের এখতিয়ার থাকে। বাস্তবেই যদি বিষয়টি এমন হয় তবে এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। এক. যে ভিডিও এর উপর অ্যাড শো করানো হবে তার প্রকৃতি ও ধরণ। দুই. যে অ্যাড শো হবে তার প্রকৃতি ও ধরণ। উভয়টিতে যদি শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কোন আপত্তি না থেকে থাকে তবে উল্লেখিত পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জন বৈধ হবে।

অর্থাৎ প্রথমত, চ্যানেলে আপলোডকৃত ভিডিওটি (যে ভিডিওতে অ্যাড শো করা হবে) বৈধ হতে হবে। উপমহাদেশের অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে এখনো ডিজিটাল ফটোগ্রাফি ও ভিডিও হারাম। আর এর মধ্যেই যে সতর্কতা নিহিত এতে কোন সন্দেহ নেই। সেমতে আপলোডকৃত ভিডিওটিতে কোন প্রাণীর ছবি না থাকতে হবে। কোন অশ্লীলতা বা মহিলার ছবি তো অনেক দুরের বিষয়। তবে হাত ইত্যাদি প্রদর্শন করে কোন টিউটেরিয়াল তৈরি করতে অসুবিধা নেই। অনেকে ভিজিটর বাড়ানোর জন্য এবং ভিডিওকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য মহিলাদের আবেদনময়ী স্বর ব্যবহার করে থাকে। অথচ নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী মহিলাদের গলার স্বরও সতর। এজন্যই মহিলাদের জন্য নামাযে উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করে নিষেধ। আবার আল্লাহ তাআলাও পবিত্র কুরআনে নবী পত্নীদেরকে পর পুরুষের সঙ্গে কোমল স্বরে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তাই ভিডিওতে মহিলাদের স্বর ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অনুরূপভাবে ভিডিওটির বিষয়বস্তুও বৈধ হতে হবে। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে আপত্তিকর কিছু থাকলে বৈধ হবে না। যেমন ভিডিওতে মদ খেতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বা ইসলাম বিরোধী কোন কিছু প্রচার করা হচ্ছে ইত্যাদি। অনুরূপভাবে ভিডিওতে কোন গান-বাদ্যও না থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত, প্রদর্শনকৃত অ্যাডটিও অনুরূপ হবে। অর্থাৎ তাতে কোন প্রাণীর ছবি থাকবে না। এবং তার বিষয়বস্তুও বৈধ হবে। যেমন প্রাণীর ছবিবিহীন সাবান বা অন্য কোন হালাল বস্তুর অ্যাড। কাজেই সিনেমা, মদ বা হারাম কোন বস্তুর প্রচারণা সম্বলিত অ্যাডের বিনিময়ে অর্জিত টাকা হালাল হবে না। অনুরূপভাবে উক্ত অ্যাডেও কোন গান-বাদ্যও না থাকতে হবে।

সারকথা, ভিডিও ও অ্যাড কোনটিতেই শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে আপত্তিকর কোন কিছু না থাকতে হবে।

আর যদি চ্যানেল হোল্ডারের অ্যাডের ধরণ বাছাই করা এখতিয়ার না থাকে, তখন তো বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা সেক্ষেত্রে গুগল কি ধরণের অ্যাড দিবে তা একেবারেই অজানা। তাছাড়া যদ্দুর দেখেছি গুগলের প্রায় সকল অ্যাডেই শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কোন না কোন আপত্তিকর বিষয় থেকেই থাকে। দুই একটি ভিন্ন হতে পারে। তাই এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়কে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা কোন মুমিনের জন্য উচিত নয়। তবে কেউ করলে সেক্ষেত্রে ভিডিও ও অ্যাড উভয়টি সম্পূর্ণ বৈধ হলে উপার্জন হালাল হবে। আর ইউটিউবে অডিও ওয়াজ নসীহত আপলোড করে উল্লেখিত পদ্ধতিতে উপার্জন করা বৈধ।

Loading